সাপ্তাহিক শিল্পকলায় “প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যৌনতাই সংস্কৃতিঃ তথ্য বা খুশী বিক্রী”- লিখেছেন আলবার্ট অশোক (পর্ব – ৯)

হঠাৎ এমন একটা শিরোনাম দেখলে, রক্ষণশীল এবং পুরাণো মূল্যবোধের মানুষজন সত্যিই চমকে উঠবেন।না, ভয় পাবার কিছুই নেই। চিরকাল এটাই চলে এসেছে। সেই পুরাকাল থেকে, সভ্যতার উদয়ের সাথে সাথেই। নতুন কিছুই নয়। আমি শুধু আপনাদের আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছি। যা এতদিন আপনারা দেখতে চাননি।
ধরুন কাপড়ের তলে আমরা সবাই ন্যাংটো। সারা বিশ্ব জানে। কিন্তু কেউ যদি আপনাকে বস্ত্র সরিয়ে শুধু আপনার উলংগ শরীরটা দেখে, বা দেখায়, তবে অনেকেই চমকে উঠবেন। প্রশ্ন হল আপনি এটা কেন ঢেকে রেখেছেন, এটা আপনার অস্তিত্বের প্রধান অংগ।এর জন্য বিশ্বযুদ্ধ বেধে যায়। যৌনাঙ্গ এমনই একটি জিনিস। অসুখ করলে ডাক্তার দেখবে। বৈধ বা অবৈধ বিয়ে করলে আপনার বিপরীত লিংগের লোকটা দেখবে। এছাড়া ছোটবেলায় চোদ্দগোষ্ঠি সহ পাড়া পড়শী দেখবে। সবাই জানে কাপড়ের তলায় কি আছে, তবু লোকে এটা নিয়ে আচ্ছন্ন থাকে। কেন? ভেবেছেন?
ভৌগোলিক পৃথক অঞ্চলে, পৃথক পৃথক সংস্কার/ সংস্কৃতি। আপনি কখনো সংস্কার বা সংস্কৃতির সংজ্ঞা কি জানতে চেয়েছেন?
মরুভূমির জীবন যাপন তো বছর বন্যার বাংলাদেশের লোকের সাথে মেলাতে পারবেননা। বা দু ইঞ্চি ফিতে দিয়ে যে মহিলা ইউরোপ আমেরিকায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে স্বাধীনতার তার সাথে কোন কট্টর বোরখা পরা মহিলার উচ্ছ্বাস মূল্য মেলাতে পারবেননা। যারা শিক্ষিত তারা একবার দুই ইঞ্চি ফিতে দিয়ে যোনি ঢাকে আবার বোরখা পরে শরীর ঢেকে মূল্যবোধ কি, স্বাধীনতা কি, এসব বিশ্লেষণ করে। এই যে জীবন যাপন, এর নাম সংস্কার এর নাম সংস্কৃতি। ম্যানগ্রোভ আপনি পাহাড়ে ফলাতে পারবেননা যেমন সত্য, তেমন অসত্য নয় যদি কোন মালভূমির উপর জলা জায়গায় কেউ চাষ করে। খেজুর গাছ মরুতেও হয় আবার বাংলাদেশেও হয়। সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাজ হল ভাল মন্দ ঘাঁটা। সমাজকে অধিক আনন্দ বা স্বাধীনতা কিসে এনেদেয় তা দেখা। এর জন্য প্রতি পলে শিল্পী সাহিত্যিকরা জীবনকে ঘাঁটছেন।সমাজ তো একটা আবদ্ধ ডোবা। তাতে কেউ পানা পরিস্কার না করলে, জল না পাল্টালে সব নষ্ট হয়ে যাবে বা আগাছায় ভরে যাবে। কাউকে বাইরের সাথে সম্পর্ক রেখে তথ্য আদান প্রদান করতে হবেই।
সুতরাং কাপড়ের তলায় যৌনাঙ্গ আছে জেনেও এই যৌনাঙ্গকে আরো উচ্চশীল রুচীতে বাঁধার জন্য সাংস্কৃতিক মানুষেরা, সমাজের গালি খেয়েও সমাজের আইন ভাঙ্গে। আপনি বলতেই পারেন অ্যান্টি সোস্যাল/ অসামাজিক। না আপনার কাছে বন্দুক বা ম্যাচেট নিয়ে এসে দস্যুপনামি করতে আসছেননা। আপনাকে তিনি ডাকছেনননা।শিল্পী গ্যালারীতে করছেন। আপনি পছন্দ না হলে দেখবেননা।
