।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় অনিরুদ্ধ রায়

 কঠিন মায়া

ঐ যে শোনা যায় রেডিওতে বাজে
বহু প্রতীক্ষিত মহালয়ার সুর ~ আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর…
যা এনে দেয় আমাদের মনে
শারদীয়ার সুরভী মাখা মন মাতানো আমেজ।
পুজো আসে, ঘরে ঘরে লাগে নতুনের ছোঁয়া।
অপার অপার্থিব আনন্দে ছেয়ে যায়
শরতের নীল আকাশ।
সবার গায়ে থাকে নতুন জামা নতুন কাপড়;
ভুলে গিয়ে সব ভেদাভেদ
সমাজের একতারা তে লাগে ঐকতানের সুর।
কিন্তু এই একতার মাঝে কোথা থেকে যেন উঁকি দেয় একাকীত্বের মুখ।
পাড়ার শেষ মাথার ঐ যে বস্তিটা-
ওখানে বসে আছে একটা ছোট্ট ছেলে।
তাকে কেউ সাথে নেয় না!
কারণ তার নতুন জামা এখনো যে হয়নি!
বয়সটা তার মোটে পাঁচ কি ছয়।
মা তাকে চাপা গলায় বোঝায়~
বাবা যখন ফিরবে নতুন জামা নিয়ে
তখন তুই বেরোস খোকা, ঠাকুর দেখিস
আর একটু সবুর কর…….
খোকা যখন মাকে শুধোয়, মা বাবা এখনও আসছে না কেন?
তখন খোকাকে কি বলবে মা?
বুক চাপা যন্ত্রনার অসীম অপেক্ষা…
আর খোকার চাহনি ঐ দূরের পথে অজানার দিগন্তে…
কখন তার বাবা এসে বলবে~
আয় খোকা দেখ নতুন জামা এনেছি।
কিন্তু পাঁচ বছরের খোকার ঐ চেয়ে থাকা
সময়ের পথে বোবা মাইলস্টোন হয়ে থেকে যাবে,
যে মাইলস্টোনে লেখা থাকবে না
জীবন পথের দূরত্ব!
যে দূরত্ব পেরিয়ে ফিরবে না খোকার বাবা ;
আনবে না নতুন জামা।
খোকার ঐ আশা ভরা দুচোখ জানবেনা
তার পরিযায়ী বাবার যাত্রার কথা,
– শুরু হয়েছিল একদিন,
কিন্তু “পথের ক্লান্তি” তাকে ক্ষমা করেনি।
প্রতিবার পুজো আসবে পুজো যাবে
খোলা পড়ে রইবে শুধু
খোকার দুটি চোখ
ব্যর্থ আশার কঠিন মায়ায়।।

বন্ধুত্ব

বন্ধুত্ব গড়ে বন্ধুত্ব ভাঙে
ভাঙে না শুধু বন্ধুত্বের ভালোবাসা।
পৃথিবী ঘুরে চলে আপন ছন্দে।
সময় বয়ে যায় আনন্দে।
আনন্দে কিবা দুঃখে।
বন্ধুর মুখ তবু ঝিলিক মারে
ঐ ভালোবাসা রূপী আয়নাতে
যে আয়নাতে সে দেখেছিলো তার মুখ।
দেখিয়েছিল আমায়।
সে এখন যাযাবর।
ভালোবাসার চোরাবালি উপহার দিয়েছিল সে
আমার জন্মদিনে।
ডুব দিয়েছিলাম, কিন্তু সাঁতার জানতাম না।
আজ আমি তৃষিত হৃদয়ের চাতক পাখি।
ভিক্ষা করি ভালোবাসার,
রাস্তার ধারে নয় কিম্বা নয় কোনো ট্রাম লাইনে;
ভালোবাসা নাকি আজ ভাইরাস।
ছড়িয়ে আছে এদিকে ওদিকে।
তাও বন্ধু ছিল বন্ধু আছে বন্ধু থাকবে।
থাকবেনা শুধু সে
যাকে হৃদয়ে জায়গা দেবে বলে তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।