ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় A.F.M Shebgatulla (পর্ব – ২)

সাবির সুবীর আর মাতলা নদী

পর্ব – ২

ক্যানিং রেল লাইন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম সরকারি রেললাইন। কলকাতা বন্দরের বিকল্প হিসাবে ক্যানিং বন্দর তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। ব্রিটিশদের আর একটি পরিকল্পনা ছিল, ক্যানিং বন্দর দক্ষিণ পূর্ব এসিরার সিঙ্গাপুর বন্দরকে যাতে টক্কর দিতে পারে। তাই শিয়ালদা – ক্যানিং রেল লাইনের অবতারণা । যাতে মাল গুলো যাতে কলকাতায় ভালোভাবে সাপ্লাই করা যায়! বুঝলেন মশাই, আমাদের ট্রেন চড়ার জন্য এই লাইন তৈরি হয়নি!
এখন ব্রিটিশ আমলা মহলে দুটো লবি তৈরি হয় কলকাতার সাথে ক্যানিং বা মাতলা গ্রামের সাথে খাল দিয়ে যোগ করা হবে? নাকি আস্ত রেললাইন বসানো হবে। দুই লবির মধ্যে শেষের লবিটা জিতে যায়। শুরু হলো ব্রিটিশ সরকারের প্রথম রেললাইন শিয়ালদা টু ক্যানিংয়ের রেললাইন বসানোর কাজ। আর বোম্বে টু থানের রেললাইন ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম প্রতিষ্ঠিত রেললাইন। আর এই ক্যানিংয়ের রেললাইন স্থাপন ছিল ব্রিটিশ সরকারের চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্ট। তৎকালীন ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে লাইন স্থাপন, মাঝে নদী, আর জমিও কাদা লবণাক্ত তাই চ্যালেঞ্জিং তো হবেই । এই লাইনের মধ্যে সবচেয়ে উচু স্টেশন দুটি। প্রথমটি হলো পাস দিয়ে টালি নালা বয়ে চলা গড়ে বর্তমান গড়িয়া। আর দ্বিতীয়টি হলো পিয়ালী। পিয়ালী নদীর তীরে আজও বদর পীরের মাজার দেখা যায়। তবে ঘুটিয়ারি শরীফের গাজিবাবার মাজারে যেমন বৈভব এখানে তেমনটা নয়। পিয়ালী এখন শীর্ণ কায় খালের মত। বারইপুর – ক্যানিং মেন রোডের কাছে ছয়ানি তে এই খাল আবার শেষ হয়েছে।
চম্পাহাটির পর থেকে রেললাইনের দুই পাশে বাদা শুরু| আজ থেকে কুড়ি পঁচিশ বছর আগেও অনেক ফাঁকা ফাঁকা ছিল।তবে ট্রেনের হাওয়া টা বেশ মজার। ওরা দুজন ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়া খেতে খেতে ক্যানিং যাচ্ছে। ১৯০৪ সালে এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে , যেখানে বলা আছে সুন্দরবনের এক গ্রামে এক ব্রিটিশ সাহেব বাঘ শিকার করেছিলেন। সেই গ্রামটি পিয়ালীর নিকটবর্তী। তার মানে রেললাইন চালু হবার প্রায় চল্লিশ বছর পরেও ক্যানিং – শিয়ালদা লাইনে জঙ্গল ছিল মানে বাঘের উপদ্রব ছিল। তার মানে জঙ্গলের পাশে দিয়ে ট্রেন চলতো!!
সাবির সুবীর কে বলছে ক দিন ভালই কাটবে বল। ক দিন লেখাপড়া পুরো বন্ধ, শুধু আত্মীয়দের বাড়িতে খাবো, ঘুমাবো আর ঘুরে বেড়াবো।
দেখতে দেখতে চলে এলো ক্যানিং স্টেশন! স্বয়ং বড় লাটের নামে নামাঙ্কিত এই জায়গা। ব্রিটিশরা এক কালে ট্রামলাইন স্থাপন করতে ছেয়েছিল এই ক্যানিংয়ে। শুধু তাই নয় ,ক্যানিং এক কালে কর্পোরেশন ছিল। কিন্তু কালের নিয়মে ক্যানিং এখন শুধু মাত্র মহকুমা শহর।
দুই বিচ্ছু প্রথমেই গেলো পুরকাইত মিষ্টির দোকানে রাজভোগ খেতে। পুরাতন পুরকাইত মিষ্টির দোকানটা ওরা চেনে। এখন দুই তিনটে পুরকাইত মিষ্টির দোকান হয়েছে। মিষ্টি খাওয়ার পর ওরা চলে যাবে মাতলা নদী পেরিয়ে ঠিক ওপরের গ্রামে কাঁঠালবেড়িয়ায়।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।