এসব ভূমিকাতে না বললে আপনি আন্দ্রিয়া ফ্রেজার কে বুঝতে পারবেননা। আপনাকে বুঝতে হবে শিল্প কি? প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যৌনতাই সংস্কৃতি, তথ্য বা খুশী বিক্রী। আপনি মেলা থেকে একটা পুতুল কিনুন, বা ফুটপাথ থেকে একটা ছবি কিনুন, বা কোটি টাকা দিয়ে গ্যালারী থেকে একটা ছবি কিনুন। আপনার মনে খুশী জাগবেই। এইখুশীর নির্বাণ হল দিনের শেষে যৌনাঙ্গে ফিরে যাওয়া। পতিতারা কি করে? তারা খদ্দেরের সাথে প্রথমে টাকা নিয়ে বোঝাপড়া করে। একবার টাকার চুক্তি দুপক্ষ মেনে নিল, তো দুজনেই যৌনসাথী হয়ে পরস্পরের দাবী মিটিয়ে নিল। এই ঘটনা কাউকে স্পর্শ করেনা। এই ঘটনা কেউ জানলেও কারুর ক্ষতি নেই। এই ঘটনা দুজনের চুক্তিতে সীমাবদ্ধ। এই রকম চুক্তির ভিত্তিতে পৃথিবীর সকল বিবাহিত ও অবিবাহিত যৌনজীবন ও বংশপরাম্পরা গতি চলে। তবু যৌনতা কে সমাজ এক ধাঁধা বানিয়ে রেখেছে। ফলে, অনেক ক্ষতি হয়। ধরুন, মেয়েটি দশ বছর পর বললে আদালতে লোকটি আমাকে ধর্ষণ করেছে। আর অমনি লোকটিকে ধরে সমাজ জেলে পুরে দিল। ২০১৭ থেকে সারা পৃথিবী দেখল একটা মঞ্চস্থ নাটক মি টু আন্দোলন(The Me Too (or #MeToo) movement) পুরুষ নির্দোষ হলেও সে দানব, আর মহিলা দোষী হলেও সে দেবী! হলিউডের নায়িকারা কেউ দেবী নয় বরং দানবী। কান্না প্রচার দুনিয়াকে নাড়িয়ে দেয়। তা সে কালো নিগ্রোদের জীবন হোক বা ভারতের মুসলিমদের মাইনরিটি হোক বা সে মহিলাদের পুরুষের সমান রাজনীতি হোক। প্রত্যেকটা জায়গায়, প্রথমে কান্নাকে প্রচার করেছে অর্ধ দশক ধরে তারপর সময় বুঝে মাঠে রাজনীতির শরিক হয়ে জনসমক্ষে এসেছে। এরই একটা সংস্করণ হিসাবে আমরা আন্দ্রিয়া ফ্রেজারের কাজ দেখব।

Andrea Fraser আন্দ্রিয়া ফ্রেজার ( জন্মঃ ১৯৬৫), একজন পারফর্মেন্স আর্টিষ্ট, মূলতঃ তিনি ‘ইন্সটিটিউশনাল ক্রিটিক’ ( institutional critique).এরকম একটি বিষয়ের জায়গাতে তিনি কাজ করে বিখ্যাত। তিনি নিউ ইয়র্ক ও লসএঞ্জেলস এ কাজ করেন বর্তমানে লসএঞ্জেলসের ক্যালিফোর্ণিয়া ইউনিভারসিটি আর্ট ডিপার্টমেন্টের নতুন আঙ্গিকের একজন অধ্যাপক।
তার পারফর্মেন্স আর্ট নিয়ে কাজ করতে আসার আগে তিনি শিল্প সমালোচনার কাজ করতেন, যেগুলি পরবর্তী সময়ে তার কাজে লেগেছিল।
ফ্রেজারের কাজ আমেরিকার রাজনীতি, সামাজিক ব্যঙ্গ ইত্যাদি মিশেল ছিল। ফলে আমেরিকার রাজনীতিবিদ্ দের চোখে চোখ রেখে তার টক শো করতে হত। আমেরিকাতেও ভারতের মতো অনেক মানুষ মধ্যযুগীয়। তারা যৌনতাকে ট্যাবু বা সংস্কারের অধীনে রেখেছে। সেখানে খোলামেলা যৌনতা নেই। ঘর বা ঘেরা এলাকায় আগলবদ্ধ করে নিলে কারুর কিছু বলার থাকেনা। অনেক রাজনৈতিক নেতা ফ্রেজার কে পছন্দ করতনা, তাকে নিষিদ্ধ করে দিতে চাইত, যাতে ফ্রেজার কোন ‘শো’ না করতে পারে। (who will say Fraser is filthy and disgusting and should be banned.) তাদের ধারণা অ্যান্দ্রিয়া ফ্রেজার অশালীন, নৈতিকতাহীন। তাকে নিয়ে টিভিতে Scarborough Country তে, স্কারবরো কাউন্ট্রি হল একটি টিভি চ্যানেল সংরক্ষনশীলদের বিতর্ক বা মানুষের মতামত নিয়ে যে কোন বিষয়- রাজনীতি থেকে আর্ট ইত্যাদির উপর টক শো করে, ২০০৩ সালে জর্জ বুশের সময় থেকে এর শুরু। এই স্কারবরোতে অ্যান্ড্রিয়া ফ্রেজার শো করার আগে, ফ্রেজার নানা জায়গায় তার শরীর মঞ্চে প্রদর্শন করেছে। তার নগ্ন পাছা দেখিয়েছেন দর্শককে। স্বাভাবিক কারণেই রক্ষনশীলরা তাকে নিয়ে কুপিত।

