• Uncategorized
  • 0

|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় বনবীথি পাত্র

নববর্ষ

ভারতীর জন্য শাড়িটা কিনেই দোকান থেকে বেরিয়ে আসছিল সুবল। কি মনে হতে আবার দোকানে ঢোকে। টুকটুকির জন্য সস্তার একটা সুতির ফ্রক কিনে নিজের হাতব্যাগটার ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়। কালকে একবার গিয়ে জামাটা নিয়ে দেখা করে আসবে মেয়েটার সাথে।
আর একটু হলেই ছটার বাসটা ছেড়ে দিত। কোনরকমে দৌড়ে বাসে ওঠে সুবল। ভাগ্যক্রমে একটা বসার জায়গাও পেয়ে যায়। সপ্তাহ শেষেশহর থেকে বাড়ি ফিরছে, ঘরে নতুন বৌ। হলেই বা দ্বিতীয় পক্ষ!!!! ভারতীর মুখটা ভেবেই মনটা খুশি খুশি হয়ে যায় সুবলের।
দুবছরের টুকটুকি রেখে হঠাৎ করেই মারা গেল শঙ্করী। দুদিনের জ্বর খবর পেয়ে সুবল গাঁয়ে পৌঁছানোর আগেই সব শেষ। মেয়েটার কথা ভেবে বিয়ে করবে না ভেবেছিল। কিন্তু বত্রিশ বছরের একজন পুরুষের বৌ ছাড়া থাকার জ্বালা দুবছর ধরে হাড়ে হাড়ে ভোগ করেছে সুবল। তাই গগন ঠাকুরের আনা সম্বন্ধটা আর নাকচ করেনি। নিজের ইচ্ছাটা গোপন রেখে, মায়ের জোরাজুরিতেই দ্বিতীয়বার টোপর পরেছিল সুবল।
টুকটুকি মাত্র সাড়ে চারবছরের হলেই বা, বাপের বে দেখবে এটা পছন্দ হয়নি সুবলের। মেয়েকে রেখে এসেছিল তার দিদিমার জিম্মায়। কিছু খরচপাতিও দিয়ে এসেছিল। মাঝে মাঝে দেখে আসবে বলেছিল বটে কিন্তু বিয়ের পর এই দেড়মাসে একটিবারও আর যেতে পারেনি সেখানে। বাসের হকারের কাছ থেকে দশটাকার রঙিন চকলেট কিনে ব্যাগে ভরে নেয়। টুকটুকি বড্ড ভালোবাসতো। কাল সকালেই মেয়েটাকে দেখতে যাবে। আর কিছুদিন যাক্, তারপর ভারতীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরের মেয়েকে ঘরেই নিয়ে আসবে।
বাড়ি ঢুকতে অন্যদিনের মতো ভারতী এগিয়ে এলো না। সবে তো ন’টা বাজে, এরমধ্যে ঘুমিয়ে গেল নাকি! ঘরে ঢুকে লাইটটা জ্বালতেই চমকে ওঠে সুবল। বিয়ের নতুন খাটে টুকটুকিকে গান গেয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে ভারতী।
আহ্ লাইটটা নেভাও, জেগে যাবে এখনি। যা দস্যি মেয়ে!
ব্যাগের জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে শাড়িটা দেখতে পায় ভারতী। ইস্ আমার তো কত নতুন শাড়ি, আবার কি দরকার ছিল? এরথেকে মেয়েটার জন্য একটা নতুন জামা আনলে পারতে….
সুবলের মুখে কোন কথা নেই। দুচোখ ভরে দেখছে নিজের বিয়ে করা নতুন বৌকে নয়, টুকটুকির নতুন মা কে। এমন সুখের নববর্ষ, এই বোধহয় প্রথম সুবলের জীবনে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।