|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় বসুধা বসু

বাবা

ধীমান সকাল থেকেই ব্যস্ত কারণ তৃষিতা আসবে আজ| প্রায় পাঁচ বছর পর সামনাসামনি দেখবে দুজন দুজনকে| তবে এর মাঝে যে দুজন দুজনের সাথে দেখা হয়নি তা নয়, দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে …..দেখা হয়েছে তবে সাক্ষাতে না, দেখা হয়েছে ভিডিও কলে কারণ দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারে না| পাঁচ বছরের জন্য পিএইচডি করতে তৃষিতা গিয়েছিল বিদেশে| যেতে পারেনি ধীমান, কারণ কর্মসূত্রে সে কলকাতা মেডিকেল কলেজে কর্মরত ডাক্তার| মাঝে যে হয়েছে মহামারী তাই জন্য ছুটি পাইনি ,তাই একসাথে থাকা হয়নি ধীমান আর তৃষিতার| মাঝে রয়ে গেছে সাত সমুদ্র তেরো নদী|আজ সকাল থেকে ধীমান নিজের হাতে পুরো ঘর সাজিয়েছে ,সাজিয়েছে তৃষিতা মনের পছন্দের দোপাটি ফুলে| বিমানবন্দরে এসে প্রায় এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিট অপেক্ষারত ধীমানের মনে পড়ে যায় সেই বিগত ষোলো বছর আগেকার ঘটনা |চশমাটা খুলে বিমান বন্দরে একটা চেয়ারে বসে মনে করতে লাগে সেই ষোলো বছর আগেকার এক বৃষ্টিমুখর রাতের কথা ……. এক বৈশাখে গরমের রাতে নেমে এসেছিল কালবৈশাখী ঝড়। হয়েছিল মুষলধারে বৃষ্টি। হঠাৎ কে যেন এসে দরজায় কড়া নাড়ছিল.. তখন অবশ্য জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে ধীমান মেডিকেল কলেজে কর্মরত| কে সেই রাতে অচেনা পরিবেশে দরজায় কড়া নাড়ছে একটুখানি ভয় পেয়েছিল ধীমান |ধীমান আসলে জন্মসূত্রে বর্ধমানে ,পরবর্তীকালে সে কলকাতা মেডিকেল কলেজে পড়তে আসে এবং সেখানেই তাঁর কর্ম সূত্র| “এমন বৃষ্টিমুখর রাতে কেইবা দরজায় কড়া নাড়ছে “…দরজা খুলে দেখে একটা বছর আটের মিষ্টি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েকে, জলে ভেজা অবস্থায় বাচ্চাটিকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে ধীমান জিজ্ঞাসা করেছিলো “তুমি কে কি করে আসলে এখানে”..  বাচ্চাটা কেঁদে কেঁদে নিষ্পাপ মনে বলেছিল” আমার বাবা এখানে রেখে দিয়ে গেছে, মা মারা গেছে দিন দশেক আগে| বাবা বলেছিল খাবার নিয়ে আসবে কিন্তু আসেনি বাবা বলেছিল এই হাসপাতালে এখানে আমার মা আছে আমি অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি পড়েছে তাই ভয়ে ভয়ে কোথায় যাব সামনেই এই আলো জ্বালানো বাতি দরজা দেখলাম তাই আমি চলে এসেছি “..আজ ও স্পষ্ট মনে আছে ধীমানের সেই রাতের কথা তন্নতন্ন করে থানা পুলিশ করা হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায়নি তৃষিতার বাবাকে পাওয়া যায়নি তৃষিতা জন্মসূত্র পাওয়া যায়নি তৃষিতা বাড়ির ঠিকানা তাই পরবর্তীকালে ধীমানই তৃষিতার পিতৃপরিচয় ,হয়ে ওঠেছে তৃষিতার বাবা|

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।