নিউ ইয়র্কের Friedrich Petzel Gallery তে ‘আনটাইটলড্’ নামে একটি ভিডিও শো, কোন এডিট না করে দেখিয়েছিলেন। ( Andrea Fraser, June 10-July 9, 2004, at Friedrich Petzel Gallery, 535 West 22nd Street, and June 10-July 10, 2004, at American Fine Arts, 530 West 22nd Street, New York, N.Y. 10011 ) গ্যালারীতে লোকজন ছিল দু একজন। কোমর উচ্চতায় একটি সাদা প্যাডেস্টেলের উপর সাধারন মানের টিভিতে ভিডিওটা দেখানো হচ্ছিল। আন্ড্রিয়া ফ্রেজারের পারফর্মেন্স আর্ট, ‘আনটাইটলড্’। সেটা স্কারবরো টিভিতে ব্রডকাস্ট করেছিল। ভিডিওটা প্রায় একঘন্টার। তাতে একঘন্টা ধরে ফ্রেজার একজন শিল্প সংগ্রাহকের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত। যিনি তাকে ২০, ০০০ ডলার দিয়েছেন। এবং তিনি নিয়মিত সেই শিল্প সংগ্রাহকের সাথে যৌনকর্ম বা সঙ্গম করছেন।
ভিডিওতে খুব ভাল কিছু ছিলনা। খারাপও ছিলনা। সাধারণ , স্ক্রিপ্ট করা, বিচ্ছিন্ন ও কষ্টকল্পিত। ভিডিও পারফর্ম্যান্সটি্র শিরোনাম হল, ‘আনটাইটল্ড্‌’। মানে শিরোনামহীন। একটা আন্দ্রিয়া ফ্রেজার একটা স্টাইলিশ হোটেলে ঢুকছেন, একহাতে একটি কক্টেল (cocktail) গ্লাশ আর হাতে একটি মদের গ্লাশ। তার ছবির (শিল্পের) সংগ্রাহক আন্দ্রিয়ার পিছন পিছন ঢকছেন। ক্যামেরা উঁচু একটা জায়গায় স্থির ভাবে লাগান আছে। কোন পর্ণগ্রাফির কিছুই নেই। পর্ণোগ্রাফি সাধারনটঃ আমাদের যৌনউদ্দীপনা বাড়াবার জন্য ক্লোজআপ, ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ, বা টাকার বান্ডিলের লেনাদেনা ইত্যাদি দেখায়। না এখানে তেমন কিছুই নেই। মনে হচ্ছিল, ফ্রেজার মনযোগ দিয়ে পুরুষটিকে যৌন খুশী দিচ্ছিল। শিল্পীর বয়স ৪০, পুরুষটির মনে হচ্ছিল কিছু অল্পবয়েস। যাইহোক ও কোন ব্যাপার নয়, সহ শিল্পীর বয়স কম দেখতে হলেও বেশ তাগরাই, শক্ত ও মজবুত, রোমশ সারা শরীর। তারা বিছানার উপর এসে বসল। বিছানাট মনে হল কোন তারকা হোটেলের মত। তারা দুজনে অনেক গল্প করল। একসময় পুরুষটি, জন তার নাম। ফ্রেজারের উরুতে হাত রাখল। ফ্রেজার তাকে চুমো দিল। তারপর জনের ট্রাউজার খুলে দিল ফ্রেজার ও নিজের পোশাক খুলল। জনকে খুশী দিতে লাগল, জন ফ্রেজারকে খুশী দেওয়া শুরু করল। মানে যেভাবে নারী পুরুষ যৌনকর্ম করে। তারপর নানা পজিশনে ভঙ্গিমায়, তারা যৌনকর্ম করা শুরু করল। কেউ কোন টাকা দিচ্ছে তা দেখা গেলনা। তারপর তারা বিছানায় কথার ফুলঝুরি শুরু করল। ক্যামেরা একজায়গাতেই। তারপর তারা গল্প ও আদর করতে শুরু করল আবার। (টাকার চুক্তি রফা হল, দুজন দুজনের অন্তরঙ্গ হলেন। নিজেদের বিবস্ত্র করলেন।