• Uncategorized
  • 0

গদ্যানুশীলনে অঞ্জনা চক্রবর্তী

কথা দাও…

কথা দাও… হাতের তালুতে হাত রাখে অঞ্জু, পার্কের বেঞ্চে বসে থাকা সুপ্রিয়র হাতে ____চোখ জল ছল ছল |সেদিন ছিল সোনাঝরা সন্ধ্যা |মাধবীলতা জড়িয়ে থাকে একে অপরকে… এই মুহূর্ত যেন শেষ না হয়… কি যেন আবেশ … কি মোহময় … কত আবেগের ধারা জোৎস্নার চাঁদের আলোয় —-নিয়ন গুলো এক এক করে জ্বলে ওঠে |আবারও অস্ফুট গলায় অঞ্জু বলে… সুপ্রিয় , কথা দাও… সুপ্রিয় আস্তে আস্তে হাতটা সরিয়ে নেয়.. বলে , দেখো প্রেম ক্ষনিকের, তাকে বাঁধতে চেয়ো না |
আমরা সবাই পূর্ণতার খোঁজ করছি… তুমি আমি সবাই…. কি হবে তোমার কাছে ভরং করে মিথ্যে বলে…
কথা দিলাম … শুধুমাত্র তোমার মন রাখতে !!
তুমিও মুক্ত, আমিও মুক্ত … যা হওয়ার সময় বলবে… আমরা সবাই শুধু মাত্র স্বতন্ত্র ভালো থাকতে চাই সোনা…
শুধু এই মুহুর্তটুকু মণিকোঠায় ধরা থাক |
অঞ্জুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে |
বলে… তুমি কি আমায় ভুলে যাবে?
ঝতোমার কি খারাপ লাগছে না … সত্যি বলো ?
সুপ্রিয় বলে , হ্যাঁ , খারাপ লাগছে .. বিচ্ছেদ সবসময়ই খারাপ …
তা সেটাও মুহূর্তের খারাপ লাগা |
শূণ্যতা কখনোই শূন্য হয়ে থাকে না …
তা কিছু না কিছু দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায় ..
তখন এগুলো সমস্তই স্মৃতির পটে |
কিংবা হয়তো স্মৃতি থেকেও মুছে যাবে ….
তখন নতুন কিছু রঙে বা রূপে … তোমার ষোলো বছরের প্রথম প্রেমে পড়ার অনুভূতি মনে পড়ে কখনো?
সত্যি বলো তো…. অঞ্জু |আজ যা চরম ভালোবাসা বলে মনে হয় কাল তাই ই ভাবলে মনে হয় কত বোকামি না করেছি .. ওই মানুষ কে আবার ভালোবাসা যায় নাকি ?
তাই কোনো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকতে চাই না অঞ্জু …
শুধুমাত্র তোমার এখন ভালো লাগবে বলে …
শুধুমাত্র তুমি বলবে যে সুপ্রিয় আমায় কথা দিয়েছে ও আমায় ভুলবে না …
এই ভেবে আমি বলতে পারবো না যে তোমায় কথা দিলাম তোমায় ভুলবো না |
অঞ্জুর চোখ দিয়ে আর‌ও আর‌ও জল গড়িয়ে পড়ে… বলে ,
তবে কি তুমি ভুলে যাবে আমায়?
কিছুই কি ছিল না আমাদের… সংসার যাপন?সুপ্রিয় বলে -ছিল.. আছে.. কিন্তু অতীতে কিছুই থাকবে না… রাগ , অভিমান , ভালোবাসা , আকর্ষণ , বিরহ ব্যথা … সব মলমে পট্টি পড়বে দেখো… ঘা শুকিয়ে যাবে… হয়তো মিলিয়েও যাবে…. তুমি ব্যস্ত হয়ে পড়বে তোমার সংসার ধর্মে , ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর ঘরণী হয়ে …
এই বাংলায় অনার্স পড়া বেকার সুপ্রিয়র কথা তখন আবছা হয়ে যাবে |
আর আমি চাকরি না পেয়ে তখন কয়েকটা টিউশন করবো … সাদা পায়জামা পাঞ্জাবীতে কত রকম দাগ লেগে থাকবে…
বিষন্নতার , বেকারের হাতাশার… মা বাবার ভার মুখ, বোনের বিয়েটার চাপে তোমার মুখ হয়তো আর মনে পড়বে না অঞ্জু ,
কি প্রয়োজন তোমার হাতে হাত রেখে তোমায় মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার…
কি প্রয়োজন তোমার কাছে মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ার … কি প্রয়োজন কথা দেওয়ার!!!কেউ কথা রাখে না অঞ্জু … কেউ কথা রাখে না…..
অঞ্জু হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে… সুপ্রিয় কাছে গিয়ে আবার‌ও হাত রাখে পিঠে … ব্লাউসের খোলা অংশে আঁকি বুকি কাটে তর্জনী ছুঁয়ে…
অঞ্জু চোখের জল আস্তে আস্তে মুছে নেয় আঁচলে…
ওই আঁচলটা গিট দিয়ে রাখে… এই বিচ্ছেদক্ষণ ধরা থাক এই আঁচলে….
সুপ্রিয় মৃদু হাসে… বলে , এ গিট খুলে যাবে গো…
সাতাশে ফাল্গুন… সানাইয়ের বিসমিল্লার সুরে,
সংস্কৃত মন্ত্রপাঠে আর লোক সমাগমে |
তোমার আগামী জীবন সুখী হোক … এই প্রার্থনা করি…
না কথা দিলাম না… তোমায় মুক্ত করলাম আজ …
তুমি ভালো থেকো –ভালোবাসি তোমায় এ মুহূর্তে এটুকুই জেনো |
এবার বাড়ি যাও …আমায় বাড়ি ফিরতে হবে … আর দেখা নয় |দুজনে দুই পথ ধরে…কেউ কাউকে কথা দেয় না…..
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।