সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন আলবার্ট অশোক (পর্ব – ৩৪)
রিয়েলিজম – ২
সমসাময়িক নাগরিক জীবনের সামাজিক সত্যকে উদ্দেশ্যমূলক ছবিতে প্রকাশ, এই ছিল বাস্তবাদীদের মূল লক্ষ্য।
প্রতিটা আন্দোলন এমন সময় প্রকাশ হয় যখন সামাজিক কোন ধ্যান ধারণা বাঁচার দায়ে পালটানো প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেমন রিয়েলিজম বা বাস্তব বাদী প্রকৃত অর্থে ১৯৪৮ সালের ফরাসী বিপ্লবের পরে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। লুই-ফিলিপের রাজতন্ত্রকে উলটে ফেলে( overturned the monarchy of Louis-Philippe) তৃতীয় নেপোলিয়নের অধীনে ২য় সাম্রাজ্য গড়ে তোলার সময়। ফরাসী সমাজ তখন গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য লড়াই করেছিল, বাস্তববাদীরা শ্রমজীবী শ্রেণীর দৈনন্দিন জীবন থেকে আধুনিক বিষয়গুলি এঁকে চিত্রিত করে শিল্পকে গণতান্ত্রিক পথকে প্রশস্ত করছিল।
সময়টা এমনই ছিল, ফ্রান্সের স্টেট শিল্পকলা একাডেমি (the École des Beaux-Arts, the state-sponsored art academy) ইতিহাসের উপর কোন প্লটকে চিত্র ভাস্কর্যে রুপ দেওয়া পছন্দ করত।অর্থাৎ কমিশন কাজ ইতিহাসের উপর হলেই কাজ পাওয়া যেত। বলা বাহুল্য, বিংশ শতাব্দীর মাঝা মাঝি অব্দি, আমরা যতকাজ দেখি ইউরোপীয় শিল্পীদের- লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সময়েরও আগে থেকে, সবই অর্ডারি কাজ।গীর্জার তরফ থেকে, রাজা জমিদার দের তরফ থেকে বা মান্যগণ্য সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠছিল। ফলে আজকের মতো গন্ডায় গন্ডায় শিল্পী জন্মাতনা।যারা এই সব পৃষ্ঠ পোষকতা পেতনা তারা মুছে যেত। আর এই সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান যাদের নজরে আনত তারা অনেক নির্বাচনের পর।
গুস্তাভ কোরবেট রাস্ট্রীয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্ধা দেখিয়ে ছবি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন।
এরকম একটা সামাজিক পটে সমাজের ইতিবাচক উন্নতি গঠনের উদ্দেশ্যে শিল্পী লেখকরা পুরাণ যা থাকে তা বাতিল করে নতুনের উদ্যমে এগিয়ে চলে। দেখা গেল, রোমান্টিসিজমের ধ্যান ধারণা সমুলে উচ্ছেদ করে নতুন ছবি সরাসরি পর্যবেক্ষণের উপর রচনা হতে লাগল।
১৮৬১ সালে একটা বিবৃতিতে গুস্তাভ কৌরবেট (Gustave Courbet ১৮১৯–-১৮৭৭) বলেছিলেন,“painting is an essentially concrete art and can only consist in the representation of real and existing things,”(পেইন্টিং একটা অপরিহার্য কংক্রীট শিল্প, যার অস্তিত্ব আছে, আসল, তাকে প্রতিনিধিত্ব করেই গড়ে উঠবে।)
বাস্তববাদীরা প্রায়শই নম্র মানুষের বর্তমান অস্তিত্ব, বিস্তৃত বর্ণনায় আঁকত এর সাথে প্রকৃতিবাদী সাহিত্যের সমান্তরাল প্রবণতাগুলি মিশে গেছিল।তখনকার সাহিত্যিকরা ছিলেন এমিল জোলা Émile Zola, হোনরি ডি বালাজাক Honoré de Balzac এবং গুস্তাভে ফ্লুবার্টের Gustave Flaubert । উচ্চ শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রগুলিতে শ্রমজীবি মানুষের কথা তুলে ধরা পিয়ের প্রধোঁর Pierre Proudhon’s সমাজতান্ত্রিক দর্শনের সাথে মিশে গেছিল কাকতালীয়ভাবে। এবং কার্ল মার্ক্সের কমিউনিস্ট ইশতেহার (Karl Marx’s Communist Manifesto) ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, যা সর্বহারা বিদ্রোহের সূচনা করেছিল।
১৮৪৯ এবং ১৮৫০-৫১এর প্যারিস স্যালনগুলিতে গুস্তাভ তার দুটি বিশাল কাজ প্রদর্শন করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য কাজ, A Burial at Ornans (Musée d’Orsay, Paris) and The Stonebreakers (ছবিটা ধ্বংস হয়ে গেছে) শিরোনামে। গুস্তাভের নিজের এলাকার অতি সাধারণ মানুষের ছবি। ফরাসী সরকার ইতিহাসের ছবির জন্য যে বরাদ্দ রেখেছিল, গুস্তাভের কাজ সেই জায়গা দখল করে নেয়। এত নিখুঁত বাস্তব পর্যবেক্ষণের উপর সৃষ্টি।
A Burial at Ornans (Musée d’Orsay, Paris) 1849 – 1850 Oil on canvas 263x 125inches