প্রথমে মৌখিক চুম্বনাদি সারলেন, তারপর যৌনকর্ম- সংগম সারলেন। এসব ৪৫ মিনিট ধরে করলেন। তারপর দুজন সটান হয়ে রিল্যাক্স করলেন। যৌনসুখ অনুভূতি প্রকাশ করলেন শুয়ে শুয়ে হাসা হাসি কথা বলে বা আদর করে।একঘন্টার মাথায় দুজন দুজনের সাথে বিবস্ত্র থাকা কালীন খুনসুটি করছেন।) যারা পর্ণো দেখতে ভালবাসেন তাদের খারাপ লাগবেনা, কিন্তু যারা পর্ণো ভাল বাসেননা তাদের খারাপ লাগতে পারে। এমনটি ছিল ভিডিওতে।

ফ্রেজার কে যখন জিজ্ঞেস করা হল। যৌনকর্মের জন্য আপনাকে টাকা দেওয়া হল? শিল্পী ফ্রেজার উত্তর দিলেন, ‘ না, আমার শিল্পকর্মের জন্য, সৃষ্টির জন্য টাকা দিলেন। শিল্প কর্মটি বানাবার জন্য টাকা দিলেন।‘ Frasers unedited one-hour videotape, called Untitled, of her having what she calls just regular sex with an art collector who paid $20,000, not for sex, according to the artist, but to make an artwork।
এবার এই পারফর্ম্যান্স শিল্পী কেন করলেন? উত্তর এর মাধ্যমে তিনি দেখালেন, যৌনকর্মকে পণ্যে রূপান্তর করা যায়। এবং তা পাবলিকের মাঝেই।
ধরে নিতে হবে, শিল্পীর কথা। অনেক কথা বা বিতর্ক উঠতে পারে। যারা শিল্প বুঝেননা, তাদের মাথায় ঢুকবেইনা শিল্প কি জিনিস সুতরাং তারা কেটে পড়ুন। ফাইন আর্ট, সুক্ষ্ম চারুকলা বা চিকন শিল্প নদীর প্রবাহের মত। দাঁড়িয়ে থাকেনা। সময়ের মতো, দাঁড়িয়ে থাকেনা। স্থান কাল পরিবেশ পাত্রপাত্রী নিয়ে প্লাবন বা পলি আনতে পারে। মহামাড়ি বা খুশীর জোয়ার আনতে পারে। কি আনবে তার একাংশের দায় আপনার উপর। বৈদ্যুতিন মাধ্যম- যেমন কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে আপনি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কম্পিউটার, ইন্টারনেট এর ভাষা আপনাকে জানতে হয়, তারপর আপনি তাকে আদেশ দিচ্ছেন। শিল্পের ভাষা না জেনে আপনি তাকে আদেশ দিলে আপনার কথা কে শুনবে? নদীর প্রবাহকে আর সময়কে আপনি থামাতে পারেননা। থামাতে যাওয়া মানে আপনি একটি বোকা। এই ভাবনাগুলি বড় কঠিন তবু মানতে হয়।
স্কারবরো এন্ড কোম্পানী, এই ভিডিও ও শিল্প সংগ্রাহকের কাছ থেকে তেমন কিছু পেয়েছিল যার জন্য ব্যাপারটা ক্লিক করে গেছে।প্রচুর ব্যবসা হয়েছে। এবং ব্রডকাস্ট হয়েছে। লাখো দর্শক দেখেছে। এটার ৫টি এডিশন হয়েছিল। একসমালোচক বলেছেন তারও বেশী নাকি সংস্করণ হয়েছিল। ফ্রেজার বলেছে ভিডিওটার দাম নাকি আরো চড়া হয়ে উঠেছিল। মানে ধরে নিন, কোটি কোটি টাকা অ্যান্ড্রিয়া ফ্রেজার, তার শিল্প সংগ্রাহক, ও টিভিওয়ালা কামিয়েছে। এরপরেও অনেক টাকা লেনদেন হবে।
আপনি এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে কুকড়ে গিয়ে, হতাশ হয়ে, বা আঙ্গুল কামড়ে মূলতঃ দুইটি ভাবনায় কথা বলবেন।
১। ও আমি কখনো করবোনা, শরীর দেখিয়ে , অশালীন- যৌনতা করে কোটি টাকা দিলেও করবনা। বা বলবেন শিল্পের নামে এসব যারা করে তাদের মেরে পুঁতে দিন, সমাজের অনাচার আনছে এরাই। এসব শিল্প নয়!
