• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অসিত কর্মকার (পর্ব – ১৩)

যুদ্ধ যুদ্ধ

তেরো

দুপুর থেকে বেশ একটা ফুরফুরে মেজাজে আছে মানুষটা। মুকুন্দ পোদ্দারকে রাজি করাতে পেরেছে সে। ওই জমিটুকুর ব্যবস্থা মুকুন্দ পোদ্দার যেমন করেই হোক করবে। মুকুন্দ পোদ্দারের বিরুদ্ধে মানুষটার ক্ষোভ ছিল একসময়। বলেছিল, আপনার মতন চৌকোস মানুষ থাকতে কিনা এতগুলা মাইনষে জাইত খুয়াইল! মাথার উপর একটু চালা আর একটু ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা যদি কইরা দিতে পারতেন তাইলে মানুষগুলা পরকালের নরকবাস থিকা বাঁচত।
মুকুন্দ পোদ্দার মানুষটার এই অভিযোগ মেনে নিতে পারেনি। অন্ন বস্ত্র বাসস্থানহীন মানুষগুলো যে যার পরিবার রক্ষায় ব্যস্ত। কে কার ভালমন্দের খবর নেয়। আজ তার যে রমরমার কথা বলল মানুষটা সে তো তার হাল আমলের আয় উন্নতি। সেও একরকম নিঃস্ব হাতেই এপার বাংলায় পা রাখে। নিজের চেষ্টা আর সুতীক্ষ্ণ ব্যবসায়ী  বুদ্ধির জোরেই আজ সে এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। বসতির মানুষগুলোকে স্বধর্মে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব শুনে বেশ অবাক হয়েছিল সে। বলেছিল, ওসব ছাড়ুন তো গোঁসাই, যারা জাত খুইয়েছে তাদের কথা না ভেবে বরং আর যাতে কেউ না খোয়ায় সেদিকে নজর দিলে বড় কাজ হবে।
শুনে হায় হায় করে উঠেছিল মানুষটা, এ আপনে কী কইলেন, জন্ম ইস্তক যে মানুষগুলারে নিজের জাতের জাইনা আইছি এই দেশে আইয়া তাগ বেজাত হওন দেখন কি মাইনা লওন যায়? আপনেই কন?
কাতর কন্ঠে দয়াল বলেছিল, আমরা জাত খুইয়েছি পেটের দায়ে। মনের সায় তাতে ছিল না। আপনি বাজারকমিটির মাথা। ওই জমি কমিটির হাতে। আপনি চাইলেই জমিটুকু আমাদের দিতে পারেন। এই দয়াটুকু আপনাকে আমাদের করতেই হবে। গোঁসাইমানুষটা আমাদের কাছে এসে কী কষ্টটাই না পাচ্ছেন। দেখে বড় কষ্ট পাই। পাপ করছি আমরা, মহা পাপ!
