• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন আলবার্ট অশোক (পর্ব – ৪০)

শিল্প হল উদ্ভাবনী কর্ম

ছবি আর দৃশ্যকলার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ছবি বললে, আপনি তখনি বুঝে যান, দ্বিমাত্রিক তল সম্পন্ন একটি বস্তুর গায়ে আপনি একটি প্রতিনিধিত্বমূলক বস্তুর আকৃতি এঁকেছেন। আর দৃশ্যকলা বললে, আপনি বুঝেন আপনার চোখের সামনে যা দেখে খুশি হচ্ছেন, ভাবনায় মত্ত হচ্ছেন, অভিজ্ঞতায় পুষ্ট হচ্ছেন। সকল কিছুই, দৃশ্যের অন্তর্গত। বর্তমানে ইনস্টলেশান আর্ট, পারফর্মেশান আর্ট, গ্রাফিত্তি/ স্ট্রিট আর্ট ইত্যাদি সকলই দৃশ্যকলার অন্তর্ভূক্ত শিল্প
শিল্প মানেই অধিকাংশ মানুষ বুঝেন ছবি আঁকা। এখানেই আমরা প্রথম আটকে যাচ্ছি।
রাস্তা দিয়ে চলার সময় আপনি অন্ধ হয়ে হাঁটেননা নিশ্চয়ই। গাড়ী –ঘোড়া ছাড়াও রাস্তা উঁচু-নীচু, গর্ত, কাদা ইত্যাদি দেখে হাঁটেন। ছবি আঁকার সময়ও আপনাকে সচেতন হয়ে আঁকতে হবে।
সবকিছু একটা সূত্র দিয়ে বাঁধা যাবেনা। সব পাখী উড়তে পারে? উটপাখী উড়তে পারেনা। ডানা থাকলেই পাখী? বাদুর স্তন্যপায়ী, কিছু ব্যতিক্রম আছে। ব্যতিক্রমের কারণ আছে।
ছবি আঁকাতে একই ব্যতিক্রম থাকে। কিছু ভাস্কর্য স্থাপত্য কলা? সিদ্ধান্ত নেওয়া মুশকিল।
শিল্প মানে কিছু বিমূর্ত ভাবনাকে মূর্ত করে চিত্তবিনোদন, বক্তব্য বা ভাবনার আদান প্রদান, কোন সুন্দর বা স্বাশ্বত কিছুর নির্মাণ। সে শব্দ দিয়ে হতে পারে, আওয়াজ দিয়ে হতে পারে, মুর্তী বানিয়ে হতে পারে, নাটক করে হতে পারে, যে কোন ভাবেই হতে পারে। বিচার্য হয়, শিল্পটি যে সময়ে নির্মিত হয়েছে, সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তার কতকখানি গুরুত্ব তৈরি করেছে। চিরকালীন একই আচার, বিচার, ভাষা, উচ্চারণ, জীবন যাপন, উপলব্ধি একই রীতিতে চলেনা। মানুষের ও জীবজগতের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিবর্তন চলছে। ক্রমশঃ অধিক স্বাচ্ছন্দের দিকে প্রাণীকুল এগিয়ে যাচ্ছে। এই স্বাচ্ছন্দ্য নির্মাণ করতে গিয়ে মানুষকে উদ্ভাবনী বা আবিষ্কারের পিছনে ছুটতে হয়। নতুন নির্মানের প্রয়োজন আসে। এই প্রয়োজনের জন্যই ভাবুকরা ভাবে, দার্শনিকগন দূরদৃষ্টি নিয়ে ভবিষ্যৎ খুঁজে, বিজ্ঞানীরা সূত্রায়িত করে মই বেয়ে উপরে উঠে। আর তার ফল ভোগ করে সারা পৃথিবী।
সবাই একই স্তরের ক্ষমতাবান নয়। সবাই কালের বিচারে একই স্তরের মেধাবান নয়। বোধবুদ্ধিহীন মানুষের সংখ্যাই বেশি। মেধাকে শান দিতে হয়। জীবন যত বেশি বৈচিত্রে ভ্রমন করবে, সংঘাতে আসবে, তত বেশী অভিজ্ঞতা ও ততবেশি মেধাসৃষ্টি করবে।
মানুষ যেদিন প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিল, সেই আগুন জ্বালানোটা, শিল্প ছিল। যেদিন চাকা সৃষ্টি করল, সেদিন সে শিল্প সৃষ্টি করল। যেদিন তার প্রয়োজনের বস্তু কৃত্রিম করে সৃষ্টি করল, ও ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করল, সে সৃষ্টি করল শিল্প।
শিল্প সৃষ্টি মানে লাখো মানবজাতির হিত সাধন। সমস্ত পৃথিবীটা এই নিরিখে চলতে পারত। কিন্তু মানুষের দুষ্ট বুদ্ধি, ভোগের ক্ষমতা অর্জন। একজন পরিশ্রম করে পথ দেখাল, ফসল ফলাল, প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করল, সেই উৎপাদনে, ফসলে, পথে ক্ষমতার বলে ছিনিয়ে নেওয়া, বা ধোঁকা দিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া। এর নাম রাজশক্তি। আজ এর নাম রাজনীতি। ঠান্ডা ঘরে লোকগুলি বসে, আসল শিল্পী যারা গায়ে গতরে, মস্তিষ্কে খেটে ফসল তৈরি করে, সমাজকে সুন্দর করে, শান্তিতে রাখে, তাদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে নিজের ভান্ডার পাহাড় প্রমাণ করছে, স্বার্থ, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করছে। আর পরিশ্রমী শিল্পীরা বোকার মতো দেখছে রাজনৈতিক মানুষের যাদুকরের মত ভেল্কি খেলা।
শিল্পীরা কিন্তু চিন্তাশীল। চিন্তাটাই তাদের প্রাথমিক, যেমন রাজনীতিকদের ক্ষমতা হল প্রাথমিক বিষয়। একবার কেউ, কোন শিল্পী যদি দেখে, ভাবে শিল্পীরা বা লেখকরা কত ক্ষমতাশালী তাহলে তারাই সমাজের হাল ধরতে পারে, রাজনীতি শব্দটাকে অকেজো করে।
কারু কারু কাছে শিল্প মানে একটা অভ্যেস, বা দক্ষতা, যেন মিষ্টির দোকানের কারিগরি বিদ্যা। বা ফ্যাক্টরির প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উৎপাদন। কিন্তু তা নয়। শিল্প হল ভাবনা ও তার মূর্তী বানানো। নতুন নতুন ভাবনা, যা আগে কেউ ভাবেনি, তেমন ভাবনা, বা উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে বস্তুকে অধিক গ্রহন করে তোলা। এই সহজ কথাটা যদি আপনি সহজভাবে বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনার শিল্পচর্চা বৃথা। পন্ডশ্রম।
এখানে, অনীশ কাপুরের একটি ভাস্কর্য, প্রসঙ্গক্রমে রাখছি। ভাস্কর্যটির নাম “Random Triangle Mirror” , ‘এলোমেলো তিনকোনা আয়না’ এটি ২০১৬ সালের হংকং এর আর্ট বেসেল এর প্রদর্শনীতে ছিল।
প্রচুর ত্রিকোন আয়নার টুকরা দিয়ে বানানো। কেউ কাছে গেলে পুঞ্জিত এক নান্দনিক প্রতিফলন ফুটে উঠে।
একটা ভাবনা। মৌলিক ভাবনা। তাকে শিল্প করে মূর্ত করেছেন। এরকম কত সৃষ্টি তিনি করে চলছেন। যেমন মৌলিক তার কাজ, তিনি তার প্রতিটি কাজের জন্যই আশাতীত সাফল্য ও পুরস্কৃত হয়েছেন। এখানে তার কিছু ড্রয়িং সহ কাজের নমূনা রাখলাম।
অনীশ কাপুর, বোম্বাই ১৯৫৪ সালে জন্মান, ১৬ বছর বয়সে, ১৯৭০ সালে লন্ডনে চলে যান। এক্ষুনি তিনি বিশ্বের প্রথম সাড়ির ভাস্করদের একজন।