উত্তরটা আরেকজন এভাবে দেবেঃ আপনি কে হে? আপনার ভাল নাই লাগতে পারে, আপনি চোখ বুঝে থাকুন। সমাজকে আপনি খাওয়ান? না, প্রতিপালন করেন? আপনার যেমন খারাপ লাগতে পারে, আমার তেমন ভাল লাগতে পারে। আপনার মতো আমিও এই সমাজের সদস্য, একজন নাগরিক। আপনার না ভালো লাগাটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেবেননা। সভ্য জগতে গায়ের জোর ফলানো যায়না। গায়ের জোর সবারই আছে। গণতান্ত্রিক অধিকার সবার আছে। কোনটা শিল্প কোনটা শিল্প নয় পাবলিক ঠিক করবে। খারাপ কিছু হলে পাবলিক দেখবেনা।
২।এই পৃথিবীতে, জীবনটাকে নিরাপত্তা দিয়ে মৃত্যু অবধি নিয়ে যাওয়াই হল মানুষের কাজ। সুতরাং সবাই এই নিরাপত্তা অর্জনের লড়াই করছে। প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, রাতে শুয়ে পড়ার আগে, মানুষকে অপরিহার্য কিছু কাজ করতে হয়, যেমন তার মলমূত্র ত্যাগ, যৌন খুশী, ও পেট ভরে খাবার। এগুলি ঠিক ঠাক করার জন্য তাকে অর্থোপর্জন করতে হয়। অর্থোপার্জন আসে নানা ধরণের কাজকর্ম থেকে। সমাজে যৌনকর্মী থেকে নেতা মন্ত্রী, মুচী থেকে মন্দিরের পুরোহিত, বা অমূক তমূক আনন্দ বাবাজী অব্ধি সবাই মলমূত্র ত্যাগ, যৌন খুশী, ও পেট ভরে খাবার খায়। প্রতিদিন একই খাবার খায়না, একই সঙ্গীর সাথে তামাশা বা রঙ্গরস করেনা। সমাজের উঁচু মহলে, সমাজের নীচু মহলে সমাজের মধ্য মহলে কার সাথে কার যৌনসম্পর্ক না জানলেও লোকে বিশ্বাস করে সবার একাধিক যৌনসঙ্গীর সাথে যৌনসম্পর্ক হয়েছে। এবং ইচ্ছা বা বাসনা জাগে। সমাজের সংবিধানে বলাই আছে দুজন প্রাপ্ত বয়সের লোকের মধ্যে নাক গলানো যাবেনা। তাহলে আপনার হিংসা উথলে উঠে কেন? কেউ যৌনতার মাধ্যমে অধিক টাকা উপার্জন করছে বলে? আপনি ঈর্ষাকাতর? আপনাকে কেউ গ্ল্যামার দিচ্ছেনা? আপনার মাথায় গোবর থাকলে কি করে পাবেন? আপনি আর পাঁচটা মানুষের মতো চুপ থাকুন।
কেউ হয়ত বলবেন- আরে আপনাদের জন্যই দেশে কিছু হচ্ছেনা। সিনেমা হবেনা, সাহিত্য হবেনা, শিল্প হবেনা। দেশ বেড়ে উঠার প্রথম প্রতিবন্ধক আপনারাই।
দেশে শিল্পটা সমস্যা নয়। সমস্যা হল প্রশাসনে যে বড় বড় ভ্রষ্টাচার, অনৈতিক কাজ, অবৈধ লেনদেন, খুনখারাপি চলে তার জন্য আপনার গায়ের জোর ব্যবহার করুন। না, সেখানে লাঠি বা জেলের ভয়ে যেতে পারছেননা? নরম জায়গায় আঁচড় কাটছেন।!!
