• Uncategorized
  • 0

কবিতায় স্বর্ণযুগে দেবনাথ চক্রবর্তী (গুচ্ছ কবিতা)

১| অভাগা

ভাইপো মরেছে বছরকয়েক
ভাগ্নী গেলো বিশে
মায়ের মুখে দিলাম আগুন
মরা ফাগুনের শিষে
ভাইঝিটা তো গেছে দূরে
রক্তের টান ছিঁড়ে
হল্লা মাদল বাদল ঝরায়
মালকোষেরই মীড়ে ।
পারি নি কোনও জন্ম দিতে
অভাগা দূরছাই
মগজ , কলম পর হয়েছে
আগুন ছোটে না তাই
ঘর-বান্ধব সব গিয়েছে
বাণের জলে ভেসে
এরপরে কি ভাসতে পারি
জোয়ার জলে হেসে !
কাল ছিলো যা স্বপ্ন আমার
‘কালের ঘরে শনি’
আমি এখন ভবঘুরে
দুঃখ- রাজার খনি
সকাল-সন্ধ্যা ব্যথায় কাতর
ব্যথা তো সব কেনা
যতই আমি চোখ মেলে রই
সুখ দেবে কোন চেনা !

২| অনু

বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলাম কবে….!
দেদার মজা আর খুনসুটিতে কাটিয়ে দিতো
অফ পিরিয়ড ।
ক্ষুরধার মেধা আর বাগ্মীতা অবশ করে দিতো কফিহাউসের টেবিল , ইউনিভার্সিটি গেট ।
পার্থিব ভালোবাসা অপাংক্তেয় ছিলো তাঁর ।
চাহিদা নয় , শুধু প্রেম এসেছিলো বারবার ।
কিন্তু না
এভাবে নয় এভাবে নয়….
অন্যভাবে….
সময়ের ধার বেয়ে বেয়ে যুক্তির ঝড়ে পাগলপানা মন
তবু টেনে রাখতো সুতো জোয়ারের মতো ।
এইতো প্রেম ! এই তো টান !
মগজের প্রেম যেন – চোখে চোখে হয় ।
সুতোটাই থেকে থেকে টান মারে
রোজের বয়ে যাওয়া ক্ষয় ।
আজ ছিঁড়ে গেলো সুতো –
দুর্দম কালহিম কাঁকড়ার টানে ॥
আমার আদি অকৃত্রিম বন্ধু লরেটো কনভেন্টের কৃতি ছাত্রী ও শিক্ষিকা অনুসূয়া চৌধুরী অকাল প্রয়াত হলেন । আমি ওঁর কাছে চিরঋণী রয়ে গেলাম…..
ভালো থাকিস অনু…..
ঝড় থেমে গেছে ॥
বি. দ্র : ওঁর VINCENT পুরস্কৃত গ্রন্থ ‘THE SWORD OF SWAMI’

৩| শপথের কথাগুলো সব

একুশ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২
আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ।
চারদিকে শুকনো ফুলের ওড়াউড়ি
হাওয়ায় দুলছে সরষের ক্ষেত
বীজধানে সবুজ বাংলার মাটি।
জ্বলন্ত চুল্লির ধারে
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সিরাজুল
গোপনে লিখে চলেছে
নিষিদ্ধ বাংলায় কঠিন আত্মপ্রত্যয়
শুধুই তোমাকে রক্ষার জন্যে।
তোমাকে রক্ষার জন্যে
চা-খানায় , রেস্তোরাঁয়, কলেজ ক্যান্টিনে, কফি হাউসে
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে উঠে এসেছিলো ধোঁয়ায় ভরা গনগনে লাভাস্রোত।
আর তখনই দেওয়ালে দেওয়ালে ছড়ানো রাঙা পোস্টার।
তোমাকে রক্ষার জন্যে
মাঠে-ময়দানে উত্তপ্ত কথা বলা আর রহমত মাঝির তীব্র আক্রোশ ।
আবদুল জব্বারের সমর্থনে
রোদেলা দুপুরে-
ফেস্টুনে প্ল্যাকার্ডে দৃপ্ত প্রতিবাদের ঝাঁঝালো মিছিল।
দুরন্ত স্লোগানে শাণিত পদক্ষেপ-
অবিরাম অবিরাম বুটের দাপাদাপি-
মুহূর্তে প্রচন্ড ব্লাস্টিং
শব্দ ধোঁয়া আর আর্তনাদ।
রক্তাক্ত রাজপথে বিবর্ণ দেহের স্তুপ ।
সেদিন ফেব্রুয়ারীর একুশ ছিলো।
পাষাণ বুকের রক্ত নিংড়ে
বুলেট ও বিষ্ফোরণের মাঝখানে
মৃত সন্তানের পাশে
চোখহীন মুখে
গ্যাঁজলা ওঠা ভাইয়ের পাশে
এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে শোকার্ত মা, হতভাগ্য বোন।
সেদিন ফেব্রুয়ারীর একুশ ছিলো।
শুধু তোমার জন্যে
আজও সত্তর বছরের ফতেমা
ভাইয়ের ছবিতে মালা দেয় না
গায় না কোনও ভোরের গান
শুধু স্বপ্ন দেখে একটা নতুন একুশের-
স্বপ্ন দেখে নতুন শপথের দিন।
একুশ ফেব্রুয়ারী
তুমি বাংলার প্রতিটি প্রান্তে –
হাটে ঘাটে বাজারে ময়দানে
দুর্বার উচ্চারণে
শপথের কথাগুলো সব
আজ আবার মনে করাও।
মনে করাও
তোমার ক্ষয়হীন ভালবাসার কথা
আবার
বারবার॥
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।