Cafe কলামে – আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব – ২৩)

বিবাহঃ নারী পুরুষের যৌনমিলনের অনুমতি?-১৫ 

Contract marriages বা চুক্তিবদ্ধ বিয়ে

আজকে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে জীবন খুব দ্রুত। কলকারখানা, যন্ত্র, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ভারচুয়াল জগত, এসব জীবনকে সামনের দিকে যেন বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা তোইরি হয়েছে কে কত জীবনকে নিঙড়ে সুখ ও মজা লুটবে। এরকম একটা সময়ে স্নেহ, ভালবাসা, মায়া -মমতা, শ্রদ্ধা , প্রেম, অনুরাগ, অভিমান সব দ্রুত জীবনের গাড়ির তলায় চাপা পড়ে গেছে, কেউ আর খোঁজ রাখছেনা। বড় বড় যৌথ পরিবারগুলি অনেককাল আগেই স্বার্থের তরবারিতে খন্ড খন্ড, এখন যে ছোট পরিবার গুলি আছে তাও ঘন ঘন ভাঙ্গছে।কারন নারী পুরুষ সবাই বলছে তাদের প্রত্যেকের জীবন পূরণ করতে হবে। ফলে ব্যক্তি চিন্তা ও স্বার্থ অধিক পছন্দ আকর্ষণ করছে। দাবি করছে। নরনারীর বিয়ের বন্ধন মহিলারা ভাল চোখে দেখছেনা। তারা বলছে বিয়ে হল পিতৃতান্ত্রিক সমাজের একটা কৌশল, যেখানে মহিলাদের পুরুষের অধীনে বন্দী করে রাখা হয়।
এখানে বলে রাখা ভাল,সভ্যতার নামে অধিকাংশ অসভ্যতা আমরা পশ্চিমী সংস্কৃতির থেকে নিয়েছি।আমেরিকা হল এপিক সেন্টার, যেখানে থেকে যত অপসংস্কৃতি, শিক্ষিত বাকী পৃথিবী নকল করে। ইউরোপের সংস্কৃতির মধ্যে একটা সুস্থ ও ভাবনাচিন্তার খোরাক পাওয়া যায়। কিন্তু আমেরিকার বহু কালচার, সাব-কালচার যার কোন সামাজিক অপকার ছাড়া উপকার নেই। আপনি হিপি কালচার বলুন আর জিনস কালচার বলুন, বা সমকামী কালচার বলুন সবই আমেরিকা থেকে আমদানী।
আফ্রিকা, অস্ট্রলিয়া ও এশিয়ার লোকগুলি সবাই, আমেরিকার জীবন যাপন, ওয়ার্ক কালচার, সম্পর্ক প্রেম, পরিবার ইত্যাদি সবকিছুই নকল করে।নকল করে কুৎসিত জিনিসগুলি, কিন্তু বীরত্ব ফলায় যেন বিশাল কোন কাজ করেছে।
Courtesy:Commodification of woman by Mehmet Fırat Boğatekin/slideshare
মেয়েরা যখন শুনল, তাদের জীবনের দাম বানাতে হবে, অর্থাৎ তারা কারো হুকুমের দাস হবেনা, সেই মুহুর্তেই বিয়ে ভেঙ্গে গেল। সন্তানরা ছোট থাকলে তাদের মানসিক ভয় ভীতি বা নানা চাপ পড়ে। আমি এখানে এটা বলছিনা যে মেয়েরা তাদের নিজের জীবনকে উন্নতি করবেনা। কথা হল, কি উন্নতি করবে? আর্থিক? স্বেচ্ছাচারীতা?
পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় ডিঙ্গিয়ে এসে কি সুখী? আয়েস পেয়েছে? স্বাধীন হয়েছে?
হ্যাঁ,চেষ্টা করতে অসুবিধা কি?
উলটো দিকে একটা ছেলে যখন বিয়ে করে, তার জীবনের সখ বা প্যাশন যা ছিল তা ত্যাগ করেনা তার বৌকে খাওয়ানো পরানোর দায়িত্ব মাথায় নিয়ে?
মাথাতে একটা কুবুদ্ধি ঢোকানো সহজ, ভাল বুদ্ধি মানুষ ভাল মনে নেয়না। ফলে, এখন বিয়ে অধিকাংশ শহরের জীবনে দেখা যায় টিকছেনা। বা যদিও আপস করা গেল,জীবন মনে হয় তখন নরক যন্ত্রণা। এইসব কারণে, অনেকেই চুক্তিবদ্ধ বিয়ের কথা ভাবছে।
একটা সময় ছিল, মানুষ, গুরুজনদের বাক্য ভুল হলেও সম্মান করত। এখন সেই দিন নেই। ইতিহাস বলে প্রতিটা মানুষ তার পরিচিত হিসাবে, তার জাত, গোত্র, গোষ্ঠি, ধর্ম, আচার ইত্যাদি ব্যবহার করে। এই ব্যবহার খুব প্রাচীন। বিয়ে একটা সময় পশ্চিমী মতে ধর্মীয় স্বীকৃতি থেকে চালু হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে নানা মতে বিয়ে হয়। হিন্দু ধর্ম, মুসলিম(ইসলাম) মতে, বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান – এছাড়া ও আরো নানা ধর্ম আছে সেই মতে আচার অনুষ্ঠান সহ বিয়ে সম্পন্ন হয়।