শিল্প সুদুর প্রাচীনকালে গুহাযুগে ছিল মানুষের দৈনিন্দিন কাজের বা ব্যবহারিক জীবনের তাগিদ থেকে,পাহাড়ের গায়ে, জন্তু ও মানুষের শিকার বা যুদ্ধ। তারপর, আমরা দেখি, মানুষ কিছু মজা বা ঢং করার জন্য, তারা নানা প্যাটার্ণ, কখনো আবেগে তাড়িত কখনো জ্যামিতিক বা ঘণকের,ব্যবহার দিয়ে ছবি ভাস্কর্য বানাচ্ছে। তারপর দেখি প্রাকৃতিক রহস্যকে নিয়ে বিকৃতি করণের মধ্য দিয়ে যেমন আফ্রিকার ভাস্কর্যগুলি।দেখতে কুৎসিত ও ভয়াবহ মুখোশ, তারপর যীশুর জন্মের পর থেকে মন্দির বা গীর্জার গাত্রে পুরান কাহিনী, ঈশ্বর ও প্রাকৃতিক বিষয় থেকে, জমিদার বা রাজার আমলে তাদের প্রতিকৃতি করে। যুদ্ধ বা কোন কাহিনী লোককথা নিয়ে । ষোড়শ শতাব্দী থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য, প্রতিকৃতি, জন্তু জানোয়ার, নারীশরীর এর পর থেকে বর্তমান অবধি শিল্পের বহু মাত্রা। শিল্প শুধু দক্ষতা বা ভাবনায় নয়, সরাসরি দর্শক কে নিয়ে তার অস্তিত্ব । আমরা পেয়েছি কতগুলি নতুন শব্দ, ইন্সটলেশান, রিলিফ, পারফর্মেনস আর্ট, বডি আর্ট/ পেইন্টিং, রিডিফাইনিং, ডিজিটাল, ভিডিওগ্রাফি, আরো অনেক আছে। সেগুলি পশ্চিমে চলে। বোঝা আরো সমস্যা দায়ক। আমরা এতটাই পিছিয়ে আছি পশ্চিম থেকে। মনে হয়, পৃথিবীর উপর মহাদেশগুলি ড্রিফটিং/ ভাসমান, পশ্চিমের সাথে পুবের দূরত্ব বাড়ছে। পশ্চিম পুবে চলে যাচ্ছে। ওখানে এখন আগে সূর্য উঠছে, আমাদের অনেক পরে মেঘে ঢাকা সূর্য পাই।
পশ্চিমে শিল্পসামগ্রী বিকোয়, আমাদের এখানে শিল্পী না খেতে পেয়ে মারা যায়, আর যারা বেঁচে থাকে মন্দিরের প্রাসাদ কুড়িয়ে খেয়ে বাঁচে। চীন বৃহত্তম লোকসংখ্যা নিয়ে চলছে, ওখানে আমাদের দেশের মতো চোর অপরাধী নেতা মন্ত্রী নেই। চীনের শিল্প সাহিত্যও উন্নত। ওদের দেশ থেকে যারা চলে যায় পশ্চিমে তারাও বিশাল প্রতিভাধারী। অলিম্পিক বা নানা খেলাধুলায় দেখুন ওদের অবদান।
শার্ল বোদলেয়ার ঠিকই বলেছিলেন, শিল্প হল বেশ্যা বৃত্তি ( ক্ষমতা, প্রতিভার পণ্যকরণ) তাহলে শিল্পীরা হল বেশ্যা/ Charles Baudelaire, in his early intimate journals, made the equation explicit: “What is art? Prostitution.”
শিল্প সব সময়ই ধরা হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা র বস্তু। ও নতুনের সন্ধান। এবং যা ন্যায় সঙ্গত বা বৈধ নয় তা শিল্পে আনা যায়না এমন ভাবনা শিল্পে অন্তর্ভুক্ত নয়। মানে শিল্পের কাছে বৈধ বা অবৈধ শব্দগুলি অকেজো। তাহলে হয়তো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকেও শবদেহ ব্যবচ্ছেদের জন্য জেলে যেতে হত। আমেরিকান আর্টিষ্ট Fred Tomaselli uses illegal substances তার পেইন্টিংএ । এরকম অনেক উদাহরণ আছে।
ফ্রেজারের শো ইয়ের শেষে টিভি চ্যানেলের কর্তা, যার নাম জো স্কারবরো, উল্লাসে বলে উঠলেন, কোথায় মানুষের বিক্ষোভ?
