• Uncategorized
  • 0

সাম্প্রতিকী -তে বিদ্যুৎ রাজগুরু

দিল্লি যখন জ্বলছে মোদী তখন ট্র্যাম্প ভজনায়

এবার অশান্ত খোদ রাজধানী দিল্লি।আক্রান্ত গৃহহীন মানুষ।দাউদাউ করে পুড়ছে বাড়ি-ঘর-দোকান-বাজার।এইভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মধ্যেই জ্বলছে রাজধানী দিল্লি।সংবাদে প্রকাশ সিএএকে কেন্দ্র করে বিরোধী আর সিএএ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে উত্তরপূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ এলাকা।যার আঁচ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্রও।দু’পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে নিহত হয়েছেন দিল্লি পুলিশের এক হেডকনস্টেবলসহ অনেক মানুষ।যখন রাষ্ট্র আতিথেয়তা নিয়ে ব্যস্ত।একে অপরের পিঠ চাপড়াতে আসরে নেমে পড়েছে তখন দেশের সুমহান ঐতিহ্যে হিংসার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।এনিয়ে দুই রাষ্ট্র প্রধানের টু শব্দ নেই।ভোটের নোংরা রাজনিতিই আজ ভোটের বৈতরণী পার হতে ধর্মের আফিম গিলিয়ে দিয়ে নিরিহ মানুষকে নিরিহ মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার রাজনীতি পুরদমে চলছে।যার করুণ পরিণতির শিকার দিল্লির ঘটনা।সদ্যসমাপ্ত দিল্লির নির্বাচনে মানুষের রায় ছিল ধর্মনিরপেক্ষ সুমহান ভারতীয় আদর্শের প্রতি।শান্তি আর সম্প্রীতির বলিষ্ঠ রায় নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে।শত প্ররোচনাসত্ত্বেও এই ভারতবর্ষের সনাতন আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হয়নি।
‘বসুধৈবকুটুম্বকম্’ এই হল সনাতন ভারতীয় আদর্শ।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো হাজারো রাষ্ট্রপ্রধানের আতিথেয়তা হোক ক্ষতি নেই।কিন্তু এমন একটি দিনে দেশের খোদ রাজধানী যখন আগুনে জ্বলে,দেশের মানুষের নিরপত্তা যখন তলানিতে তখন এমন অতিথিবরণ যে সরকার করে তাদের দায় তো নিতে হবে।দুই রাষ্ট্র প্রধানের উপস্থিতিতে অহিংসের পুজারি মহাত্মাগাঁধির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হল।আর ভিজিটারস বুকে গান্ধিজির সম্পর্কে একটি টু শব্দ নেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।দেশের মানুষ নিরব দর্শক হয়ে দেখল মোদী ভজনা।অথচ বরাক ওবামা যখন ভারতে আসেন তিনি রাজঘাটে গান্ধিজির সমাধি স্থল ঘুরে খাতায় লিখেছিলেন গান্ধিজি আর মারটিন লুথার কিংএর কথা, ট্রাম্পের মতো অবান্তর মোদী ভজনায় ভরিয়ে দেননি খাতা।
ব্যক্তিগত ক্যরশিমার মিথ তৈরি করে ভোট বৈতরণী পার হওয়া যায় ঠিকই কিন্তু ভারতের মতো নানা ভাষা নানা ধর্ম জাতির দেশের রাষ্ট্র প্রধানের যোগ্যতা অর্জন করা কঠিন।অটল বিহারি বাজপেয়ির রাজধর্ম পালনের কথা তথাকথিত স্ট্রংম্যান প্রধানমন্ত্রির কাছে আজ শত সহস্র যোজন দূরে।এযেন মনে হয় সবকিছু সাজানো।এলেন তিনি গেলেন তিনি তারই হিসাব করতে বসেছি।ব্যবসা করতে এলেন আর একঝাঁক ছেলেভুলানো চুক্তির সই হল।আর দুই দেশ প্রধানের পঞ্চমুখ প্রশংসার যেন কয়দিন শো চলল।এযেন রোম নগরী যখন পুড়ছে, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।এই কথাটি ইতিহাস-প্রসিদ্ধ।এই অবিবেচক শাসকের উদাহরণ টানার সময় এই প্রাচীন রোমান উপমাটি ব্যবহার যথেষ্ট।
