• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (পর্ব – ১৯)

দার্শনিক হেলাল ভাই – ১৫

: বাবা, তোমার মেয়েকে যে প্রেমপত্র দেয় তাকে…….।
: প্রেমপত্র দেয়াটা খারাপ কিছু না, অপরাধেরও কিছু না। যে কোনো মেয়ে যে কোনো ছেলেকে, বা যে কোনো ছেলে যে কোনো মেয়েকে প্রেমপ্রস্তাব দেয়ার অধিকার রাখে। এটা একটার গণতান্ত্রিক অধিকার। প্রস্তাব রাখা না রাখা প্রস্তার প্রাপকের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
: তাই বলে……।
: শোন, হেলালের বয়সে আমি তোর মাকে মোট তেরানব্বইটা পত্র লিখেছিলাম। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট পত্রটা ছিল চার পৃষ্ঠা, আর সবচেয়ে বড়টা ছিল ছিয়াত্তুর পৃষ্ঠা। প্রেমপত্র লেখাও একটা আর্টের ব্যাপার। শিল্প-সাহিত্য জ্ঞান না থাকলে সত্যিকারে প্রেমপত্র লেখা যায় না। বর্তমানের ছেলেমেয়েরা তো………।
: বর্তমানের ছেলেমেয়েরা কী?
: পরীক্ষায় বসলে ৮০% নম্বর। মগজ থেকে এক পৃষ্ঠা লিখতে পারবে কি না সন্দেহ। তারপর শোন, সেই ছিয়াত্তুর পৃষ্ঠার প্রেমপত্রটা তোর নানার কাছে ধরা খেয়ে গেল। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন নাই যে, এটা তার মেয়েকে লেখা প্রেমপত্র। তিনি মনে করেছিলেন, কোনো উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি। আচ্ছা, তোর প্রেমপত্রটা নিয়ে আয় তো দেখি।
: সেটাকে কুটিকুটি করে…..।
: কাজটা মোটেও ঠিক করিসনি। জীবনের প্রথম প্রেমপত্র। স্মৃতি হিসেবে রেখে দেয়া উচিত ছিল।
: ধ্যাত্তারি!
: ওয়েট ওয়েট……।
তারপর বাবা একটা পত্রিকা টেনে নিয়ে পড়তে লাগলেন: “প্রিয়তম ফ্রাউলি বাউয়ার, … আপনার চিঠি আজ মেঘের বুক চিরে আমার ওপর পুষ্পবৃষ্টির মতাে ঝরছে। এ হলো সেই চিঠি যেই চিঠির জন্যে আমি অধীর আগ্রহ, উদ্বেগ আর উত্কণ্ঠা নিয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছি।”
এটুকু পড়ে বললেন: দেখেছিস, কী আবগেতপ্ত হৃদয়ের গহনলােক থকেে উঠে আসা ভাষা! কে লিখেছে এই চিঠি? প্রাপক যিনি তার নামতাে চিঠির শুরুতেই উর্ত্কীণ হয়ে আছে। কিন্তু প্রেরকের সুলুকসন্ধান করলে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। বিশ শতকের মহান লেখক তিনি, আধুনিক কথাসাহিত্যের কিংবদন্তি পুরুষ ফ্রান্ত্স কাফকা। কাফকার প্রেমানুভব যে কতটা গভীর ছিল,এই চঠিরি উল্লিখিত ছত্রগুলােতে শুধু নয়,একাধিক প্রেমিকাকে লেখা চিঠির পর চিঠিতে এর নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। নোবেল জয়ী একশ’ সাহিত্যিকের মধ্যে বত্রিশজনই স্বীকার করেছেন, তাঁরা সরাসরি কাফকার দ্বারা প্রভাবিত। প্রেমপত্র লেখা বিরাট এক যোগ্যতা। প্রেমপত্র লিখতে গেলে ভাষাজ্ঞান এবং সাহিত্যজ্ঞান উভয়ই থাকতে হয়।
শিলা আপা অনেকটা নরম হয়। আর কিছু বলে না। ফেকুও রক্ষা পায়।
এবার গাব্বুর সমস্যার কথা বলি।
গাব্বুদের বাড়িওয়ালার মেয়ে তনিমা। ক্লাশ নাইনে পড়ে। সুন্দরী। চটপটে। কথা বলে বেশি।
বাড়িওয়ালা থাকে দোতালায়। আর গাব্বুরা থাকে তেতলায়।
তো ওঠা-নামার সময় প্রায়ই তনিমার সাথে গাব্বুর দেখা হয়ে যায়। দেখা হলেই তনিমা বলে: এই শোন, হেলাল ভাই নাকি পাড়ার সব মেয়েকে লাভ লেটার দিছে? আমার লেটার কই?
