• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ১৮)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ১৮

গুহ দাকে মনে আছে তো? সেই যে গুহ দা যিনি বেহালায় থাকতেন। হনিমুনে এসেছিলেন শ্যামবাজার। জীবনে কোথাও বেড়াতে যান নি। কাজ আর বাড়ি,চাকরি জীবনের দিনগুলি কেটে গিয়েছিলো এমনি করেই। অনেকটা পথ ট্রেনে চড়া মানে চক্ররেলে মাঝেরহাট থেকে দমদম। এহেন গুহ দা সস্ত্রীক বল্টুদার সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন পুরী। গুহদা অমায়িক মানুষ। প্রথমবার সমুদ্র দেখে আনন্দে আর উচ্ছ্বাসে প্রায় কেঁদে দিয়েছিলেন।
চৌধুরী নিবাস খুব সুন্দর একটা হোটেল। ছিমছাম। সমুদ্র দেখা যায় না বটে কিন্তু হেঁটে মিনিট পাঁচ সমুদ্র। সামনে ছোট্ট একটা বাগান। খুব সাজানো। ছোটো মাঠে কচি ঘাস। কোরিয়ান ঘাস। জ্বলজ্বল করছে সবুজ,কেনা কার্পেটের মত পাক্কা রং। সেই ছোট্ট মাঠে ইজিচেয়ার নিয়ে বসবার ব্যবস্থা। পাশাপাশি অনেকগুলো চেয়ার। একদিকে রান্না হচ্ছে শেডের তলায়। মাঝখানে সবুজ মাঠ বা লন,অপর প্রান্তে হোটেল। রুম গুলো বেশ বড়। একেবারে দামী হোটেলের মত নয়,আবার কম কিছুও নয়। মোটকথা বেশ আরামদায়ক ঘরগুলি। তারই এক ঘরে বল্টুদার বৌ ঘুমোচ্ছেন নিশ্চিন্তে।
আজ সকালে বল্টুদা বাজার থেকে ফিরে বৌদির ঘুম ভাঙালেন। তারপর নীচে নেমে রান্নার জায়গার কাছে সেই মাঠটাতে গিয়ে বসলেন। দলের অনেকেই সমুদ্রের দিকে গিয়েছিলো। তারা ফিরে এসে সকালের খাবার খেলেন। গুহ দা আর গুহ দার স্ত্রী সমুদ্রের দিক থেকে হেঁটে এসে মাঠে চেয়ারে বসে গল্প জুড়ে দিলেন বল্টুদার সঙ্গে। আড্ডায় আরো একজন ছিলো, সে হলো কানাই। বাস ড্রাইভার। বাসটাকে গ্যারেজে রেখে কানাই এই হোটেলে এসেই উঠেছে। গতকাল হোটেলে এসে উঠেছে সবাই। আজও সমুদ্রের কাছেই থাকা। আগামী দুদিন কানাইয়ের আবার কাজ,সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বেরনো বাসে চাপিয়ে। বাকী সময়টা বাসের ড্রাইভার কানাই,হেল্পার তাদের কোনো কাজ নেই সেরকম। তাই বল্টুদার রান্নার লোকের হাতে হাতে তারাও কিছু কাজ এগিয়ে দেয়। এই যেমন রান্নার ঠাকুরের যোগালদারের সঙ্গে কিছু কাজ করে দেওয়া,খাবার পরিবেশন এসব আর কি।
বল্টুদা,গুহ দা, কানাই আরো কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছেন। সমুদ্রের পাড় থেকে সবাই হোটেলে ফিরে এসেছেন। সকালের খাবার খেয়ে কিচ্ছুক্ষন আড্ডা বা বিশ্রাম।তারপর আবার দুপুরের স্নানে সমুদ্রপাড়। আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। হঠাৎ কানাই বল্টুদাকে বলে উঠলো…”দাদা,আর বলবেন না,কাল রাতে বাসে শুয়ে আছি। দরজাটা বন্ধই থাকে বাসের,সমস্ত কাঁচ ওঠানো। ভোর বেলার দিকে একটু দরকারে যেতে হয়েছিলো বাইরে। ফিরে এসে আবার একটা ঘুম। ঘুম থেকে উঠে আমি তো অবাক,পায়ে পরার জুত হাওয়া। তন্নতন্ন করে চারিদিকে খুঁজলাম। কোত্থাও নেই। বাইরে বেরিয়ে অনেকক্ষন ধরে খুঁজলাম,কোথাও নেই। ভোরবেলা পর্যন্ত জুত সঙ্গে ছিলো একথা হলফ করে বলতে পারি। কিন্তু তারপর থেকে নেই।”
বল্টুদা তো সাংঘাতিক অবাক। হচ্ছে টা কি। কানাই কে বললেন “বাসের দরজা ঠিক মত দেওয়া ছিলো তো?”
কানাই বললো,”মুশকিলটা সেটাই দাদা, ভোর পর্যন্ত দেওয়া তো ছিলোই,কিন্তু ভোর বেলা বাসে ফেরার পর বাসের দরজা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। বাইরে যথেষ্ট আলো। একবারও বুঝতে পারিনি এই আলোর মধ্যে কিছু হতে পারে।”
বল্টুদা যে সত্যিকারের আশ্চর্য হবেন সেকথা আলাদা করে বলবার নয়। কিন্তু আশ্চর্য হবার বোধহয় আরো বাকী ছিলো। গুহদা বসে শুনছেন একথা গুলো। কিছুক্ষন আগে বৌদির সঙ্গে সমুদ্রের পাড় থেকে ফিরেছেন হোটেলে।…..

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।