সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুন্ডু (পর্ব – ২৪)

লড়াইয়ের মিছিল

পর্ব ২৪

মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকুন।আর বেশিদিন নেই।অঙকো লজিস্টিস ডাঃ সোহম সেনগুপ্ত কথাটা বলে চলে গেলেন।
পায়ের তলাটা কি দুলে উঠল?চোখে কি অন্ধকার লাগছে? মাথাটা কি ঘুরছে?নাকি চারপাশ ঘুরছে? কবিতা পাল বুঝে উঠতে পারছে না।মনে হচ্ছে ডাঃ সোহম যা বলে গেলেন তা মিথ্যে।সত্যি হতে পারে না।মেটাবোলিজম স্পাইন্যালকরড থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে। ক্যান্সার গো করেছে।আর চিকিৎসা করে লাভ নেই। ডাঃ সোহমের মতে , এবার বাড়ি নিয়ে যান।যা খেতে চায় খেতে দিন।আর ছ মাস কাটবে।
একথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে কবিতা পাল। একদিন স্বামী সুশান্ত বলল, আমার পিঠে ব্যাথা হচ্ছে।
কিসের ব্যাথা?
কে জানে? কদিন ধরে হচ্ছে।
কোথাও চোট পেয়ে ছিলে নাকি?
না না। সেদিন দোকানের শাটার নামাতে গিয়ে কাঁধে চোট পাই। তারপর থেকে কাঁধ পিঠ দু জায়গায় ব্যাথা হচ্ছে।
একবার তো ডাঃ দেখাবে? অবহেলা করে ফেলে রেখেছো কেন?আজ ই চল ডাঃ সাহার কাছে।
ডাঃ সাহার মেডিসিন খেয়ে ব্যাথা কমল না। সুধন্য বলল,দিন দিন ব্যাথা বাড়ছে গো।
এখন ব্যাথা সেই পিঠেই আছে?
না।এখন শিরদাঁড়ার ব্যাথা হচ্ছে।
তবে তো অর্থপেডিক দেখাতে হয়।
তাই ভাবছি।
মৌলালির নামকরা অর্থপেডিক ডাঃ গা়ংগুলিকে দেখানো হল।তিনি মেডিসিন দিলেন।টারকশান নিতে বললেন।ভারী কাজ করতে নিষেধ করলেন।
কিন্তু কিছু হলো না ।ব্যাথা আরো বেড়ে গেছে।কাবু করে দিয়েছে। হাঁটতে পারছে না সুধন্য। হাঁটলে ব্যাথা বাড়ছে।দোকান বন্ধ হয়ে গেল।সোনার দোকান। বিয়ের লগ্ন। অর্ডার নেওয়া ছিল। কবিতা দোকানে বসল। কর্ম চারী দিয়ে কাজ তুলে মাল ডেলিভারি করা হল।
দুটো ছেলে মেয়ে। তাদের স্কুল কোচিং বাজার হাট স়়ংসারের কাজ এতকিছু করে আর দোকান করা সম্ভব হল না। দোকান বন্ধ হয়ে গেল।সংসার এবার চলবে কি করে? সঞ্চয এ হাত পড়ল।মজুত সোনা বেঁচে সুধন্যকে নিয়ে ছুটলো ভেলোর।দিন সাত চিকিৎসা করে বাড়ি ফিরে এল সুধন্য।এখন বেশ ভালো আছে।দোকান চালু করল সুধন্য কিন্তু দু’মাস পর একদিন তীব্র ব্যাথা নিয়ে বাড়ি ফিরে এল।
কি হলো গো? কবিতা পাল জিগ্যেস করল।
আবার ব্যাথা হচ্ছে।আর পারছিলাম না থাকতে দোকানে।রিসকা নিয়ে চলে এলাম।
ভালো করেছো। শুয়ে পড়।
ডাঃ গা়৺গুলি বললেন,আপনি আমার স্যারকে দেখান। আমার স্যার একজন নামকরা অ়়়কোলজিসঅট।
অ়৺কোলজিসট কেন?
আমার ডাউট হচ্ছে ইট কেস ইজ ক্যান্সার।
ক্যান্সার?
মনে হচ্ছে।
ডাক্তারের নাম?
ডাঃ সোহম সেনগুপ্ত।
সেই সোহম সেনগুপ্ত আজ এই কথা বললেন। কিন্তু সে কিভাবে মানসিক প্রস্তুতি নেবে?সুধন্য চলে গেলে দুটি সন্তান নিয়ে সে কোথায় দাঁড়াবে?বাড়িটা আছে। কিন্তু ছেলে মেয়ে দুটিকে মানুষ করতে হবে। স়়ংসারের খরচ আছে।সেটা আসবে কোথা থেকে? কিছু ভাবতে পারছে না কবিতা পাল।বুক ধরফর করছে। হাঁটু কাঁপছে।এখানে যখন চিকিৎসা হবে না তখন মিশনারী , হাসপাতালে রেখে লাভ কি।বাড়ি নিয়ে গেলে হয়।
কবিতা পাল বুঝতে পারছে তার জীবনে একটা লড়াই শুরু হতে চলেছে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।