: তুমি এর মধ্যে নাই।
: আমি এর মধ্যে নাই মানে? আমি কি এ পাড়ার মেয়ে না? আমি কি দেখতে অসুন্দর? আমার বাবার পাঁচতলা বাড়ি।
: তুমি বেশি কথা বলো।
: বেশি কথা কী বললাম? সবাইকে……..।
: শোন, নাইন-এর মেয়েদেরকে এর মধ্যে ধরা হয় নাই।
: নাইন ধরা হবে না কেন? এটা কেমন কথা? পুরাই অগণতান্ত্রিক।
: পিচ্চি মেয়েরা বাদ।
: পিচ্চি মেয়ে! আমাদের অনেক মেয়ের রিলেশন আছে। জানো তুমি? তারা তাদের বিএফদের সাথে ঘুরতে যায়।
: তোমাদের ক্লাশের মেয়েরা কী করে সেটা চিন্তা করে হেলাল ভাই কাজ করে না।
: তুমিও তো নাইনে পড়ো। তুমি যে ইন্টারের এক মেয়ের পেছনে……..।
: আমি চার বছর ধরে নাইনে আছি, তুমি কি তা জানো না? আমার এবার এইচ.এস.সি দেবার কথা। তুমি আমাকে ‘আপনি’ করে বলবা।
: ইশ! আমার ক্লাশে পড়ে আবার ‘আপনি’ করে……। শোন, তুমি আমার চিঠি গায়েব করে দিছো। আমি বুঝতে পেরেছি। আই এ্যাম সিওর।
: তুমি থাকো তোমার সিওর নিয়া।
: তুমি হেলাল ভাইকে দিয়ে আরেকটা চিঠি লিখে এনে আমাকে দিবে।
: দয়াকরে এসব ব্যাপারে আর আমার সাথে কথা বলবে না।
: বলব না মানে? একশ’বার বলব। হাজার বার বলব। আমার চিঠি যতক্ষণ না পাব, ততক্ষণ বলতেই থাকব। বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে ফেলব। তুমি এক মেয়ের পেছনে ঘুরঘুর করো, আবার আমার চিঠি গয়েব করো, ব্যাপারটা কী? তোমার অন্য কোনো ধান্ধা আছে নাকি?
গাব্বু মেজাজ খুব খারাপ হয়। কিন্তু কড়াভাবে তনিমাকে কিছু বলতেও পারে না। শত হলেও বাড়িওয়ালার মেয়ে।
শেষে গাব্বু সচেতনভাবে তনিমাকে এড়িয়ে যেতে থাকে।
ওপর থেকে নামার সময় উঁকি দিয়ে দেখে নেয়, তনিমাদের দরজা খোলা কি না। আবার নিচ থেকে ওপরে ওঠার সময়ও দেখে নেয়। তনিমাদের দরজা খোলা থাকলে সে ওঠা-নামা করে না।
আর দরজা বন্ধ থাকলেও তনিমাদের দরজার সামনে গিয়ে এমনভাবে পা ফেলে যেন বিড়াল ইঁদুরের পেছনে যাচ্ছে।
তারপরেও কি রক্ষা হয়? কখনো না কখনো দেখা হয়ে যায়ই।
একদিন তনিমা দরজা খুলেই বলে: তাই তো বলি, তোমার সাড়া-শব্দ নাই কেন? অমন বেড়ালের মতো পা টিপে চলো কেন? আমার ভয়ে? ধরা তো খেয়ে গেলে। আমার চিঠির খবর কী?
: তুমি এই চিঠির কথা এখনও ভুলো নাই?
: সারা জীবনেরও ভুলবো না। পাড়ার সব মেয়ে চিঠি পাবে, আর আমি পাব না। প্রেস্টিজ ইস্যুর ব্যাপার।
: তোমার প্রেস্টিজ রক্ষা করার সামর্থ্য আমার নাই। হেলাল ভাই তোমাকে কোনো চিঠি দিবে না। দয়া করে এই ব্যাপারটা তুমি ভুলে যাও।
: আমাকে চিঠি না দেয়ার কোনোই কারণ দেখি না।
: ইউ আর আন্ডার এজ।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।