• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন আলবার্ট অশোক (পর্ব – ৪১)

গোমাতা আর নারীঃ একটি ভাস্কর্য

তথ্য বলছে, ধর্ষণ ভারতে অনেক কম হয়। কিন্তু, ভারতের মহিলারা অর্থের লোভে, বিদেশিদের সাথে যোগ সাজসে ভারতকে ধর্ষণের দেশ বানিয়েছে। এবং অধিকাংশ খবর, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় লেখক বা প্রচারক হল মহিলা। আর তার সাথে যোগ দিয়েছে নারীবাদ, ও কলেজের তরুণ পড়ুয়ারা যাদের বয়েস গড়ে ৪৫ এর এর কম।
ভারতে শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব যথেষ্ট। খবর ওয়ালারা খবর বানায় ও বিক্রী করে মুনাফা লুটে, তারা দেশের কাছে দায়বদ্ধ কম।
আর মহিলা শিল্পীরা, সারা পৃথিবীর, দেখবেন, তারা খুব আবিষ্ট থাকে তাদের দেহ, স্তন , যোনি ও তার সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলি নিয়ে। প্রায় ৯০ ভাগ মহিলার শিল্প সংস্কৃতি হল নারীর জীবন ও যৌনতা ঘিরে। তারা সমাজের অত্যাচারে, পিতৃতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, ঘরোয়া হিংসা ইত্যাদি নিয়ে কবিতা গল্প ছবি ভাস্কর্য ও নাটক সৃষ্টি করে।
হ্যা, ভারতে ধর্ষণ ঘটনা কিছু নিদারুণ খারাপ কিছু ঘটেছে। ১৩৩ কোটির উপর জনসংখ্যার ২০ ভাগ মহিলার মৃত্যু হয়, ৮০ ভাগ ছেলের মৃত্যু ঘটে। ছেলেরা মরলে সমাজের দায় নেই।
মহিলাদের ভাবনাগুলি এমনঃ
নারী ভ্রূণ হত্যা, কন্যাশিশু অ্যাবরশন। নারীর নিজের পায়ে দাঁড়ানো, নারীর প্রেম বিয়ে, যৌতুক, নারীর শিক্ষা ইত্যাদি ইত্যাদি। ভারতে নারী শূন্য বা জনসংখ্যা কম। মানুষের মনে এখনো নানা কুসংস্কার- তারা বলে শাস্ত্রের কথা, ধর্মের কথা, আল্লার কথা। পুরুষ একরকম কুসংস্কারদৃষ্টিতে নারীকে দেখে। কোথায় যেন পড়েছিলাম কোন ধর্ম নারীকে নরকের দরজা হিসাবে দেখে। নারীকে সত্ত্বাহীন ভাবে দেখে। নারীকে জন্মদেওয়ার যন্ত্র বা যৌনখেলনা হিসাবে দেখে। নারীর কোন আত্মা নেই। নারীর কোন মন নেই। সে পুরুষের পাঁজর থেকে তৈরি। পুরুষের সেবাদাসী, কেনা ক্রীতদাস। আর শতাব্দীর পর শতাব্দী এই ধারণা গুলি নারী মেনে নিয়েছে। সে নিজেকে মনে করে অপবিত্রা। হীন, ও সারাজীবনের ক্রীতদাস। বাড়িতে পুরুষের যৌনদাসী, সন্তান লালনের শ্রমিক। তার মুখ চোখ মাথা শরীর সব ঢেকে রেখে নিজেকে পবিত্রা ও পুরুষের মর্জির দাসী হতে চায়। এমন এমন সমাজ আছে যেখানে নারীকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়না। হলেও কালো কাপড়ে মুড়ে বার করে। সেখানে তার ঘরের নিকট আত্মীয়দের দ্বারা পীড়িত, অত্যাচারিত, সে কথা কখনো প্রকাশ্যে আসার রাস্তাও নেই। মহিলাদের দুঃখের শেষ নেই!
এখানে যৌনতাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে নানা অনুশাসন , শাসন দিয়ে। শতাব্দীর পর শতাব্দী চলছে। পুরুষ ছোটবেলা থেকেই যৌন অবদমিত নারী বিচ্ছিন্ন। ফলে জৈবিকপ্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখার উপায় নেই। পৃথিবীর সবগুলি পুরুষই ধর্ষক। জীবনে কোননা কোন সময়ে তার পরিচিত নারীর উপর গায়ের জোর ফলিয়েছে। নারীরা খুব নিরীহ, শান্ত ও ওবলা পশুর মত তারা পুরুষের উপর জোর ফলায়না। হিংসার প্রকাশ করেনা।
আমি একজন নারী ভাস্করের কথা বলব, যার কাজ দেখে আপনি দিনরাত ভাবতেই থাকবেন। সে আপনাকে একটা লম্বা সময়ের জন্য ভাবাবে। আপনি তার কাজ ভুলতে পারবেননা।
তো মহিলারা এমনিই।

