ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় A.F.M Shebgatulla (পর্ব – ৬)

সাবির সুবীর আর মাতলা নদী

পর্ব – ৬

আমঝাড়া গ্রামে ওদের আত্মীয়র বন্ধুর ফিসারিতে এদিক ওদিক ওরা শালতি নিয়ে প্রায় ফিশারির মাঝখানে চলে গেলো। বিস্তীর্ণ ফিশারি, এক দিকে অন্য লোকের মালিকানাধীন ওপর ফিশারি, একপাশে বয়ে চলেছে নদী, আর এক পাশে ধানক্ষেত, আর উপরে আকাশ! আকাশের রং পড়েছে ফিসারির জলে মিশে যেনো একাকার হয়েগেছে। প্রতাপাদিত্যের দুর্গ খুঁজতে এসে ওরা যে এমন প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবে আগে কেউ ভাবতেই পারেনি। তবে ওরা আবার ফিশারিতে আসবে বলে সবাই মনস্থির করলো। আর স্থির করলো একটা সারা দিন ওখানেই থাকবে।
। পরে আমঝাড়ার নৌকার ঘাট টা ওরা খুঁজে পেয়েছে।যখন নৌকা , লঞ্চ আমঝাড়ায় আসতো সেই ঘাট টাই এখনও বেশ বোঝা যায় আর এই ঘটনা বেশি আগেরও নয়। আমঝাড়ার ঘাট থেকে লঞ্চের জন্য পেট্রোল ,ডিজেল ভরার ব্যবস্থা ছিল। যা অন্যান্য অনেক ঘাটেই সেই ব্যবস্থা ছিলইনা। টিংকু মামা বললো যেখানে সবচেয়ে বেশি নৌকাডুবি হতো সেখানকার নদীর এই হাল দেখে বড্ড অবাক হচ্ছি! টিংকু মামা তার ভাগ্না সাবির ও তার বন্ধু সুবীর কে বললো আমি মনে হয় বুড়ো হয়েগেছি। আমার ছোট বেলার স্মৃতি একেবারেই পুরনো পুরনো ঠেকছে রে ।
পুরনো ঘাটে নদীর পাড়ে ওরা বসে গল্পো করতে লাগলো।তোদের একটা জিনিস বলি এই আমঝাড়ার দুর্গের অবস্থানটা বোঝ। এটা এমন একটা জায়গা এখানে করতোয়া নদী, বিদ্যাধরী এখান থেকে দূরে নয় আবার মাতলা নদীও দূরে নয়। তাই সেদিনের গভীর জঙ্গলের মধ্যে এই দুর্গের অবস্থান একটা স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব আছে বৈকি। তবে তোরা কি জানিস এই প্রতাপাদিত্য মসাই কি ভাবে হিরো হয়েগেলেন?! না জানিনা ,জানালো সুবীর। তাহলে শোন, ১৫৭৬ শাল, মুঘল সম্রাট আকবর তখন বাদশাহ, তখন তিনি তার সাম্রাজ্যের পশ্চিম দিকে মেবার রাজ্যে ও পূর্ব দিকের বাংলা তে অভিযান করেন। তো সেখানের রাজারা স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিরোধ করেন। কিন্তু হিরো বনে গেলেন কে মেবারের রাজা রানা প্রতাপ ,কিন্তু বাংলার রাজা দাউদ খান কাররানি কে কেউ ত চেনে ও না। একই কাজের জন্য একজন হিরো আর একজন কে লোকজন চেনে ও না! এদিকে প্রতাপাদিত্যের বাবা ছিলেন বাংলার সুলতান দাউদ খান কাররানির কর্মচারী, রাজমহল যুদ্ধে দাউদ খান কাররানির বিপদের সময় তিনি টাকা পয়সা হাতিয়ে দক্ষিণবঙ্গে স্বাধীন ভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই পুত্র প্রতাপাদিত্য রাজ্য গড়ে তোলেন। মুঘল শক্তি যশোরে অভিযান করেন প্রতাপাদিত্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আবার হিরো বনে গেলেন প্রতাপাদিত্য কিন্তু দাউদ খান আর হিরো হতে পারলেন না! এদিকে দাউদ খানের পতনের পর শুরু হয় বারো ভূঁইয়াদের শাসন। এদের লিডার ইসা খান। ইনিও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন,প্রতাপাদিত্য সেই বারো ভূইয়ার এক ভুইয়া অথচ দেখ ইসা খান ও হিরো হতে পারলেন না, হিরো বনে গেলো শুধুই রানা প্রতাপ আর প্রতাপাদিত্য। তাই বলি যারা হিরো বানানোর বই পত্তর লেখে সে সব বই পত্তর না পড়াই ভালো। সাবির সুবীর দুজন হা করে গল্প শুনছিল। হঠাৎ তাদের যেনো সম্বিত ফিরল। ওরা বললো ‘টিংকু মামা সত্যি তুমি ইতিহাস জানো!!’
সাবির সুবীর আর টিংকু মামা ঠিক করলো ওরা আজ রাতে ফুলবাড়ীতে থাকবে। তার পর একদিন সারা দিন এই আমঝাড়ার ফিসারিতে কাটাবে। সেই মত করে ওরা ফুলবাড়ীতে ফিরে গেলো। রাতে আইটেম ছিল নারকোল দুধের পোলাও ,মাছ ভাজা, চিংড়ি ভাজা, আরো কত ভাজা ভুজি, সাথে দেশি মোরগের লাল ঝোল! টিংকু মামা সাবির সুবীর কে বললো। দেখ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গ্রামে গঞ্জে বিশেষত মুসলিম পরিবারে নারকোল দুধের পোলাও একটা বিশেষ পদ। অন্য জায়গার অনেকেই তা রাঁধতে জানেনা। আমাদের ঢাকাতেও কিচ্ছু আত্মীয় আছে। তারাও জানেনা। ওরাও অন্যান্য জায়গার মতন পোলাও তে ঘি ব্যবহার করে। সাবিরের ত মাঝে মাঝে খাওয়া হয় সুবীরের খাওয়া হয়নি এই নারকোল দুধের পোলাও। ওরা তিন জন ই খেয়ে বেশ তৃপ্তি পেলো। ঠিক হলো ওদের আত্মীয়র বন্ধুর ফিসারিতে ওরা সারাদিন সারা রাত কাটাবে। প্রয়োজনীয় খাবার দাবার ফুলবাড়ী থেকেই নিয়ে যাবে। ওরা জেনে নিয়েছিল পূর্ণিমা রাতের মায়াবী আলোয় ফিসারির জলে এক অদ্ভুত রং খেলা করে। সারাদিন সালতি তে মাছ ধরবে আর রাতের পূর্ণিমার আলোয় ফিসারির ছোট্ট কুটিরে রাত কাটানোর জন্য ওরা যেনো মুখিয়ে রয়েছে!

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।