ফার্স্ট স্টপ

ফার্স্ট স্টপ : মন, মান, মনন

১.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
মাইকেল মধুসূদন দত্ত

বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু !– উজ্জল জগতে
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !
দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী।
যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল, দাসরূপ ধরি।
পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে,
দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে।

২.

গিরিশচন্দ্র ঘোষের কাছে ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব একবার ভয়ঙ্কর রূপে অপমানিত হয়েছিলেন। তাকে খেতে খেতে হাত ধরে তুলে দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন জি.সি। এদিকে দক্ষিণেশ্বরে ফিরে ঠাকুরকে সবাই তিরস্কার করছেন তার ছেলে মানুষি আর পেটুকপনার জন্য। তাঁর মানে আঘাত মানে যে তার ভক্ত শিষ্য সবার মনে, মানে দুয়েই আঘাত। ওনার এই ছেলেমানুষী মানা যায়! কীভাবেই না গিরিশ অপমান করলো! ঠাকুরের সেদিকে হেলদোল নেই। ঠাকুর ফিক করে হেসে বললেন,” মা যে বললে এতে আমার মান যায়নি। হ্যাঁ রা, কোলের ছেলে মাকে তো কত লাথি মারে, তাতে মায়ের মান যায় নাকি রা! “
উপরের কবিতাটি আর তারপরের গল্পটি সব কিছুর উত্তর দিয়ে দিচ্ছে না বিদ্যাসাগর নিয়ে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া বিতর্ক নিয়ে? জনৈকা অধ্যাপিকার কথায় বিদ্যাসাগরের মানে লাগলো, বা লাগতে পারে বলে মনে হয় কি? ওনার কথার এত গুরুত্ব? যদি সত্যিই মনে হয় দয়ারসাগরের মানে লেগেছে তবে বলবো মানের মানদণ্ড নিয়ে বিন্দুমাত্র বোধগম্য আপনার নেই। খারাপ লাগলে প্রতিবাদ অবশ্যই করা উচিত, কিন্তু জনৈকার মতো নিজেদের ক্ষুদ্র মান আর মানসিকতা নিয়ে বিদ্যাসাগরের মানের বিচার করতে যাওয়া মোটেই ঠিক না। দেশের রাষ্ট্রপতিও যদি কথাটা বলতেন তাতেও বিদ্যসাগরের মানের ছবিতে বিন্দুমাত্র ধুলো জমতো না। অকারণে গুরত্বহীন বিষয় আর মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া আমাদের ট্রাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বানানটা ঠিক করে আমরা লিখে উঠতে পারি না, দুই কলম বাংলা কথা বলতে গিয়ে দশবার ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করে আপাদমস্তক নিখাদ বাঙালি মানুষটার মান নিয়ে টানাটানি করে নাইবা লোক হাসালেন। নতুন প্রজন্ম কী ভাবছে ভেবেছেন? ইমারত দেওয়াল গাঁথনির উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে ভিতের গভীরতা আর দৃঢ়তার উপর।

শাল্যদানী

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।