মেঘ দরোজা Cloud Gate হল ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ শিল্পী ভাস্কর স্যার অনীশ কাপুরের তৈরি জনসাধারণের জন্য একটি ভাস্কর্য। এটাকে তার আকৃতির জন্য অনেকে The Bean বিন বা শিমের বিঁচিও বলে। AT&T Plaza at Millennium Park in the Loop community area of Chicago, Illinois. এর আকৃতির মাপ, 33 by 66 by 42 feet (10 by 20 by 13 m), এবং ওজন 110 short tons (100 t; 98 long tons). ১৬৮ টি স্টেনলেস স্টিলের প্লেট ব্যবহার হয়েছে। কোথাও জোড়া তাপ্পী দেখানো হয়নি। ফলে আয়নার মতো চকচকে প্রতিফলনকারী উপরিস্তর।
অনীশ কাপুর তরল পারদের ফোটা দেখে অনু প্রাণিত হয়ে এই ডিজাইন করেন।
ভাস্কর্যটি মিলিনিয়াম পার্ক এর কর্তৃপক্ষা ও কিছু শিল্প সংগ্রাহকের তদারকিতে তাদের অনুরোধে করা হয়েছে। মোট ৩০ জন শিল্পীর মধ্যে ২জনের কাজ গ্রহন হয়েছিল, একজন আমেরিকার জেফ কুন আরেকজন অনীশ কাপুর, লন্ডনের।
নীচ থেকে ১২ ফুট অর্ধবৃত্তের আকৃতির তলা দিয়ে ভ্রমণকারীরা স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করে ঘুরে ঘুরে দেখে উপভোগ করেন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল এর নির্মাণ সময়। ২০০৬ সালে ঘটা করে এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ বা উন্মোচন হয় ও জন সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথমে এর আন্দাজ খরচ ধরা হয়েছিল, ৯ মিলিয়ন ডলার, পরে সে খরচ বেড়ে ২৩ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌছায়।

