• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৪৯)

অপসংস্কৃতি, অবক্ষয়ী সংস্কৃতি

Max Beckmann, The Night, 1918-1919 | © Coldcreation / Wikicommons
অপসংস্কৃতি, অবক্ষয়ী সংস্কৃতি। এই শব্দগুলি তো আছেই সামাজিক জীবনে। এক জায়গার সংস্কৃতি অন্যজায়গায় বিষাক্ত বোধ হতে পারে। একদেশের রাজনীতি অন্য দেশের ক্ষতির কারণ। এক ধর্ম অন্য এক ধর্মের বিপরীত। সুতরাং স্থান কাল বিচার না করে কোন কিছু বলা মুশকিল।
সমাজে অপসংস্কৃতি অবক্ষয়ী সংস্কৃতি আছে এবং তার প্রভাব মৃদু থেকে মারাত্মক হতে পারে।
কলকাতায়, একসময় বাম জমানায় অপসংস্কৃতি শব্দটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে মানুষের মুখে মুখে ঘুরত। আমার মনে হয় সমস্ত কিছুর মধ্যেই ভাল মন্দ দিক আছে, এবং মন্দ দিকগুলি উদার না হয়ে কঠোর হয়ে বন্ধ করা উচিত। ঊষা উথথুপকে ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে মহাজাতি সদনে গান গাইতে কমিউনিস্টরা বাধা দিয়েছিল। ঊষাউত্থুপ পশ্চিমী প্যাটার্নে গান করে। পপ গান আর ডিসকো গান, এগুলি অপসংস্কৃতি আর এস পি(Revolutionary Socialist Party (RSP) ) নেতা যতীন চক্রবর্তীর তাই মনে হয়েছিল। তিনি সে সময়ের পি ডবলিউ ডি র মন্ত্রী ও মহাজাতি সদনের চেয়ার ম্যান।
খেলার মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে ‘হোপ ৮৬’ করেন তখন বোম্বের অধিকাংশ নামী অভিনেতারা এসেছিলেন নাচ গান হিন্দী সিনেমায় যা হয় তা করতে। এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু অপসংস্কৃতি কথাটা এর পর আর শোনা যায়নি।
আই পি এল এর ক্রিকেটে চীয়ার লিডার আধো ন্যাংটো মেয়ে নাচবে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে, সুভাষ চক্রবর্তীর মনে হয়েছিল সত্যি অপসংস্কৃতি।
মুম্বাইয়ে (তখন বোম্বে নাম ছিল) ৬০ এর দশক থেকে হিন্দী সিনেমায়, মহিলা শরীর- যা দেখে পুরুষের মনে হয় এক্ষুনি তার সাথে যৌনসংগম করতে পারলে জীবন ধন্য হয়ে যায়- তেমন নারী স্তন, নাভি উরু প্রদর্শন শুরু হয়েছিল। শর্মিলা ঠাকুর বিকিনি আর ব্রা পরেছিলেন, সেই আলোকচিত্র রাতারাতি শর্মিলা ঠাকুরকে বিখ্যাত বানিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সারাদেশবাসীর ক্ষতির বদলে। আজ সারা বিশ্বে ধর্ষণ এক মহামারি, উলংগ মহিলা শরীর) পাশাপাশি আরেক মহামারি।
নারী শরীর হল পর্নোগ্রাফি। পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মীয় বইয়ে লেখা আছে, নারী শরীর হল নরকের দরজা/ পাপের ধারক।
মহিলারা ধর্মীয় এইসব বইগুলিকে নিন্দে করেছে, পিতৃতান্ত্রিক নারী বিদ্বেষী লেখা!? ভাবুন। আমার মনে হয় মহিলারা ভুল বুঝেছে। আজ প্রতি মিনিটে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একটি মেয়ে যৌন আক্রান্ত হয়। তার ঠিক উলটো দিকে প্রতি সেকেন্ডে আপনি পৃথিবীর সব জাতির মহিলাকে উলংগ যৌন আবেদনে হা মুখ হয়ে আছে- ছবি দেখতে পাবেন। বিজ্ঞান বলে চোখ বস্তুকে দেখে মনে আবেগ সঞ্চার করে।একজন উলংগ মহিলা যৌন আবেদনে তার শরীর টই টুম্বুর, এরকম দৃশ্য দেখে পুরুষের কি ব্রম্মচর্য পালনের উপদেশ দেবেন? এগুলি সংস্কৃতি না অপসংস্কৃতি?
আপনি হলিউড সিনেমার অধিকাংশ নামী/দামী নায়িকা ও গায়িকাদের উলংগ ভিডিও – যাকে আমেরিকান রা বলে ‘সেক্স টেপ’ দেখতে পাবেন। ভারতীয়দেরও খোঁজ করলে দেখতে পাবেন। এদের অনেকেই পার্ট টাইম যৌনকর্মী।পুলিশ কেস আছে। কি করে তারা দর্শক টানে ও ধর্ষক বানায় এই কারখানা অনেকেরই জানা। আইন আছে, আইন কাজ করেনা। অপসংস্কৃতি বেড়েই চলেছে। অপসংস্কৃতি বা অবক্ষয়ী সংস্কৃতি রুখে দেওয়া দরকার। না হলে আমাদের আগামী প্রজন্ম অশান্তি ও অস্থির সময়ে জীবন পাত করবে।