কথা দিয়েছিল মুকুন্দ পোদ্দার।ওই জমিটা বসতির মানুষগুলোর জন্য ব্যবস্থা করবে সে। সেই থেকে  মানুষটার শরীর মন চনমনে হয়ে আছে। ব্যবস্থা হলে তাকে এরপর কী কী কাজ করতে হবে তা সে মনে মনে ছকে নিয়েছে। ছকতে ছকতে ওই অগস্টিন ছোকরাটার মুখটা তার মনে পড়ছিল। আর সারাক্ষণ শুধু গুনগুন করে ওই নতুন বাঁধা গানটায় সুর দেওয়ার চেষ্টা করছিল। সুর দেওয়া শেষ হলেই গানটা সে বসতির মানুষগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করে প্রথম গেয়ে শোনাবে।
যৌবনবতী কন্যা কলস কাঁখে জল ভরিতে যায়…
মনের মতো সুরারোপ হতেই মানুষটার মন নেচে ওঠে। গানটা কাউকে গেয়ে শোনাতে মন চায় তার। শ্রোতার মতামত জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার গান শোনবার জন্য কেউ কাছে নেই। সবাই ঘর সারাইয়ের কাজে ব্যস্ত। এমনকী লুকাসও।
হঠাৎই আর্তচিৎকার শুনে চমকে উঠেছিল মানুষটা। তারপরই বসতির মানুষগুলোর চেঁচামেচি আর দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। নদীর পাড়ে ভিড় জমে গেল কয়েক মুহূর্তে। মানুষটা বুঝতে পারে বড় ধরনের বিপদ কিছু একটা ঘটেছে। খানিক বাদে নদীর ধারে কান্নার রোল ওঠে। কিন্তু মানুষটা তখনও নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। পৃথিবীর আর কোনও ঘটনাই যেন তার মনে ছায়া ফেলতে পারে না।
শিগগির নদীর পাড়ে চলুন গোঁসাই। আমার ভাইকে যে সাপে কেটেছে। আপনি ছাড়া তাকে বাঁচানোর কেউ নেই। উৎকন্ঠায় শুকনো লুকাসের গলা। হাঁপাচ্ছে সে। বলল, পারুদি আপনাকে ডেকেছে গোঁসাই।
মধুর স্বপ্ন মাঝপথে ভঙ্গ হলে মানুষের মনমেজাজ যেমন বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, মানুষটার মনের অবস্থাও এখন সেরকমই। কিন্তু যেতে তাকে যে হবেই, পারু ডেকেছে যে! না গেলে তাকে এখানকার পাট চুকিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হতে পারে যেকোনও দিন। সেই ক্ষমতা পারুর হাতে এখন হয়েছে। নদীর দিকে হাঁটতে থাকে মানুষটা। আর ভাবে, এ তো এক মহা মুসিবতে পড়া গেল…!
এলোপাতাড়ি বাতাসে মশালের আলোগুলো ছিটকে ছিটকে পড়ছে। আর তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার ছায়া ভেঙ্গেচুরে ভেড়িবাঁধের গা বেয়ে নদীর দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে।
মানুষটার উদ্দেশ্যে পারু আদেশনিষ্ঠ গলায় বলল, কী গোঁসাই, অমন কাঠের সং হয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন, পিটার সাপের কামড়ে মরতে চলেছে, তা এবার দেখাও তোমার ক্ষমতা! তুমি তো শুনছি অনেক অসাধ্য সাধন করতে পার, পিটারকে বাঁচিয়ে তুলে তার একটা নমুনা দেখাও তো দেখি। তাহলে বসতির এতগুলো মানুষ তোমায় মাথায় তুলে রাখব। আর দেরি কোরো না গোঁসাই। দেখছ না পিটার কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।
বিষ ঝাড়ন মন্ত্র আমার জানা নাই পারু! অসহায় মানুষটা কোনোরকমে অস্ফুট গলায় বলল।
জানা নেই! তাহলে কী জানা আছে তোমার, বশীকরণ, অন্যের সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরানোর মন্ত্র? একরকম হুঙ্কার দিয়ে ওঠে পারু। তার চোখেমুখে রাগ ক্ষোভ আর কষ্টযণ্ত্রণার ছায়া।
পিটারের দুকষ বেয়ে গাঁজলা উঠছে। সারা বসতি আবার হাহাকার করে ওঠে।
হে প্রভু, দয়া কর, দয়া কর প্রভু। জয় মা মনসা, বাবা বিষহরি দয়া কর। তোর ছিচরণে শতকোটি বার কপাল কুটি গো মা! শেফালির ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর। হাত দুটো বুকের সামনে শুকনো পাতার মতো শুধু দোলে। গলা দিয়ে শব্দ ফোটে না আর। শুধু একটা গোঁ গোঁ আওয়াজ। চোখদুটো পোড়া সলতের মতো নিষ্প্রভ।
পারু চিৎকার করে বলতে থাকে, তুমি গোঁসাই, মিথ্যা কথা বলছ, আসলে তুমি আমাদের জাতের রুগিদের ছোঁবে না, তাই না? ছুঁলে তোমার জাত যাবে! ওরে আমার জাতের ধ্বজাধারী রে!অতই যদি তোমার জাতের গোমড় তাহলে আমাদের এই চুলোয় কেন এসে উঠেছ, শুনি? কোন ধান্দায়?  তোমায় আমি এখনও বলছি, দেখাও তোমার ক্ষমতা! চোখের সামনে মানুষ মরছে দেখেও যে জাতবেজাতের নুলো ধরে বসে থাকে তার মুখে আমি থুথু ছেটাই, থুঃ!
