• Uncategorized
  • 0

|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় অনিতা দে

জিত

অফিস থেকে ফিরেই শৈবালের প্রথম কাজ,
রিমির পড়াশোনা নিয়ে বসা।রিমিও প্রতিক্ষায়
থাকে বাপির জন্য।বাপি ছাড়া রিমি নিজেকে
বড় অসহায় বোধ করে।
মানদাদি একরকম জোর করে ই শৈবালকে
চা জলখাবার খাওয়ায়।
রিমি বড় ইংলিশ মিডিয়াম এ পড়ে।অনেক
পড়াশোনার চাপ।বাপির হেল্প ছাড়া ওর পড়া
তৈরি হয় না।
রিমির গোটা জগৎ টাই শৈবাল কে ঘিরে।ও
একজন সিঙ্গেল ফাদারের মেয়ে।
ঘটনার শুরু বেশ কিছু বছর আগে।শৈবাল
ভালো বাসতো রুমেলাকে কলেজ থেকে।ওদের নিবিড় ভালো বাসা দেখে ওদের বন্ধুরা
ঈর্ষা করতো।
এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় দুজনেই দুজনকে
নিজেদের কাছে সমর্পণ করেছিল।এক অদ্ভুত
আবেগে ভেসে গিয়েছিল ওরা।
পরে দুজনেই ভীষণ অপরাধ বোধে ভুগেছিল।
শৈবাল বলেছিল রুমেলাকে, ভয় পাসনা রুমি
আমি আছি সবসময় তোর পাসে।আমাদের
ভালো বাসা কখনও পাপ হতে পারে না।
রুমেলাও বাড়ি ফিরে গিয়েছিল।তার পর ওদের ফাইনাল ইয়ার এর পরীক্ষা এসে যায়।
যে যার মত প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।প্রায়
মাসদুয়েক রুমেলার সাথে কোনো যোগাযোগ করে উঠতে পারে নি।নিজের মনের মধ্যে ভীষণ তোলপাড় চলতো রুমেলার জন্য।ফোনে ও পাওয়া যেতনা রুমেলাকে।
এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে মাস ছয়েক বাদে শৈবাল জানতে পারে,রুমেলা প্রেগন্যান্ট।সমস্ত
দোষ শৈবালের উপর চাপিয়ে বন্ধুর কাছে
অনেক কান্না করেছিল।বলেছিল শৈবালের জন্য আমার কেরিয়ার শেষ হয়ে গেল।বাবা
মা আমাকে ঘরবন্দি করে রেখেছে।ফ‍্যামিলি
ডাক্তার বলেছেন আ্যবরশানে আমার জীবনের ঝুঁকি আছে। এই পাপটা ডেলিভারি
হয়ে গেলে, আমাকে আমার দাদার কাছে বিদেশে পাঠিয়ে দেবে।ওখানে নতুন করে আমি
নিজের মত বাঁচার সুযোগ পাবো।
ওর বন্ধু বলেছিল, তুই শৈবালকে সবটা জানাচ্ছিস না কেন?
রুমেলা বলেছিল, জানিয়ে কি হবে?
ও কি সাবলম্বী? ছাপোসা পরিবারের ছেলে।
ওর থেকে আমি কিবা পেতে পারি? আমি
শৈবালের মুখ ও দেখতে চাই না।
সব শুনে ওদের বন্ধু বলেছিল এই বাচ্ছাটার
কি হবে রে? ওর তো কোনো দোষ নেই বল।
রুমেলা বলেছিল, বাবা হলি চাইল্ড কেয়ার এ
কথা বলে রেখেছে।মোটা ডোনেশন দিয়ে দেবে। ওরাই ওই বাচ্ছাটার ভালো ভাবে দেখভাল করবে।
রুমেলার বন্ধু শৈবালের সাথে দেখা করে সবটুকু জানিয়েছিল।শৈবাল স্তম্ভিত হয়েছিল।
বেশ কিছুক্ষণ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে
পারছিল না।
তবে বিহ্বলতা কাটিয়ে নিজের চোয়াল শক্ত
করে,নিজের সিদ্ধান্ত এ অটল ছিল।
রুমেলার বন্ধুর সাহায্যে রুমেলার সব খবর রাখতো।নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্ছাটার স্হান হয়েছিল হলি চাইল্ড কেয়ারে।
শৈবাল ততদিনে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে দু
পয়সা রোজগার করতে শিখেছে।
নিজের পরিকল্পনা মত নিজের সন্তান কে দত্তক নিয়েছে ফাদারের কাছ থেকে।সেই
বাচ্ছাটাই আজকের রিমি।
শৈবাল নিজের সমস্ত টুকু উজাড় করে রিমিকে
বড় করার কাজে ব্রতী হয়েছে।
বন্ধুরা বলে এটা শৈবালের জিত।ও কাপুরুষ
নয়।ও একজন দায়িত্ববান বাবা, এটা ও
প্রমাণ করে দিয়েছে।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।