এইখানে যদি বনের ভেতর ঢুকে যাও
তোমাকে ভয় দেখাতে আসবে লকলকে জিহ্বধারী
সবুজরঙা সাপ। তোমাকে ভয় দেখাতে আসবে
উলুল ঝুলুল খাটাশ, খেকশিয়াল।
এইখানে যদি তুমি
গাছের সাথে সেঁটে থাকতে চাও-
তোমার পা কামড়ে দেবে লাল পিঁপড়ে, তোমাকে আজন্ম বৃক্ষ ভেবে
ঘারের উপর ডানা ঝাঁপটাবে
হলুদ পালকধারী একটা অচেনা পাখি।
এইখানে ঝরা শুকনো পাতার মর্মর ছাড়া
কোন কোলাহল নেই, ফুলের সৌন্দর্য ছাড়া কোন নান্দনিকতা নেই-
নেই পাখির কিচির মিচির ব্যাতিরেকে কোন গান।
এইখানে মানুষ নিতান্ত সহজ সরল, তোমাকে ডেকে এনে
চিরচেনা স্বজনের মতো দুবেলা খাইয়ে দেবে
যথেষ্ট সমাদর দেখিয়ে।
তোমার মুখে তুলে দেবে
মগডালের সিঁদুরে পাকা আম, কাজলী গাভীর একবাটি দুধ।
এইখানে শ্বেতপাথরে ঘাটবাঁধা পুকুরের অতলান্তিকে
ডিগবাজি খেলে চিতল বোয়াল, শামুক কাছিম। শিশুরা টলটলে জলে
লাফিয়ে পড়ে মুখে জল নিয়ে আকাশের দিকে ছিটিয়ে ছিটিয়ে স্নান সারে।
এইখানে নেই রক্তচোষা পিশাচের দল, নেই গ্রেনেড বোমা।
নেই আড়ালে লুকিয়ে থেকে
বুকে ছুড়ি মারার মতো অসৎ হাত।
এখানে তো নেই কালো ধোঁয়ার আবডালে
মতলব আটা মানবরূপী দানবের মুখ। কারও হাতে ঘড়ি নেই-
তাই নেই সময়ের তাড়া।
এইখানে মানুষের সাদামাটা পান খাওয়া মুখে
নির্ঝঞ্ঝাট হাসি লেগে থাকে সর্বক্ষণ।
ওরা গাছের পাতার রং বদল দেখে-
নিজেকে বদলাতে শেখে। ওরা কাজল দীঘির কাকচক্ষু জলে
বলিহাঁসের ডুব সাঁতার দেখে নিজেকে করে কিছুটা রহস্যময়।
এইখানে ওরা ঘুঘুপাখির খুনসুটি দেখে
আপন বধূর সাথে প্রণয়মাতাল হয়। ওরা ঠকতে জানে-
ঠকাতে জানে না। কাঁদতে জানে, অথচ কাউকে কখনো কাঁদিয়ে দেখেনি।
এইখানে ওরা মুখ ফুটে কোনদিন বলেনি ‘ভালবাসি’
অথচ কতো গভীর-গভীর-গভীর ভালবাসা দিয়ে যায় একে অন্যকে।
২। মেয়েলী আবদার
আমার জন্য কেউ পাগল হোক, তা চাই না
শুধু আমাকে বুঝোক। চোখের কোনে বাসি কাজল
লেপটে আছে, এ দৃশ্য যেন তার দৃষ্টিগোচর হয়।
আমি কাদলে তার কাধটা বাড়িয়ে দিক, আর হাসলে
সে তাকাক বিষ্ময় ভরা চোখে। প্রভাতে বিছানা ত্যাগের বেলা
আমার আচল ধরে বলুক- “আরেকটু ঘুমাও, আসেনি
এখনো রোদ জানালার কাঁচে”। গোসল শেষে ভেজা চুলে
আমাকে দেখে কেউ তাকিয়ে থাকুক। অফিসে যাবার আগে
তারাহুরু করে তৈরি চিনি দিতে ভুল করা চায়ে
চুমুক দিয়ে বলুক- “বেশ হয়েছে”। মন খারাপের দিনে
আমাকে নিয়ে ঘুরতে বেরুক। পথের দোকান থেকে
দুটো ফুল কিনে বলুক- “আজ সারাদিন শুধু
তোমারই আরাধনা”। আমি চাই না ওঠতে বসতে
কেউ বলুক- “ভালোবাসি ভালোবাসি”। শুধু চাই
যখন রাগ করে চলে যাই, সে আমাকে যেতে না দিক।
ভালোবাসার নিবির সুখে মরে যেতে যেতে মধ্যরাতের বিছানায়
আদরমাখা শিৎকারে তার নাম ধরে ডাকতে চাই। আর চাই
সাজবো বলে আয়নাতে দাড়াই যখন, পেছন থেকে জরিয়ে
কাধের চুলগুলো সরিয়ে কানেকানে কেউ তো বলুক-
“তোমাকে ছাড়া এই পৃথিবী বড়ো একলা লাগে”।