সাপ্তাহিক ধারাবাহিক ঐতিহ্যে “কলকাতার চার্চ (কোম্পানীর যুগ)” (পর্ব – ৮) – লিখেছেন অরুণিতা চন্দ্র

আগের পর্বে কলকাতায় কোম্পানির আমলে ব্যাপটিস্ট মিশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত চার্চগুলির আলোচনার পর পরবর্তী মিশনারী সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত গীর্জার আলোচনা করতে হয়। লন্ডন মিশনারী সোসাইটি দ্বারা কোম্পানী শাসিত কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত চার্চটির নাম Union Chapel। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকেই কিছু ইউরোপীয় খ্রিষ্টান প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টধর্মের বিভিন্ন শাখার মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি চার্চ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে এই উদ্দেশ্যেই তাঁরা ৪৩, লেনিন সরণীর ‘Free Masons’ গৃহে সমবেত হন। এবং সেখানেই এই চার্চটি নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে ১৩৭, লেনিন সরণী তে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান চার্চটি। প্রোটেস্টেন্ট চার্চের নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহের জন্য যে বিভিন্ন শাখা যেমন এপিসকোপালিয়ান, প্রেসবিটেরিয়ান, ব্যাপ্টিস্ট, ওয়েসলিয়ান ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ঐক্যমত জাগিয়ে খ্রিষ্টান ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য চার্চের ইউনিয়ন চ্যাপেল নামকরণ হয়েছিল।
চার্চটি নির্মাণের জন্য ফান্ড এসেছিল ইংলন্ড ও ভারতের সংগৃহীত অনুদান থেকে। প্রথম থেকেই শুধু ইউরোপীয় রা চার্চের সদস্য হওয়ায় কলকাতার অন্য চার্চদের তুলনায় ইউনিয়ন চ্যাপেল একটি পৃথক মর্যাদার অধিকারী ছিল।গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক সস্ত্রীক এই চার্চে প্রার্থনায় যোগ দিতে আসতেন। চার্চের প্রথম মিনিষ্টার ছিলেন Reverend Townley. চার্চের আরেক মিনিষ্টার Rev Boaz ভবানীপুরে লন্ডন মিশনারী সোসাইটির কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের বর্তমান খ্রিষ্টান কবরস্থানের প্রতিষ্ঠাতা ও ছিলেন তিনি। অন্য চার্চের মত ইউনিয়ন চ্যাপেল বৃহৎ শিখর সম্বলিত ছিল না। নির্মানরীতি ও ছিল খুব ই সাধারণ। চার্চের সংরক্ষিত মার্বেল স্মৃতিফলক থেকে জানা যায় Colsworthy Grant এর নাম যিনি উনিশ শতকের কলকাতায় গড়ে তুলেছিলেন Society For the Prevention of Cruelty to Animals। প্রেসিডেন্সি কলেজের এই অধ্যাপক ছিলেন একজন চিত্রকর ও যিনি ফটোগ্রাফি আবিষ্কারের পূর্বে কলকাতার বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চিত্রাঙ্কন করে ঐতিহাসিক গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছিলেন।
প্রথম থেকেই শিক্ষার প্রসার ও সমাজসেবামূলক কার্যের সাথে এই চার্চটি জড়িত ছিল। এই চার্চেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘Youngmen’s Society’ যাদের উদ্যোগে নির্মিত হয় ‘Calcutta Boy’s School’ – এর বর্তমান বিল্ডিং। এছাড়া দেশীয়দের মধ্যে শিক্ষা প্রসারে Sunday Schools, Brockway Memorial School for native women, Zenana Mission System প্রতিষ্ঠা, খালাসি ও নাবিকদের জন্য Calcutta Sailor’s Home প্রতিষ্ঠা মদ্যপান নিবারণের উদ্যোগ এই সকল সেবামূলক কার্যেই চার্চের সদস্যরা জড়িত ছিলেন। Chapel’s School এর হলটি বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারের অন্যতম উদ্যোগী Ms. Francis Brockway ‘র স্মৃতিতে নির্মিত।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।