বলেই পারু সত্যি সত্যিই খানিকটা থুথু যেন তার বুকের গভীর থেকে উগলে তুলে মানুষটার পায়ের সামনে ছিটিয়ে দিলে তৎক্ষণাৎ মানুষটা পা দুটো সরিয়ে নিল। হাতদুটো বুকের কাছে জড়ো করে কাকুতি মিনতিভরা গলা তার, বিশ্বাস যা পারু, এই আমি আমার গলার কন্ঠি ছুঁইয়া কইতাছি, সাপের বিষঝাড়ন মন্ত্র আমার জানা নাই!
দেখে হায় হায় করে ওঠল দয়াল, দোহাই তোর পারু, এমন পূজ্যমান মানুষটাকে আর হেনস্থা করিস না। ঘোর পাপ হবে তোর, ঘোর পাপ! তারপর দয়াল মানুষটার উদ্দেশ্যে মিনতিভরা চোখে তাকাল।হাত জোড় করে বলল, ওকে আপনি ক্ষমা করে দিন গোঁসাই।
দয়াল ভাল করেই জানে, পারু কিছুতেই ভুল স্বীকার করে মানুষটার কাছে ক্ষমা চাইবে না।
বলল, আমি ওর হয়ে ক্ষমা চাইছি গোঁসাই।
ভরতগড়ের পঞ্চানন ওঝাকে পাওয়া গেল না। যতীশ ওঝাকে নিয়ে লুকাসরা যখন ফিরল তখন মাঝরাত প্রায়। সুনসান পৃথিবী। বসতির মানুষগুলো পিটারকে নিয়ে বসে আছে। থেকে থেকে দুএকটা বিলাপকথা আর অনুচ্চ কান্নার রোল ওদের মধ্যে থেকে জেগে উঠছে। যতীশ ওঝার পরনে রক্তবর্ণ ধুতি। গায়ে কালো ফতুয়া। গলায় তিন ফেরতা রুদ্রাক্ষের মালা। কপালে টকটকে লাল গোলা সিঁদুরের প্রলেপ। মাথায় সাদাপাকা আতেলা রুক্ষ চুল, ঘাড় ছাপিয়ে কাঁধ ছুঁইছুঁই। তুবড়ানো দুগাল, চোখদুটো যেন আগুনের গোলা। বিঘৎখানেক লম্বা  সাদা দাড়ি। কাঁধে ঝোলানো শত তাপ্পিমারা একটা ঝোলা। দশ আঙুলে বিভিন্ন রঙের দশটা আংটি। মাথার ওপর হাত উঁচিয়ে হুংকার দিয়ে বলে উঠল যতীশ ওঝা, জয় বাবা বিষহরি, যে বিষ ঢেলিচিস তুই সন্তানির শরীলি, হরণ করি নে যা ফির নিজির কন্ঠে!
