।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় অনিন্দিতা ভট্টাচার্য্য

শরৎ…..

কথাটার মধ্যেই যেন একটা জাদু আছে। যদিও এর পরিচিতি বললে, সবার আগে যা মনে পড়ে তা হল বাংলার ক্যালেন্ডার-এর নামমাত্র একটি মাস। কিন্তু এই পরিচিতি ছাপিয়ে গিয়েও বাঙালীর মনে-প্রানে, প্রেমে-অপ্রেমে, ভালোবাসায়-আবেগে জড়িয়ে রয়েছে এই শরৎ।
শরৎ নামটা শুনলেই মন দুলে ওঠে এক অদ্ভুত ভালোবাসার টানে। পুলকিত হয় প্রাণ। এই শরতের আগমনে প্রকৃতিও সেজে ওঠে মোহময়ী রূপে। আকাশ-বাতাস জুড়ে শুধুই প্রেমের গন্ধ। চারিদিকে অপরূপ কাশের দোদুল্যমান ছন্দ, নীল আকাশ ভরা ভেসে যাওয়া পেজা তুলোর মত মেঘেদের সারি।
পুরো শরৎ জুড়ে এই প্রেমময়ী আবেগের ঘনঘটার একটাই কারণ, ঘরের মেয়ের বছরে মাত্র একবার বাপের বাড়ি আসার আনন্দ। তাকে আগমনের জন্যই সেজে ওঠে প্রকৃতি। পাঁচদিন ব্যাপী চলে এই উৎসব। যদিও শুরু মহালয়া থেকেই, তবু ওই অফিসিয়ালি পাঁচদিনই চলে আনন্দের সমাগম। শুধুমাত্র বাঙালির উৎসব বললে ভুল হবে। দেশে-বিদেশে সব জায়গাতেই পালিত হয় এই আনন্দের উৎসব দুর্গাপুজো। মা আসেন তার চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি। লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ।
পাঁচদিনের এই আনন্দে মেতে ওঠে বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলে। ষষ্ঠীর বোধন থেকে দশমীর বিসর্জন। নানারকম মায়ের সাজ, নানারকম তার রূপ। কোথাও ডাকের সাজ তো কোথাও লাস্যময়ী। আবার কোথাও ঘরের মেয়ে রূপে তো কোথাও দেবী চন্ডী রূপে। ভিন্ন ভিন্ন তার মণ্ডপ। সাথে অপূর্ব সুন্দর সব আলোর মেলা।
কলকাতার সর্বত্র জুড়েই গড়ে ওঠে পুজো মণ্ডপ। কোথাও থিমের পুজো তো কোথাও সাবেকিয়ানায় সেজে ওঠে দুর্গা ও তার পুজো মণ্ডপ। তাই এই পাঁচদিন ধরে বাঙালি আর যাই ভুলে যাক, প্রতিমা দর্শন অর্থাৎ আধুনিক ভাষায় যাকে বলে প্যান্ডেল হোপিং, তা কিছুতেই ভুলবে না। শুধুমাত্র সারা দিন ধরে নয় এই উৎসব চলে দিনের পুরো ২৪ঘন্টাই। এর পাশাপাশিও রয়েছে অষ্টমীর অঞ্জলি, ভোগপ্রসাদ, সন্ধি পুজো, নবমীর অঞ্জলি, আরতি, সবশেষে মন ভারাক্রান্ত করে দশমীতে মায়ের বরণ, সদবাদের সিঁদুর খেলা ও বিসর্জন। আর কানে কানে “আবার এসো মা”।
এটাই স্বাভাবিক রীতি হলেও এই বছর করোনার দাপটে তালা পড়েছে সবরকমের আনন্দেই। করোনা যেন ঠিক পায়ের বেড়ির মতোই বেঁধেছে মানুষের জীবনে। এই মহামারীর কালো ছায়া মানুষকে গৃহবন্দি করেছে।
মানুষ গৃহবন্দি হলেও মায়ের আগমন কি আর থেমে থাকে! প্রেত্যেক বছরের মত মা দুর্গা এবারেও এসেছেন তার বাপের বাড়িতে। তার আগমনের সুরে মুছে যাবে সমস্তরকম কালো ছায়া।
এসব কিছু হলেও বাঙালির এই পাঁচদিন ব্যাপী উৎসবের প্যান্ডেল হোপিং, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরা-মজা তে পড়েছে ভাটা। সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে আমরা কেউই যেতে পারি না। আর এমত অবস্থায় বাইরে ঘোরা-ফেরা বা লোক সমাগম ও উচিত নয়।
কিন্তু তাহলে… এবারের পুজোয় কি শুধুই গৃহবন্দি! কিছুই কি হবে না!
হবে না বলাটা বোধ হয় সেরম প্রযোজ্য নয়।
ঘোরা-খাওয়া না থাকলেও, মনরঞ্জন এর জিনিষ কিন্তু আরও অনেকই আছে। তার মধ্যে একটি অন্যতম হল সাহিত্য। বাঙালি হবে আর সাহিত্য থাকবে না তা হতেই পারে না।
সবাই লিখতে না পারলেও পড়তে ভালোবাসে না এরম মানুষ কমই আছে। আর বাঙালি হলে তো কথাই নেই।
তাই এই পুজোর পাঁচটা দিন না হয় এবার শুধুই সাহিত্য চলুক। ঘরে বসে সুস্থকর মনরঞ্জনের উপায়। আর যেখানে আছে Tech Touch Talk এর মত সাহিত্যের অনবদ্য ঠিকানা, সেখানে আর কি চাই..!
তাই এবছরের এই মহামারীর ছায়ার মধ্যেও মনরঞ্জনের কথা মাথায় রেখে, Tech Touch Talk আয়োজন করেছে পাঁচদিন ধরে সাহিত্যের এক বিপুল মেলা বলা ভালো Tech Touch Talk-এর শারদ সংখ্যা। একেক জন সুদক্ষ সম্পাদক-রা মিলে তৈরি করেছেন এই মেলার সাহিত্য সামগ্রী। এছাড়া তাদের সঙ্গ দিয়েছেন কয়েকজন বিশেষ উপদেষ্টা মণ্ডলী। সারাদিন ধরে অনলাইন এই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হবে ছোট-বড়, নামি-অনামি, সবরকমের লেখক ও লেখিকারদের লেখা। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, আঁকা.. কি নেই! সব মিলিয়ে গৃহবন্দির মধ্যেও মন ভালো করার সহজ উপায়।
তাই এবছরের পুজোয় মহামারী কে চোখ রাঙিয়ে, চোখ থাকুক শুধুই সব থেকে বড় সাহিত্যের অনলাইন ঠিকানা, Tech Touch Talk এর সাহিত্যের পাতায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।