গুচ্ছকবিতায় অঞ্জলি দে নন্দী, মম

নিরামিষে শনিবার রাতে

লুচি, কুমড়োর ছক্কা,
আলুরদম,
বেগুন ভাজা আর
ছোলার ডাল।
গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত – ছয় কাল।
আহা এ হল প্রিয় আহার!
টরে টয় টক্কা!
গুণগান যত করি তত হয় কম।
বাঙালী যে দেশেই থাক না কেন –
এ ভোজ কিছুতেই ভুলতে পারে না যেন!
কম্বিনেশন এ হেন –
জগৎ সেরা মেনু!
শনিবার রাতে
নিরামিষ পদ পড়ে পাতে।
ছুরি, কাঁটা, চামচ নয়, খায় নিজ হাতে।
পরম তৃপ্তি তো তাতে।
পেট খুশ, খুশ দিল।
খেয়ে হাসে নিমন্ত্রিত – খিলখিলখিল।
খাদ্য রসিকদের চির খাদ্য-মিল;
ভোজনে নাই কোনও জাত, কুল, শীল।
আমিও ঐ পেটুকদের দলে।
ডিনারটা জব্বর না হলে কী চলে?
আমি বড় শান্তি পাই যখন খাই, ডাইনিং হলে।
যেন স্বর্গ নেমে আসে আমার এ ধরাতলে।

আমার খামখেয়ালি ছন্দ

হ্যাঁ গো হ্যাঁ! আমি।
আমি হোলাম প্রবর্তিকা –
‘খামখেয়ালি ছন্দ’ – এর।
বাংলা সাহিত্য – এর
এ এক
আলোক বর্তিকা।
আমার ক্ষ্যপামি
আমায় বলে –
…….লেখ লেখ……
আরও আরও লেখ!
……লিখি তাই আমি।
……না থামি।
ছন্দ চলে
আপন খেয়ালে।
ভরে সৃষ্টির ফেসবুকের দেওয়ালে।
জানে তা আগামী –
খামখেয়ালি ছন্দ হবে নামি।
বেজায় দামী।
নিজ অনন্ত বলে।
আর ধরা বলবে –
হে অঞ্জলি!
তোমার খামখেয়ালি ছন্দ
ফুল স্পিডে চলবে।
কেউ করবে না কোনোই দ্বন্দ।
আমার নব ছন্দাঞ্জলি
গৃহীত হবে সকলের সৃষ্টিতে।
আমি সিক্ত হব আনন্দাশ্রু বৃষ্টিতে।
চির অমর কৃষ্টিতে
আমার জন্ম হবে সফল।
আমার কর্মেই আমি রব চির সচল।

নির্ভয়া মাতৃত্বের দায়িত্বে

আমার ব্যালকনিতে অনেক টাব।
হরেকরকম গাছ।
ওরা আমার সঙ্গী।
আমি ভালোবাসি ওদের নানান অঙ্গভঙ্গি।
ওরা আমার সঙ্গে করে লাভ।
পবন ওদের সঙ্গে করে নাচ।
আলোর সঙ্গে ওদের খুব ভাব।
জল ঢালতে গিয়ে গাছে,
হঠাৎ একদিন দেখি –
অবাক কান্ড, এ কী!
আমার তুলসীর গোড়ায়
পায়রা এক থেবরে বসে আছে।
চেষ্টা করলুম ওকে তাড়াবার।
করতালি বাজালাম দাঁড়িয়ে কাছে।
সাধ্য কার ওকে ওড়ায়?
বৃথা চেষ্টা বার বার।
এতটুকু নাই ওর ভয়।
ভয়কে ও করেছে জয়।
কিন্তু কি জন্য?
আমি ভাবতে থাকি।
তবে আমায় ঝাপটা মারার জন্য
ডানা দুটি বারে বারে বারে নড়ায়।
তখন ফাঁক দিয়ে দেখি,
পেটের নিচে তিনটি আন্ডা রাখা আছে।
তা দিচ্ছে ও সে
তার ওপরে বসে বসে বসে।
সত্যই মা তুমি অনন্যা।
চির ধন্যা।
বংশধর রক্ষায় তুমি ব্রতী।
আপন জীবনের মূল্য নাই তোমার কাছে।
মা – ই তো একমাত্র পারে রাখতে ধরে
ধরায় প্রাণের চিরগতি।
সত্যই কি আছে
আর কোনো দেবী অন্য
পৃথিবীর এই মাতৃ জাতির ওপরে?
ইয়েস, জন্মদাত্রী মাতাই অগ্রগণ্য।
পরম সাচ এ।
কেবল মা পারে এগিয়ে নিয়ে যেতে,
ভবিষ্যতকে, আগামীকে, পরকে।
সন্তান পালন কর্মে মা ই থাকে মেতে।
এর জন্য
মায়ের দিল ধরকে।
মায়ের চেয়ে বেশি শক্তি কার আছে?
জীবন উত্তর যাচে
এই জগতের কাছে।

ভোরের পাখি – মা কী?

ভোরের পাখি
জাগায় ডাকি।
জানি সে আমার মা কী?
যে তার মৃত্যুর আগে
এভাবেই আমাকে করত ডাকাডাকি।
আজও সেই সে ভোরে
আমার নিদ্রা আঁখি জাগে।
মনে হয় মা যেন হয়ে পাখি
করছে ডাকাডাকি –
“অঞ্জু! ওঠ! ভোর হয়ে গেছে।
যে সবিতাকে ডেকে ওঠায়
সে দীর্ঘজীবী হয়।
আর সবিতা যাকে ডেকে ওঠায়,
তার অসুখ সাথী হয়।”
মা চির তরে চলে গেছে।
তবুও ঘুমের ঘোরে
পাখি ডাকা ভোরে
আমি শুনি আজও তার ডাক।
সে যত দূরেই যাক,
তবুও আছে আমার দুনয়নে।
দেখি জাগরণে, শয়নে।
আজও আয়নার সামনে দাঁড়াই যখন,
নিজের প্রতিচ্ছবিতে তাকেই দেখি।
ভাবি তখন –
আমাকে দেখতে একদম মায়ের মত।
আয়না তো আর দেখায় না নকল-মেকী।
চির সৎ ও।
তাই আপনার মাঝে দেখতে মাকে
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি সারাক্ষণ।
নিজের মাঝে মাকে দেখে ভরে না মন।
মা – ই তো মৃত্যুর পরেও অদৃশ্য টানে
সন্তানকে সুখে রাখে।
মায়ের স্নেহের হয় কী আর কোনও মানে?
মা তো শুধু জানে
আপন সন্তানে।

 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।