দশ দিন পর।
হরিদাস পাল এখন শুয়ে আছেন ডাবল বেড কেবিনে ।
কল্যাণ বাবু বললেন – – আর কত ঘুমোবেন। এবার উঠুন।
হরিদাস পাল উঠে বসলেন ।এই কেবিনটা বড় সুন্দর ।জানালা দরজার পর্দা গাঢ় সবুজ। হালকা গোলাপি দেওয়াল ।তার চোখের সামনে একটা বিশাল ছবি। অর্জুন রথে চড়ে যুদ্ধযাচ্ছে। সংগে কৃঞ ।যেখানে এই ছবি দেখেছেন তিনি থমকে দাঁড়ায়েছেন। আজও তিনি ছবির ওপর চোখ ফেলে রাখলেন। এক সময় দেখলেযে রথ সেইদেখল রথে অর্জুন নয়। দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। রথের চাকা আছে। তার আছে দুটি পা। সংগে কৃঞ নেই। যুদ্ধে তিনি একা। তিনদিনের কলেরায় মারা গেলেন বাবা। পুএ শোক সহ্য করতে না পেরে দাদুও চলে গেলেন। এক বোন ছিল সে ঘোষেদের পুকুরে চান করতে গিয়ে জলে ডুবে মারা গেল। সাঁতার জানা মেয়ে জলে ডুবে মারা যায়? এই রহস্য আজও তিনি উদ্ধার করতে পারেন নি। দেভোগ থানা দেহ নিয়ে গিয়েছিল। রিপোর্ট দিল বিষ খেয়ে ছিল। বিষই যদি খাবে তবে পুকুরে গেল কেন? ঘরেই তো মরতে পারতো। গ্রামের একটা মুসলিম ছেলের সংগে মেলামেশা করতে। দাদু এই নিয়ে বকাঝকা করেছে। মুসলিম ছেলেটির বাড়ির লোক হুকমি দিয়ে গেল। তারপরই বিষ খেযে ছিল। নাকি ইচ্ছে করে জলে ডুবে মরলো? সাঁতার জানলে নাকি ডুবে মরা যায় না। আজও তার কাছে ব্যাপারটা দুর্বোধ্য। হয়তো জীবনের কোন কোন
স্তর এমনই দুর্বোধ্য থাকে। সেখানে কোন দিন আলো পড়ে না। আদিম গুহার মতো অন্ধকার হয় থাকে। 14 বছর বয়সে বোনটা প্রেমের এতো গভীরে গেল কই করে। সম্পর্ক গভীর হয় তখন না হয় শিকড় বাকড় ছড়ায়। ঐ বয়সে ও কি করে বুঝলো যে ঐছেলেটা ছাড়া সে বাঁচবে না। তবে কি কারো কারো জীবন প্রেম শুরুতেই এতো গভীরে চলে যায় যে ফেরার পথ থাকে না। অল্প দিনের ব্যবধানে শ্বশুর স্বামী মেয়ে হারিয়ে মা তখন বিপর্যস্ত। বিধবা মাকে নিয়ে একপ্রকার অনাথ তথন সে।
–কি ভাবছেন পালবাবু?
হরিদাস বাবু সচেতন হন। বলেন-কিছু না।
–মাঝে মাঝে ঐ জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। ওখানে কি আছে?
–কিছু না।
–তাহলে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন?
–বাইরেটা দেখি।
–সারা জীবন তো বাইরেটা দেখলেন। এবার ভিতর টা দেখুন।
–হ্যাঁ ।তাই তো দেখছি।
–জানালার কাছে গিয়ে অমলের মতো দাঁড়াবে থাকেন।
–কে অমল?
–অমল ও দইওযালা পড়েন নি?
–পড়াশুনা করতে পারলাম কই। তবে কথাটা ঠিক বলেছেন। শিশুর মতো। বৃদ্ধ বয়স তো শৈশব ফিরিয়ে আনে।
–আজকের ফুল কি সুন্দর গন্ধ দিচ্ছ। সেই সকালে দিয়ে গেছে এখন গন্ধ আছে।
–এখানে সবই ভালো। খাবার দিচছে ভালো যত্ন আতি ভালো। শুধু একটা জিনিস খারাপ লাগে।
–কি?
–ঐ যে কাগজ দিয়ে ঠিক আধঘণ্টা পর এসে নিয়ে যাবে। কেন?
–বুঝতে পারেন না? আপনি যদি বেশি সময় পড়েন তবে ব্রেনের নার্ভে চাপ পড়তে পারে।
সদ্য আমাদের অপারেশন হয়েছে।
–সে তো আমি বুঝি। পাগলও তার ভালো বোঝে।
–আপনি বোঝেন না। কাগজটা থাকলেই আপনি পড়বেন। আপনার কাগজ পড়ার নেশা আছে তাই কিগজ চেয়েছেন। আমি তো চাই নি।
—বড় অবাক লাগে যখন কাগজটা নিতে আসে মেয়েটা কি সুন্দর হাসে।
—আমরা ভাবি মেয়েরা দূর্বল। কিন্তু ওদের ঐ হাসি একটা অস্ত্র। ঐ একখানা অস্ত্র দিয়ে
পুরুষ জাত কে ঘায়েল করে দেয়। স্বয়ং শিবকে গৌরির কাছে নতজানু হতে হয়েছিল।
—তা যা বলেছেন। একদিন বলতে পারলাম না কাগজটা এখন নিয়ে না। পড়ে নিও।
–পাঁচবার পৃথিবীতে জন্ম গ্রহন করলেও পারবেন না ওটা হলো ওদের বোরমা অস্ত্র।