Joe Scarborough, a former Republican congressman from Florida and rabid right-winger (appointed by President Bush to be a member of the Presidents Council
হা, তার ভাবনা ছিল অন্য রকম, যে, ফ্রেজার বেশ্যার মত কাজটি করেছে, আইন ভেঙ্গেছে, কিন্তু মানুষ তাকে গ্রহন করেছে। কেউ বিক্ষোভ করেনি।

অ্যান্ডিয়া ফ্রেজারের কাঁধের উপর থেকে মাথাটা দেখতে একেবারে সাধারন। চোখে চশমা। চ্যাপ্টা মুখ, বোকাটে ছাপ। কিন্তু কাঁধের তলা থেকে তার শরীরটা যেন চাবুক। মেদহীন মজবুত ছিপছিপে গড়ন। শরীর চর্চাকরা ইঙ্গিত একেবারে সুপার ঊওম্যান মানে দুর্দান্ত মহিলা। তার কাজ অধিকাংশ শরীর প্রদর্শন করা ২০০০ সালে সে Official Welcome নামে একটি প্রদর্শনী (পারফর্মেন্স আর্ট) করেছিল। সুচনা বক্তৃতায় হঠাৎ দর্শকের সামনে পোশাক খুলে ফেলেন। শুধু একটি ব্রা আর বিকিনীতে নিজের নগ্ন শরীরটা গর্ব করে দেখান, আমেরিকান ফাইন আর্টস এ।

আরেকটা কাজে Guggenheim Bilao র স্তম্ভে নিজের শরীর উত্তেজক ভাবে ঘষতে থাকেন। এবং তা তিনি করেন যাতে দর্শক উত্তেজিত হতে পারে। এবং কখনো শো চলা কালীন যদি তার মনে হয় শরীর ও মন একসাথে কাজ করছেনা তখন তিনি কিছু মজা করতে শুরু করেন।ফলে দর্শকের কাছে অধিক গ্রহনযোগ্যতা আসে। এই ধরণের কাজ তার আগে আরো একজন মহিলা, আরো বিতর্কিত ভাবে করে গেছেন তার নাম অ্যানি স্প্রিঙ্কল ( Annie Sprinkle, , the former prostitute, stripper, cable television host, pornographic actress, magazine editor and film producer ) তিনিও একজন পারফর্মেন্স আর্টিস্ট Performance artist)
কিছু কিছু ভুল ধারণা ভেঙ্গে মানুষকে সচেতনার কাজে অ্যানি কাজ করতেন। যেমন পুরুষের ধারণা নারীর যোনীতে কিংবা ভেতরে সারভিক্সে কোন দাঁত জাতীয় কিছু আছে কিনা। সঙ্গমের সময় পুরুষরা নাকি তাদের যৌনাঙ্গে নারীর যোনীর দাঁত অনুভব করেন। তো অ্যানি এক আর্ট ফেস্টিভ্যালএ এক সংগঠকের মাধ্যমে , টিকিট করে শো করেছিলেন। প্রবেশ টিকিট, নানা ভিডিও দেখার নানা অংকের ডলারের টিকিট, ১৮ বছরের উপর, সিনিয়র সিটিজেনের জন্য কিছু রেহাই দেওয়া দামের টিকিট, এরকম করে ব্যবস্থা হয়েছিল।

মঞ্চে অ্যানি বসেছেন, সদাহাস্যময়ী তিনি। পা দুটি দুদিকে ছড়ানো,speculum and flashlight এর সাহায্যে দর্শককে একে একে তার যোনী ও যোনীর ভেতর গর্ভাশয়ের নালী দেখতে দিয়েছেন। এবং বলেছেন যোনীর ভেতর কোন দাঁত থাকেনা।এই পারফর্মেন্স আর্ট শো-গুলি আবার মিউজিয়াম টাকা দিয়ে সংগ্রহ করে রেখেছে ডকুমেন্টশনের জন্য। এছাড়াও অ্যানির পারফর্মেন্স আর্ট আমাদের ভারতীয়দের চোখে এত অশালীন মনে হবে, আমি তা নিয়ে কিছুই বলতে পারবোনা। পরে আমার নিরাপত্তার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমেরিকান ও ইউরোপিয়ানরা আমাদের চেয়ে অনেক বছর এগিয়ে। তাদের জীবনযাত্রায়, শিল্পকলায়, ও রাজনীতি ও অর্থনীতিতে।
প্রসংগক্রমে অ্যানির কাজ দেখালাম। মূলতঃ আজকের শিল্পী আন্দ্রিয়া ফ্রেজার।
দুজনেই কট্টর নারীবাদী। কিন্তু তাদের দৃষ্টিভংগী আলাদা অন্যদের চেয়ে। আন্দ্রিয়া যদি জনকে, যার সাথে তিনি যৌনসংগম করেছেন টেপে বন্দী করেছেন, তা দেখিয়ে বলতেই পারেন, দশবছর বাদে, মি টু র নামে। যে আমাকে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করেছে। জানিনা তিনি ভবিষ্যতে এসব করবেন কিনা। কারণ তার হাসিমুখে জনের সাথে সঙ্গমের ছবি দেখা গেছে।মেয়েদের বিশ্বাস করা মুসকিল। তারা কান্নার মাঝে প্রচার করে যাকে তাকে ফাঁসিয়ে দেয় এরকম নজির অগুনতি।
