স্বাধীনতা দিবস নিয়ে লিখতে বসেই এই গানটা মাথার ভেতর থেকে বুড়বুড়ি কেটে বেরিয়ে এলো। মুক্তিরো মন্দিরো সোপানো তলে নয়, ভারতবর্ষ সূর্যের একনাম নয় , সারে জাহা সে আচ্ছা তো একেবারেই নয় ; এই গানটাই এখন মাথার ভেতর বাজছে। শ্বেতাঙ্গদের লেখা গান। লন্ডনের ব্যান্ড। আবার লন্ডন বলতে স্যাট করে টকটকে লাল টেলিফোন বুথগুলোর চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সেই রাঙা বুথ থেকে এই বুঝি সন্ত্রস্ত চোখ আড়ালেই রেখে এক সানগ্লাস পরিহিতা কাঠ কাঠ সুন্দরী বেরিয়ে আসবেন যার অবধারিত পিছু নেবেন স্বয়ং জেমস বণ্ড। তার বেশ কিছু দিন এবং দুর্ধর্ষ রাত্রি কেটে যাবার পর, উনিশ শো কুড়ি সালের গোলাপি শ্যাম্পেনের গ্লাস হাতে নিয়ে জেমস বণ্ড বাবু যখন সুন্দরীর মুখোমুখি হবেন তখন শুধু কথা শুরুর জন্য কথা উঠবে “স্বাধীনতা” নিয়ে। কাঠ সুন্দরী নিজের দুপিস কটা চোখ বণ্ড বাবুর দু পিস ঠাণ্ডা খুনির চোখেদের দিকে সরাসরি রেখে দার্শনিকের মতন জিজ্ঞেস করে বসবে “ ওগো প্রাণনাথ জিরো জিরো সেভেন, আমরা কি সত্যি- ই স্বাধীন?”
আমরা হচ্ছি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে আসা সেই ক্যাটাগরির ধেড়ে ভারতবাসী যাঁদের নাম ধরা যাক “বেশীরভাগ”। এই বেশীরভাগরা পনেরোই আগস্ট আসবার আগে এবং পরে ক্রমাগত ক্যালেন্ডার দেখতেই থাকে দিনটা রবিবার পড়লো কিনা। পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা স্বাধীনতা দিবস আমাদের । আস্ত ছুটির দিন। মদের দোকান বন্ধ। আর? যাঁদের আঙুলের নখ উপড়ে নেওয়া হয়েছে, বরফে শুইয়ে রাখা হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তাঁদের ভূতরা কি এখনও বিপ্লবী ভাবেন নিজেদের? বোধ হয় নয়, কারন সরকারি ভাবে পনেরোই আগস্ট যে আড়ম্বরে পালন হয় সেখানে সংগ্রাম কে নয়, শৃঙ্খলা কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। লেফট রাইট, কুচ কাওয়াজ, ক্লিশে থেকে ক্লিশেতর হয়ে যাওয়া অ্যায় মেরে বতন কি লোগোর অবিরত সম্প্রচারে বিপ্লব নয়, জাতীয়তাবাদ পেয়ে যায় হিরোর পার্ট। এই কয়েক মাস সিনেমা হলের দিকে যাওয়া যায় নি। আমাদের তো অভ্যাস হয়ে গেছে শো শুরু হবার আগে জনগণমন করতে সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরা। চল্লিশ সেকেন্ড বাদেই ভূতের সিনেমা শুরু হবে জেনেও দেশভক্তির এই হঠাৎ চেগে ওঠার কারণ নিয়ে মাথা ঘামাই না আমরা। আমরা ধরেই নিয়েছি পলিটিশিয়ানরা নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী ঘুষখোর এবং দেশের তেরোটা বাজাতেই তাঁদের আবির্ভাব। যে দেশে অনগ্রসর জাতির শিরোপা পাবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে লোকজন সেই দেশে নির্বিকার মুখ নিয়ে পনেরোই আগস্টের নিয়মিত সূর্য ওঠে। আর সেই অলৌকিক সূর্যালোকে আপামর ভারতীদের কানে গোঁজা হেডফোনে বাজে, বেজেই চলে “জাগো গো নবভারত জনতা, এক জাতি এক প্রাণ একতা” তাই তো?