এই ধর্মগুলি কোনটাই নারীকে পুরুষের উপর প্রভূত্ব করার অধিকার দেয়না। নারীর স্থান তার ঘরের পুরুষের অধীন বা ঈশ্বরেওর বিশ্বাস যাদের আছে তারা বলে ঈশ্বরের অধীন।
নারী কখনো নেতৃত্ব দেবার মতো কাজ ইতিহাসে বা বিবর্তনের সময়রেখায় রাখেনি। পশুপাখী জগতেও অধিকাংশ পুরুষ প্রধান। আমাদের মানব সভ্যতা, হাজার দশেক বছর আগে রাস্ট্র দেশ, ইত্যাদির অধীনে ছিলনা। ছোট ছোট দলবদ্ধ শিকারী মানুষ ছিল, তাতে পুরুষরাই শিকারী ও নেতৃত্ব দিত। সেইভাবেই আজ অব্ধি চলে এসেছে। এর মধ্য কোন ষড়যন্ত্র রাস্ট্রের বিরুদ্ধে অন্য রাস্ট্র যেমন করে তেমন পুরুষ নারীর বিরুদ্ধে করেনি।পুরুষ নারী সহ সমস্ত কিছুই তার ক্ষমতা বলে বা বাহু বলে আদায় করেছে। নারীর ক্ষমতা ও যোগ্যতা ছিলনা পুরুষের বিরুদ্ধে লড়ার, আজও নেই, তাই তারা নেতৃত্বে যেতে পারেনি।
নারী পুরুষের কাছে ভিক্ষা চায় তাদের ক্ষমতা দেওয়া হোক সেই হিসাবে রাস্ট্র গুলি নারীকে সংরক্ষণ মর্যাদা দিয়েন, নানা রকম আইনী ক্ষমতা সহ টাকার বা অর্থের, বস্তুর অধিকার দিয়ে গত ২০০ বছর অনেকটাই উন্নত করে তুলেছে , উলটো দিকে পুরুষের করের টাকায় রাস্ট্র চলে, পুরুষের মেধায় রাস্ট্র চলে, পুরুষের নির্মাণে পৃথিবী এত সহজ ও দ্রুত গতিতে চলছে আর পুরুষই এখন নানা অন্যায় ও অবিচারের শিকার হচ্ছে।
বিয়ে তাই আজ চুক্তিবদ্ধ হিসাবে দেখা হচ্ছে। লিখিত কিছু দাবী উভয় পক্ষের তরফে মেনে সময় ও অর্থের হিসাবে চলা একটা সমাধান সূত্র ভাবা হচ্ছে।
চুক্তিবদ্ধ বিয়ে এটার ইতিহাস বহু প্রাচীন। যদিও তেমন চালু অবস্থায় ছিলনা বা আজকের মত ভাবনা চিন্তা করা ছিলনা।
২০১২ সালে DNA এর রিপোর্টে (খবর মাধ্যম) দেখা যায়, পুনার যুবকদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ বিয়ের প্রবণতা।
হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ (Hindu Marriage Act, 1955)বা বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ (Special Marriages Act, 1954) এই নিয়মে বিশেষ কোন সংস্থান নেই চুক্তিমত বিয়ের। যারা আমেরিকাতে, বিশেষত সহজেই ভিসা পেতে চায় এমন ব্যক্তিরা এর অধীনে গাঁটছড়া বাঁধতে গিয়ে কনে ও বর চুক্তিতে প্রবেশ করছে, । যার অর্থ কখনও কখনও এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে বিয়ে শেষ।
“চুক্তি বিবাহের প্রবণতা ধীরে ধীরে ভারতে নোংগর হচ্ছে কারণ এতে বিবাহ এবং লিভ-ইন সম্পর্কের উভয়ই সুবিধা রয়েছে। সাধারণত, এই ধরনের বিবাহগুলি ১-৩ বছরের সময়কালের জন্য বোঝানো হয় এবং ২৮-৩৫ বছর বয়সী লোকেরা পছন্দ করেন”।
dnaindia এর সূত্রে জানা গেল ভারতে ২০০৫ সালে গুজরাটে প্রথম চুক্তি বিবাহ কারোর হয়েছিল, স্বামী-স্ত্রী হিসাবে জীবনযাপন করা দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি, তবে ভারতে আইনী স্বীকৃতি এতে নেই।
“দুপক্ষেরই যদি চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন হয় তবে চুক্তির মর্যাদা হারাবে। তবুও, এই ধরনের দম্পতিরা পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে ”
ইচ্ছার স্বাধীনতা, নিজের মন পরিবর্তন করার অধিকার। আমেরিকাতে এর প্রচলন রয়েছে। ইন্টারনেট আপনাকে নববধূ খুঁজে দিতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠানের কনের ক্যাটালগ আছে। যদি আপনি চুক্তিবদ্ধ হতে চান। অথবা হতে পারে একটি প্রাক-বিবাহ হিসাবে কারুর সাথে যৌনজীবন করতে চান।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।