আলেক্সি বেদনিজ বা আলেক্সি মেনশিকভ, একজন রাশিয়ার আলোকচিত্রী, আলোকচিত্র একটি শিল্প মাধ্যম, আপনারা অনেক আলোকচিত্র দেখে থাকবেন, কিন্তু আলেক্সির এই কাজগুলি সম্পুর্ণ নতুন আবেদনের। তিনি ছায়া আর আলোর মাঝে এক অদ্ভুত যাদু তৈরি করেছেন। তার রচনার একটা আলদা প্যাটার্ণ আছে। একেই বলে অনুসন্ধান ও উদ্ভাবনী শক্তি। নিজের ভাবনাকে উপস্থাপনা, ও তার মোড়ক বা আঙ্গিক এক মৌলিক যাদু।

কোলাবরেটিভ পেইন্টিং ( Collaborative Painting)
এক শীতের রাতে- ১৯৪১ বাজিওটি Baziotes জ্যাকসন পোলক Jackson Pollock কে নিয়ে এল কামরোভস্কীর Kamrowski স্টুডিওতে। আর্থার ব্রাউনের দোকানে দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন কিছু চকচকে ল্যাকার জাতীয় রঙ সস্তায় নিয়ে এসেছিল। ওগুলো বাণিজ্যিক ছবিতে ব্যবহার হয়। মেঝেতে সস্তার ক্যানভাস একটা বিছাল। প্রথমে ব্রাশ দিয়ে রঙ মারল তারপর ফোটা ফোটা করে রঙ ঝরাতে লাগল ক্যানভাসের উপর। কামরোভস্কি বলছিল মানুষকে বোকা বানানোর কাজ চলছে। তারা তিনজনই একটা ক্যানভাসে এই রংয়ের খেলায় মেতে উঠল। তারা তিনজনই অবচেতন মনের প্রভার ও বিষয় সম্পর্কে খুব সচেতন ছিল। তাদের অবচেতন মননিয়ে ক্যানভাসটার উপর যে যা পারল করল। এরকম অনেক গুলি কাজ তারা তিনজন মিলে করেছিল। কামরোভস্কি সবগুলিই ছবি ফেলে দিয়েছিল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, কিন্তু স্মরণ রাখার জন্য একটা কাজ যত্ন করে রেখেদিয়েছিল। বোধ সম্পন্ন একাধিক ব্যাক্তি মিলে এরকম কাজ একটা দলিল হয়ে রইল।
Winter 1940: Jackson Pollock, Gerome Kamrowski and William Baziotes drip paint.

Collaborative Painting: William Baziotes, Gerome Kamrowski and Jackson Pollock, 1940-41
Oil and enamel on canvas, 19 1/4 by 25 9/16 in. From Surrealism in Exile and the Beginning of the New York School by Martica Sawin:
সাদা কালো মাধ্যমে প্রকাশ করা একটা বিশেষ অর্থবহতা থাকে। সাদা কালো মান কোন মেদ ছাড়া বস্তুর আসল অস্তিত্ব প্রকাশ। সাদা কালো ড্রয়িং মানে একটা জিনিস কে সুন্দরতা সঠিক কতটুকু তা দেখানো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।