• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (পর্ব – ২)

দার্শনিক হেলাল ভাই – ২

এ নিয়ে আমি কয়েকজন বিখ্যাত নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছি। তারাও বিস্মিত হয়ে বসে থেকেছে। কেউ কিছু বলতে পারেনি।
তার মানে সে গানও জানে। তবে আমরা তাকে গান গাইতে অনুরোধ করলাম না। এক পাড়ায় যখন আছি, তো শোনা যাবেই।
আমরা চা খাচ্ছি। এরই মাঝে কয় কাপ খাওয়া হয়ে গেছে খেয়াল নেই। লোকটা তো আমাদের মন্ত্রমুগদ্ধ করে রেখেছে। তার সাথে কথা বলছি আর ঢকে ঢকে চা গিলছি। সে বলল: তোমরা কি সবাই কলেজে পড়ো?
আমি বললাম, আমাদের দলে কলেজের ফার্স্টইয়ার, সেকেন্ড ইয়ারই বেশি। তবে বেশ কয়েকজন ক্লাশ টেন আছে। শুধু ঐ গাব্বুটা ক্লাশ নইনে।
সে তাকাল গাব্বুর দিকে-একটু ভুরু কুঁচকে। দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণের ভাব। তারপর বলল: এতটা জুনিয়র হয়ে ও তোমাদের সাথে?
আমি বললাম: ওর আমাদের সাথে এখন সেকেন্ড ইয়ারে থাকার কথা ছিল। চার বছর ধরে নাইন থেকে টেন-এ উঠতে পারছে না।
এ কথা শোনা মাত্র সে গাব্বুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। ভীষণ অনিচ্ছা নিয়ে গাব্বু তার হাত ধরল। সে বলল: তোমার সাথে দেখছি আমার বেশ মিল…..।
গাব্বুর সাথে তার আবার কী মিল? সেও কি ক্লাশ নাইনে চার বছর ছিল? গাব্বু তখন দাঁত-মুখ খিচিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বলল: ওর সমস্যাটা কোথায়?
আসলে গাব্বুর সমস্যাটা যে কোথায় আমরা কেউ তা জানি না। ওকে তো আমাদের চেয়ে বেশিই পড়াশোনা করতে দেখি। ওর ঘরে পড়ার টেবিলের সামনে দৈনিক পড়ার একটা রুটিন টঙানো আছে। তাতে আট ঘন্টা পড়ার মধ্যে রেখেছে। সেই রুটিন অনুযায়ী ও লেখাপড়া করে। রুটিনে যখন পড়ার টাইম, তখন কিছুতেই ওকে বাইরে আনা যাবে না। ওর মেধা যে কম তাও মনে হয় না। যে কোনো কিছুই আমাদের চেয়ে আগে ধরে ফেলে। অথচ ও পাস করতে পারে না। জগতে কিছু কিছু রহস্য থাকে যার কারণ উন্মোচন করা সম্ভব হয় না। গাব্বুর পাস করতে না পারাটাও সেরকম এক রহস্য।
আমরা সবাই চুপ করে রইলাম। আমাদের কারও কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে সে সরাসরি গাব্বুকে জিজ্ঞেস করল: তোমার সমস্যটা কী? তুমি চার বছর ধরে ক্লাশ নাইন-এ আটকে আছ কেন?
: সমস্যা কিছু না।
: তাহলে পাস করতে পারছ না কেন?
: সবই তার ইচ্ছা।
: সে কে?
: ওপরওয়ালা।
: ওপরওয়ালা!
: তার ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না। তার ইচ্ছা না হলে আমি পাস করব কীভাবে?
: তোমাকে এক ক্লাশে আটকে রেখে তার কী লাভ? আর তোমাকে উঠিয়ে দিলে তার কী ক্ষতি?
: এই প্রশ্ন তো আমারও। সে তো ইচ্ছা করলে আমাকে উঠিয়ে দিতে পারে।
: শোনো, এই একবিংশ শতকে এসে এরকম চিন্তা-ভাবনা নিয়ে থাকা ঠিক না। সে তোমাকে আটকে রাখে নাই, সে তোমাকে উঠিয়েও দিবে না। বাস্তবিক তোমার কাজ তোমাকেই করতে হবে।
: তা তো জানি।
: তাহলে এরকম কথা বলো কেন?
: রুটিমাফিক দৈনিক আট ঘন্টা লেখাপড়া করে নাইন থেকে টেন-এ উঠতে পারছি না। এর একটা সূত্র তো বের করতে হবে।
: তুমি দৈনিক আট ঘন্টা লেখাপড়া করো?
: জি।
: তারপরেও তুমি টেন-এ উঠতে পারছ না?
: জি না।
: বর্তমানে তো লেখাপড়া না করেই ছেলেমেয়েরা দেদারছে (এ+) পেয়ে যাচ্ছে।
: পাচ্ছেই তো। ওরা পেয়েছে না? লেখাপড়া করেছে ঘোড়ার ডিম। জানেও না কিছু। ইংরেজি গ্রামারে এখানকার সবাইকে চ্যালেঞ্জ। ধরেন যা খুশি-ভয়েস চেঞ্জ, ন্যারেশন, ট্রান্সফরমেশন, ট্রান্সসেøশন। ধরেন…..। ওরা যদি আমার চেয়ে ভাল পারে তো আমি সারা জীবন মোজাফ্ফর ভাইয়ের চায়ের দোকানে বিনা বেতনে কর্মচারী থাকব।
এ কথা শুনেই মোজাফ্ফর ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে উঠল: দুঃখিত, আমি কোনো কর্মচারী রাখব না। সাধারণত কর্মচারীরা ফাঁকিবাজ হয়।
মোজাফ্ফরের কথাকে এড়িয়ে সে বলল: মনে হচ্ছে, তোমার ব্যাপারটা সাইকোলোজিক্যাল। ঠিক আছে, আমার সঙ্গে যখন পরিচয় হল তো আমি তোমার প্রবলেম সলভ করে দিব।
: আপনি সাইকোলোজিস্ট?
: না, আই এ্যাম এ্যা ফিলোসফার।
: ফিলোসফার! শব্দটার অর্থ তখন চট করে আমাদের মাথায় আসছিল না। গাব্বু তো ইংরেজিতে আমাদেরকে চ্যারেঞ্জ করেই বসে আছে। ও বলল, ফিলোসফার! তার মানে আপনি দার্শনিক?
: হু।
আমি ফেকুর দিকে তাকালাম। ও আগেই বলেছিল যে, তাকে দেখতে দার্শনিকের মতো লাগছে। ফেকু নিশ্চয় আগে দার্শনিক দেখেছে। জীবনের এই প্রথম দার্শনিক দেখলাম। শুধু দেখলাম না, তার সাথে কথাও বললাম। তার কান্ঠে জীবনানন্দের কবিতার আবৃত্তি শুনলাম। এখানেই শেষ নয়। সে আমাদের এলাকায় এসেছে। তার সাথে আরও অনেক কথা হবে নিশ্চয়। আমাদের ভাগ্য ভালই বলা যায়।
রান্টু বলল: আপনি কী করেন?
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোসফি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আছি আজ চার বছর।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।