বসতির মানুষগুলো সচকিত হয়ে যতীশ ওঝাকে পথ করে দিল। পিটারের মাথার কাছে হাঁটু গেড়ে বসল যতীশ ওঝা। এক মুঠো ধুলো মাটি থেকে খাঁমচে তুলে নিয়ে বুকের কাছে ধরে চোখ বুজে বিড়বিড় করে কী সব মন্ত্র পড়ে ধুলোতে কটা  বড় বড় ফুঁ মেরে কপালে বুকে ঠেকিয়ে মাথার ওপর ছড়িয়ে দিয়ে সে সুর করে গেয়ে উঠল,
হে মা মনসা,
তুই মোর ভরসা।
মায়ের কোল করিস না খালি,
এই অধম যতীশ ওঝা তোর দাসানুদাস, ধরি তোর পদযুগল,
আঠারো ভাটির যত নাগনাগিনী
সব আমার আজ্ঞাবন্দি,
তবুও যদি তুই না করিস দয়া
করব না তোকে আমিও ক্ষমা,
এই সন্তান তোর হবে প্রচন্ড,
দেবে তোকে সমুচিত দন্ড।
হে মা মনসা…
গান শেষ করে যতীশ ওঝা বলল, কই গো, ছাবালটার মুখির উপরি আলোটা এট্টু ধর।
ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন হাতের মশালটা এগিয়ে ধরে। পিটারের নীলাভপাথরবর্ণ শরীরটা বসতির মানুষগুলোর চোখের ওপর পরিষ্কার ফুটে ওঠল। পিটারের মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে যতীশ ওঝা গভীর নিরীক্ষায় তার শরীরে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজে। সময় তার আপন নিয়মে বয়ে যায়। প্রতিটা মুহূর্ত যেন এক একটা কালরাত্রি। বসতির সবার উৎকণ্ঠিত চোখগুলো এখন যতীশ ওঝার দিকে নিবদ্ধ। আকাশের তারারাও যেন অপেক্ষা করছে  নিদান শোনার জন্য। বাতাসও যেন ওই একই উদ্দেশ্যে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ যতীশ ওঝার মাথা দুলে ওঠে, তাতে নেতিবাচক ইঙ্গিত।কান্নারুদ্ধ গলায় বলল, এই তোর মনের সাধ ছিল মা মনসা! বাবা বিষহরি, এ তোর কেমন বিচার! দয়ালের উদ্দেশ্যে বলল, বড্ড দেরি করি ফেলিচ গো খুড়া। এই শরীলি পেরাণের হদিশ আমি কোত্তাও দেকচি নে গো। প্রাণ ফিরায়ে দেওয়ারও ক্ষেমতা আমার নি। কলার ভেলায় করি দেহ ভাসায়ে দাও। যদি অন্য কোনও ওঝার হাতে পড়ি এ ছাওয়াল বেঁচি যায় তাহলি জানবে সে আমার গুরুর গুরু, জগৎগুরুর ন্যায়  পূজ্যমান!
মুহূর্তে ফের প্রবল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল সারা বসতি।
দয়াল শেফালির কাঁধে হাত রাখল।কান্নাজড়ানো গলায় বলল, কেঁদে আর কী করবি মা, বিধাতার লিখন না যায় খন্ডন। প্রভু আমাদের এমনই চেয়েছিলেন। মেনে না নেওয়া ছাড়া উপায় কী বল। যদি প্রভুর দয়া হয়, মা মনসা মুখ তুলে চায়, তাহলে দেখবি এ ছেলেই তোর কোলে ঠিক ফিরে আসবে। প্রভুকে ডাক মা, তাই যেন হয়। মা মনসার কাছে মানত মান মা। বাবা বিষহরি যেন তোকে করুণা করে।