Prune Nourry। এক ফরাসী রমণীর নাম। প্রুন নৌরি। তার বয়স এখন ৩৬ বছর। বর্তমানে আমেরিকার একট গ্যালারিতে তার কাজ করছেন।মানব জীবনের অবমাননাগুলি তার বিষয়। কাঠ দিয়ে ভাস্কর্য করেন পড়াশুনা তার Ecole Boulle in Paris । তিনি ভাস্কর্য, ফটোগ্রাফি, পারফর্ম্যান্স আর্ট ইত্যাদি মাধ্যমে কাজ করেন।
Holy Daughters বলে একটা প্রজেক্ট করেছিলেন তিনি। এশিয়ার লিংগ বৈষম্যতা নিয়ে। ২০১০ সালে। তিনি নারীবাদী নন, কিন্তু যখন তিনি তার কাজ করেন তখন তার কাজ শুরু থেকে প্রকাশ বা প্রদর্শন অব্ধি অতি সুন্দর ভাবে মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পারেন। আমাদের উচিত এই সব কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদেরও উদ্ভাবনী দিয়ে আমাদের ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করা। একবার আপনি প্রতিষ্ঠা পেলে অর্থ ও যশ আপনার পিছনে অনুসরণ করবে। দেখতে হবে আপনার শিল্পকলা কতটুকু মানুষের মধ্যে স্থান অধিকার করেছে। শিল্প ডিমান্ড তৈরি করতে পারলনা আর আপনি বসে আছেন বিক্রী করতে। কে নেবে? এই জ্ঞানটুকু আছে?
ভারত হল গো-পালের দেশ। গো-পালকের দেশ। ও গো-মাতার দেশ। অন্তত এই গত কয়েকবছরে ভারত ও তার শাসক যেভাবে গরু নিয়ে আদিখ্যেতা করেছে, তাতে বিশ্বের কাছে প্রমাণ হয়ে গেছে, ভারতবাসী ষোড়শ শতাব্দীর বর্বরের দেশ।
‘হোলি ডটার’ নামে ভাস্কর্যটি একটি গরুর মাথা আরেকটি নারীর নগ্ন দেহ জুড়ে বানানো হয়েছে। গরু, নৌরির অর্থে পবিত্র জন্তু ও উর্বরতার প্রতীক।আর মেয়ে বা নারী হল একটি উর্বরতার যন্ত্র।কিন্তু ভারতে তাকে অপছন্দ। জন্মাবার সময় অনেকেই আধুনিক যন্ত্রে লিংগ নির্বাচন করে ছেলেদের জন্ম দেন মেয়েদের দেননা।এই অ-সাম্যই এই ভাস্কর্যের মূল কথা।
২০১০ সালে নৌরি, অনেকগুলি একই রকম গরুরমাথা যুক্ত নারী দেহ দিল্লীর রাস্তায় বসিয়ে দেন। আর সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি অনেক টাকা খরচ করে সাংবাদিক ডেকে একটা প্রদর্শনী করতে পারতেন। হ্যা, তারো ভাস্কর্য বিক্রী করতে হবে, না হলে খাবেন কি? কিন্তু তিনি গতানুগতিক পথে হাঁটেননি। তার মূল বক্তব্য লোকের কাছে পৌছে দেওয়া আর লোকের মানসিক স্তরকে নাড়িয়ে সচেতন করা দেওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল। তিনি রাস্তার পাশে যখন এটাকে বসিয়ে দেন, সাধারন মানুষ , নানা পেশার, রিক্সাওয়ালা, হকার, অফিস বাবু, ইত্যাদি পেশার মানুষ ভিড় জমিয়ে দেন। তিনি কারুর সাথে প্রতিক্রিয়া জানতে চান আর তা ভিডিও করেন। তিনি গ্রামে যেখানে কুসংস্কার পূর্ণ সেখানে কোন খাটালের কাছে গিয়ে বসিয়ে দেন তার মুর্তি। কোথাও কোন মহিলা বেস্টিত জায়গায় কোথাও স্কুলের সামনে , বাচ্চাদের সামনে। মানুষকে বোঝান নারী বাঁচাতে, নারী ভ্রুণ বাঁচাতে।
মুর্তিগুলি ব্রোঞ্জে বানানো আর চোখ গুলি কাঁচের তৈরি। কোনটা দাঁড়ানো, কোনটা বসা। নানা ভঙ্গিমার। এভাবে এসব করে আবার তিনি কোন গ্যালারিতে ভিডিও সমেত শো করেন। সাংবাদিকদের দেখান গল্প। সাংবাদিকরা গল্প পেলে একদম মিডিয়াতে।
তার কথায় গরু যেমন নানা অত্যাচারের শিকার হয়, আবার পূজিত হয় এই হাইব্রিড ঈশ্বরের দেশে, নারী ও পূজিত হয় আবার অত্যাচারিত হয়। তিনি কলকাতায় এসে দূর্গাপূজাও দেখে গেছেন।
বিদেশি মহিলা, ভারতে এসে চমক দিয়ে গেল। তার ভাস্কর্যের উপস্থাপনা পুরো অন্যরকম। ছবি গুলি দেখুন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।