কবিতায় আকিব শিকদার

১। অপার্থিব

ফলে ফরমালিন, মাছের কানকো পঁচা, চালে কাঙ্কর।
দোকানিকে বৃথা বকে-ঝকে মুখে তুলছো ফেনা, বুঝোই না
তোমার কৃতকর্মই তোমায় ঠকে যেতে বাধ্য করেছে।
সুদখোর, মিথ্যাবাদী, ফন্দিবাজ, আমানতের খিয়ানতকারীদের
বিধাতা করেন বঞ্চিত সমস্ত নিয়ামত থেকে।
ব্যাংকে অসৎ টাকা ক্রমানুপাতিক বাড়ছে, যেন বন্য শুকর
মাস মাস সন্তান প্রসবরত। অফিসের ফাইল আটকিয়ে
খোঁজ বখশিশ, শিকার সন্ধানী ধূর্ত শিয়াল; তুমি ঘুষখোর নও…!
বন্ধুরা টাকা ধার নিলে মহামান্য আবু বকর
উঁচু গলায় বাগারম্বর তো নয়, করতেন অপরাধির মতন
বিনম্র আচরণ। অতিরিক্ত আদায় দূরে থাক, বৃষ্টির রাতেও
ঋণগ্রস্থ বন্ধুর বারান্দায় নিতেন না আশ্রয়, যদি সুদ বিবেচ্য হয়।
প্রতিবেশি যথাসময় ঋণ শুধতে না পারায় তুমি
পথে পেয়ে করো অপদস্ত।
তিরিক্ষি মেজাজ জুড়াতে সে করে আপ্যায়ন । চায়ের কাপে
বিস্কুট চুবিয়ে পা নাচাও আয়েশী ভঙ্গিমায়; লজ্জা করে না…!
খলিফা ওমর কাচারিতে ব্যস্ত। এক রাতে এলো অতিথি এক।
নিভিয়ে দোয়াত আঁধারে বসেই ওমর
কথা বলছিলেন আগন্তুুকের সাথে। ব্যক্তিগত ব্যাপারে
সরকারি তেল ক্ষয় সমীচীন নয়, কী সাংঘাতিক সৎ মানসিকতা…!
তুমি স্কুলগামী সন্তানকে ঘরে ফেরাতে, শ্বাশুড়ীকে হাসপাতাল নিতে
পাঠিয়ে দাও অফিসের চৌচাকা, যার কাজ
শুধু তোমাকে বহন। অফিসের টেলিফোনে
করো পারিবারিক বাৎচিত, বুঝোই না এ যে অন্যায়…!
তোমার সন্তান নষ্টের দখলে যাবে। অতি আধুনিক কন্যা
অশালীন পোশাকে বন্ধুর হাত ধরে পালাবে, ফিরবে না কোনদিন।
ছেলেটা মদের বোতল হাতে আসবে তেড়ে বুনো মহিষের মতো
তোমাকেই গুতিয়ে মারতে। সুন্দরী বধূ পরকিয়ায় মেতে নাইট ক্লাবে
কাটিয়ে আসবে রাত।
তোমার শ্রমে ঘামে গড়া অট্টালিকায় ধরবে ফাটল। যখন মৃত্যুদূত
দাঁড়াবে দুয়ারে, এই ধন, এইসব আত্মীয়-স্বজন
মুহুর্তে ফেরাবে মুখ। মৃত মানুষের শূন্য মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে
কেউ দেয় না গুঁজে পার্থিব সম্পদ।

২। বউ বন্দনা

পৃথিবীতে বিদুষী কিছু নারী কখনো কখনো পারে বুঝে নিতে
মুহূর্তে পড়ে নিতে, স্মিতহেসে জয় করে নিতে পুরুষের মন
ঘরেই আমার আছে তেমনি একজন, ভুবন মোহন।
প্রচন্ড বৃষ্টিতে মধ্যদুপুর, চুলোর ওপর শর্ষে-ইলিশ
লক্ষ্মী ঘরণী আমার ঘেমে ঘেমে রাঁধছো। দেখেই হারাই দিশা
পৃথিবীর সমস্ত প্রশান্তি যেন আমারই ঘরে বেধেছে বাসা, ভালোবাসা।
রিকশাতে যেতে যেতে হঠাৎ যখন মসজিদে পড়ে আসরের আজান
তাড়াহুড়ো করে তুমি তুলো মাথায় কাপড়, ঘোমটাতে ঢাকো মুখ
তখন আমার অন্তরজুড়ে স্বর্গীয় সুখ, অজানা সে সুখ।
মধ্যরাতের ঘরে সুবাসী সুরভী গায়ে মেখে, টানা চোখে কাজল এঁকে
যখন দাঁড়াও শরীর ঘেঁষে। মনে হয় সমস্ত আলো নিভাই ফুৎকারে
শুধু কাচের চুড়ি বাজুক নদীর স্রোতের সুরে, নিস্তব্ধ অন্ধকারে।
সেই যে পয়লা বৈশাখে দিয়েছিলে কিনে পাঞ্জাবি আকারে একটু বড়
আমি কি ঘুরিনি বলো তোমার সাথে সেই ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি পরে
আঙুলে আঙুল জড়িয়ে হাসিমুখে সারা দিন ধরে, মনে কি পড়ে?
ঈদের নামাজ শেষে ফিরেছি ঘরে, তুমি পায়ে ছুঁয়ে করলে সালাম
মনে হলো সমস্ত সৌন্দর্য সমস্ত পবিত্রতা রয়েছে তোমাকে ঘিরে
যেন স্বর্গীয় অপ্সরা এলো পথ ভুলে আমার ঘরে, যাবে না স্বর্গে ফিরে।
আমার কোলে যেদিন দেবে তুলে প্রথম সন্তান, সেদিন মনে হবে
পৃথিবী সুন্দর, জীবন সুন্দর, এর থেকে বেশি সুন্দর ভালোবাসা
জাগবে মনে সহস্র শতাব্দী বাঁচার আশা, অপূর্ণ প্রত্যাশা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।