নমস্তে ট্রাম্পের মোড়োকে দেশটাকে বেচে দেওয়ার প্রতিযোগিতা অব্যাহত।দেশের সাধারণ মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে মৌলিক সমস্যাগুলিকে।
উদারনীতি দুর্নীতি আর সাম্প্রদায়ীকতার রাজনীতি আমদানি করে দেশের সুমহান ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর নির্লজ্জ আক্রমন শুরু হয়েছে।
জাতীয়তাবাদের চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষের চেতনায় সাম্প্রদায়ীকতার বিষবাষ্প থাকেনা।একদিকে ডিজিটাল ভারতের স্বপ্ন অপরদিকে দেশ ও জাতিকে একযুগ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাবিদরা আজ আক্রান্ত।এই শক্তির হাতে খুন হয়েছেন নরেন্দ্রদাভলকর ,গোবিন্দ পানসারে ,কর্ণাটক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এম.এম কালবর্গী।গোরুর মাংস খাওয়ার ধুয়ো তুলে হিন্দুত্ববাদী শক্তি দিল্লির দাদরির মুসলিম পরিবারের উপর আক্রমন ও নারকীয় হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ভাবে ঘটিয়েচ্ছে।
এসব কর্মসূচি কাদের ?সহজেই অনুমেয়।দেশে সাম্প্রদায়ীকতার ও জাতপাতের আমদানী করে মানুষের ঐক্য সংহতিকে বিনষ্ট করছে সরকার।ভোটের এমন সস্তা রাজনীতি দেশ কোনদিন দেখেনি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘কালান্তর’ গ্রন্থের ‘হিন্দু মসুলমান’ প্রবন্ধে বর্ণনা করেছেনঃ ‘যেদেশে প্রধানত ধর্মের মিলেই মানুষকে মেলায়, অন্যকোন বাঁধনে তাকে বাধতে পারেনা সেদেশ হতভাগা।সেদেশ স্বয়ং ধর্মকে দিয়ে যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেইটে সকলের চেয়ে সর্বনেশে বিভেদ।মানুষ বলেই মানুষের যে মূল্য সেটিকেই সহজ প্রীতির সঙ্গে স্বীকার করাই প্রকৃত ধর্মবুদ্ধি।যেদেশে ধর্মই সেই বুদ্ধিকে পীড়িত করে রাষ্ট্রিক স্বার্থবুদ্ধি কি সে দেশকে বাঁচাতে পারে?কাজী নজরুল ইসলামের
‘হিন্দু- মুসলমান’ প্রবন্ধে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের আলাপচারিতায় রবীন্দ্রনাথ বর্ণনা করেন, “অবতার-পয়গম্বর কেউ বলেননি, আমি হিন্দুর জন্য এসেছি, আমি মুসলমানের জন্য এসেছি, আমি খ্রিষ্টানের জন্য এসেছি।তারা বলেছেন, আমরা মানুষের জন্য এসেছি।কিন্তু কৃষ্ণের ভক্তরা বলেন, কৃষ্ণ হিন্দুর, মুহম্মদ(স) এর ভক্তরা বলেন, মুহম্মদ(স) মুসলমানের, খৃষ্টানরা বলেন, খৃষ্ট খ্রিষ্টানদের।আর এনিয়েই যত বিপত্তি।মনিষীদের উদাহরণ দিয়ে বক্তব্য আর বড় করতে চাইনা।
সরকার যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠান হওয়াকে আধ্যাত্মিক আদেশ হিসেবে দেখে।তখন এমনই হয়।জর্জ ডিমিট্রভ বলেছেন, “ফ্যাসিবাদ কাজ করে পরম সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে,কিন্তু জনগনের কাছে হাজির হয় ভ্রান্ত জাতীয় ধ্যানধারনা নিয়ে এবং উগ্র হিংসাত্মক জাতীয় চেতনাকে উস্কে দিয়ে’।দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে এখন সুদৃঢ় ঐক্যের প্রয়োজন।বেসরকারীকরণ ,উদারনীতি দুর্নীতি ও দেশ জুড়ে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ইস্পাত দৃঢ় আন্দোলন গড়ে উঠুক।ধর্মের আফিম গিলিয়ে বাইপাস রোড ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকবার এমন ব্র্যান্ডরাজনীতি জনগণ যতদিন না বুঝবে ততদিন দুর্ভোগ দেশের দশের তাতে সন্দেহ নেই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।