আধুনিক কলা বর্ণনা করার জন্য জার্মানিতে নাৎসি পার্টি Nazi Party in Germany ১৯২০ সাল নাগাদ ডিজেনারেট আর্ট বা অবক্ষয়ী শিল্প (Degenerate art (German: Entartete Kunst) ) শব্দটি গ্রহণ করেছিল। অ্যাডল্ফ হিটলারের একনায়কতন্ত্রের সময় the dictatorship of Adolf Hitler, আন্তর্জাতিক আধুনিক খ্যাতিমান শিল্পীদের অনেক কাজ সহ জার্মান আধুনিকতাবাদী শিল্পকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যাদুঘরগুলি থেকে সরানো হয়েছিল এবং নাৎসি জার্মানি নিষিদ্ধ করেছিল, নাজীদের কাছে “জার্মান অনুভূতির অপমান” ছিল, অ-জার্মান, ইহুদি, বা কমিউনিস্ট প্রকৃতির। অধঃপতিতবা অবক্ষয়ী শিল্পী হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, তারা কোন শিক্ষকের পদে থাকলে বরখাস্ত করা হবে, তাদের শিল্প প্রদর্শন বা বিক্রি নিষেধ এবং তারা ছবি আঁকতে পারবেনা।
দুঃখের বিষয় নাজীরা ১৯৩৩ সালে শিল্প সাহিত্যের উপর হস্তক্ষেপ করে। তারা একটা স্টাইল প্রবর্তন করে , নাম ‘রক্ত ও মাটি’das Blut und Boden (Blood and Soil) এবং কয়েক বছরের মধ্যে জার্মানীর শিল্পীদের ম্যাজিক রিয়ালিজম , সার রিয়ালিজম থেকে শুরু করে সকল শিল্প আন্দোলনকে ক্ষয়িষ্ণু শিল্প আখ্যা দিয়ে সব ছবি ভাস্কর্য, শিল্প কীর্তি পুড়িয়ে দেয় , ধ্বংস করে দেয়। বলে ডিজেনারেট আর্ট (Degenerate Art)। কিন্তু শিল্প সাহিত্য কোন রাজনৈতিক ভন্ড, মূর্খ স্তব্দ করতে পারেনা। সে নদীর প্রবাহের মত জোয়ার ভাটায় চলতেই থাকে। ভারতেও অনেক রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী ও ম্যুরাল পুলিশ আছে তারা মধ্যযুগকে আধুনিক যুগে তুলে আনতে চায়। তাদের ধিক্কার জানানো ও কড়া হাতে দমন করা দরকার। এছাড়া তারা বাক্‌স্বাধীনতা বা ফ্রীডম অব এক্সপ্রেসন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ভঙ্গ করছে ফলে তাদের জন্য কড়া শাস্তি দরকার। এমনিতেই ভারতের অর্ধেক রাজনৈতিক নেতা অর্ধশিক্ষিত, অপরাধী, অনেকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলে।

১৯৩৭ সালে, হিটলার মিউনিখের একটি প্রদর্শনীতে ছবি দেখতে যান। যখন তিনি ছবি দেখতে দেখতে তৎকালীন আধুনিক ছবির সামনে আসেন, শিল্প সমালোচকরা যেগুলি প্রশংসা করেছিল; কিন্তু হিটলার সেসব ছবি দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। পা দিয়ে লাথি মেরে, হাতে টেনে ছিঁড়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। বললেন জার্মান শিল্পীদের মধ্যে নস্টামি এসেছে তাদের শায়েস্তা করা দরকার। খবর কাগজে তার ক্ষয়িষ্ণু শিল্পের ভাষণ প্রচার করা হল,” Modernism in art, Herr Hitler said at Munich Yesterday was a decadent by-product of Bolshevist Jewish corruption. There were still artists in Germany who, after four years of National Socialism, persisted in following the cult of Modernism in their paintings. These artists, he declared, should be treated as dangerous lunatics and handed over to state for sterilisation.”
হিটলার আধুনিক শিল্প পছন্দ করতেননা কিন্তু নগ্নিকার ছবি তার পছন্দের ছিল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।