তো আমরা দেখলাম, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যৌনতাই সংস্কৃতিঃ তথ্য বা খুশী বিক্রী করা, বা দুপক্ষ সন্তোষ্ট থাকা, দুটি পৃথক মানুষের মিলন- এই হল শিল্প ও সংস্কৃতি। আশা করি আপনাদের আমি বোঝাতে পারলাম।
যাইহোক আপনি এসব আর্ট পছন্দ করুন আর নাই বা করুন। ফ্রেজারকে তার সাহসের প্রশংসা করতেই হয়। শিল্প জগতের বাইরে তাকে বেশ্যা বা নষ্ট মহিলা বলতেই পারে। অনেকে বলেন। আর শিল্পজগতের লোকেরা তাকে নার্সিসসিস্টিক (narcissistic) বলবে। ও একজন শিল্পী হিসাবে তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা বজায় থাকবে। শিল্প জগত হল এমনই একটি স্থান, যেখানে আপনি মুক্ত। কিন্তু কোটিকোটি ডলারের শিল্পী জেফ কুন্স কে জিজ্ঞেস করুন আর্ট ওয়ার্ল্ড কি মুক্ত? তিনি ১৯৯০ সাল নাগাদ তার তখন স্ত্রী (এখন প্রাক্তন) ইতালীর, একটা প্রদর্শনী করেছিলেন। সেটা কিন্তু পাবলিক গ্রহন করেনি। তাকে 1992 Documenta and Whitney Biennial থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। শিল্প জগতে, আমেরিকাতে, সদা প্রহরা থাকে। উল্টোপাল্টা শিল্পের নামে করা মুশকিল। করতেই দেবেনা। ফ্রেজারের কেসটা অ্যাকাডেমিক, এধরণের আর্ট থিউরি আমেরিকার আর্ট কলেজে পড়ানো হয়। তবু কিছু কিছু জায়গায় ফ্রেজার অসম্মানিত হন। ফ্রেজারের শো দেখলে আপনি ভাববেন, ফ্রেজার যেন হলিঊডের নায়িকার চেয়ে বেশী বিখ্যাত। ছবিগুলি দেখুন। আঁচ করতে পারবেন।
Andrea Fraser – Department Chair and Professor, Interdisciplinary Studio
Andrea Fraser has been identified with institutional critique, feminist practice, group relations, project-based art, and context art. She has worked in performance, video, installation, sound, text, and a range of other mediums.
Major works include projects for the Berkeley Art Museum (1992); the Kunstverein Munich (1993); the Venice Biennale (Austrian Pavilion, 1993)); the Whitney Biennial (1993, 2012); the Generali Foundation, Vienna (1995); the Kunsthalle Bern (1998); the Sprengel Museum Hannover (1998); the Bienal de São Paulo (1998); the Tate Modern (2007) and the Whitney Museum of American Art (2016). She has created performances for the New Museum of Contemporary Art, New York (1986); the Philadelphia Museum of Art (1989); the Wadsworth Atheneum, Hartford (1991); inSITE, San Diego/Tijuana (1997) ; the MICA Foundation, New York (2001); Pacific Standard Time, Los Angeles (2012), and Prospect, New Orleans (2014). She also has performed solo work at the the Centre Pompidou, Paris; the Dia Art Foundation, New York; the Institute of Contemporary Art, Boston; the Museum of Contemporary Art, Los Angeles; the Museum of Modern Art, New York; the Museum of Modern Art, Vienna; the San Francisco Museum of Modern Art; the Volksbuene, Berlin; and the Whitechapel, London and other venues.
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।