এখনও ভোরের আলো ফোটেনি ভাল করে। দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা মিহি ঠান্ডা বাতাসে শোকের ছায়া। ফুল, চন্দন আর মালায় সাজিয়ে পিটারকে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হল। বেজে উঠল খোলকর্তাল, ঢাকঢোল। সেইসঙ্গে প্রভু যীশু, মা মনসা আর বাবা বিষহরির নামে জয়ধ্বনি। সুতির সাদা মশারির ভিতর সাদা থান কাপড়ে মোড়ানো পিটারের দেহটা ছোট ছোট ঢেউয়ে দোল খেতে খেতে দূর থেকে আরও দূরে ভেসে যাচ্ছে। যতই দূরে ভেসে যাচ্ছে ততই বসতির এতগুলো মানুষের সমবেত কান্নার ধ্বনি প্রলম্বিত হয়ে চরাচর ঢেকে দিচ্ছে। ওদিকে পুবাকাশের লালচে আভা ভেদ করে দিনের সূর্য উঁকি দিচ্ছে।
এতক্ষণ মানুষটা যত ছোঁয়া বাঁচিয়ে বসতির মানুষগুলোর সঙ্গেই ছিল। সব দেখে শুনে মানুষটার মনে আশার আলো উঁকি দেয়, বসতির মানুষগুলো তাহলে এখনও একেবারে ম্লেচ্ছ হয়ে যায়নি! হিন্দুদের আচার আচরণ সবই তো পালন করল। প্রভু যীশুর সঙ্গে মা মনসাকে স্মরণ করল। বাবা বিষহরির নামে জয়ধ্বনিও দিল। তারমানে মানুষগুলোর মনের সংগোপনে ফেলে আসা ধর্মের প্রতি এখনও শ্রদ্ধা ভক্তি রয়েছে। এদের ঘরের বউরা শাঁখাসিঁদুর পরে। তুলসিমঞ্চের পরিবর্তে প্রভু যীশুর মূর্তির সামনে সন্ধ্যারতি দেয়। সেদিন দয়াল বলছিল, প্রতিবছর শীতে তারা অষ্টপ্রহর প্রভুর অখন্ড নামসংকীর্তনের ব্যবস্থা করে। প্রভু যীশুর ফটো মালাচন্দনে সাজায়, খোলকর্তাল বাজিয়ে তাঁর নামকীর্তন করে। হরে কৃষ্ণ, হরে রামের পরিবর্তে জয় যীশু খ্রীষ্ট, জয় যীশু খ্রীষ্ট  বলে নামগান করে। গান গায়, ভব পারে যাবে যদি পারের সম্বল করে নাও, জয় যীশু খ্রীষ্ট, জয় যীশু খ্রীষ্ট…। দুর্গাপুজোয় সেজেগুজে ঠাকুর দেখতে বার হয়। আনন্দে মাতে। বিসর্জনে চোখের জল ফেলে।
এসব নিয়ে মানুষটা যতই ভাবে ততই আশান্বিত হয়ে ওঠে। মনে বল পায়।
পরিষ্কার আকাশে সূর্যটা আপন মহিমায় ফুটে উঠেছে। কিন্তু বসতির শোকের ছায়া তাতে তো আর মুছে যায়নি। সে ছায়া আরও গভীর কালো হয়ে জমাট দুঃখশোকের জন্ম নিচ্ছে ওদের বুকে। ঘরে ঘরে উনুন জ্বলেনি। পুরুষরা কাজে বার হয়নি। সবাই মিলে গীর্জায় গেছে প্রার্থনা জানাতে, প্রভু যেন তাদের পিটারকে ফিরিয়ে দেয়।
স্নানে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে মানুষটা। একবার মুকুন্দ পোদ্দারের কাছে যাবে সে। শুভ কাজ ফেলে রাখা ঠিক না। মানুষটার এটাই স্বস্তি যে, খোলা আকাশের নীচে তাকে আর বেশি দিন কাটাতে হবে না। গামছাটা কাঁধে ফেলার পরই তার মনে পড়ল, সে স্নানে গেলে তার জিনিসপত্রগুলো পাহারা দেবে কে? কেউ যদি কিছু চুরি করে নিয়ে যায় কিংবা খানা থেকে ওই জানোয়ারগুলো উঠে এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয়! কাউকে দেখভালের জন্য পেলে হত। কেউ নেই। সবাই যে গির্জায় গেছে।
মানুষটা ওদের গীর্জা থেকে ফেরার অপেক্ষায় বসেই থাকে।
ক্রমশ… 
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।