গ এ গদ্যে দেবব্রত মাইতি

কে আমি

 ইভেন্ট আতঙ্কের উৎসব

২২ শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, যাদবপুর, রাত ১০.৩০
একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখবো বলে ফিরিয়ে আনলাম সময়ের অভাবে ভুলতে বসা এক পুরানো অভ্যেস, অনেকটা সময় পর মুক্তির শ্বাস নিল বন্ধুরা। ছোট থেকে একাকী থাকা আমার বন্ধু বলতে ছিল এল.আই.সির ছাপ মারা খাতা আর একটা তিনটাকার ছুড়ে ফেলা পেন। যে বন্ধুদের সাথে ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে জমিয়ে তুলতাম আড্ডা আসর, গল্পের ছলে জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত জড়িয়ে যেত যাদের সাথে, সময়ের অদ্ভুত খেলা তৈরি করে দূরত্ব। ব্যস্ততার খোলসে ঢাকা আমার ফেরা হয়না লালরকে, অভিমান বাড়িয়ে তোলে নূন্যতম দূরত্ব। কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা আবারও আমাকে এনে দাঁড় করাল ভুলে যাওয়া পথে, দূরত্ব সূত্র গোটাতে গোটাতে আবারও মুখোমুখি ভুলে যাওয়া বন্ধুরা। এবার ফিরে আসি সেই কথায় যে কথা ফিরিয়ে দিয়েছে পুরানো বন্ধুত্ব। বেশ কয়েকদিন ধরেই মনের মাঝে কাজ করে চলেছে এক তীব্র অস্বস্তি, বেড়ে চলেছে অস্বস্তি সূচক প্রতিদিন, যার কারণ আজও অজানা। আরও এক অদ্ভুত ঘটনা লিখতে হচ্ছে একপ্রকার বাধ্য হয়েই, আজকাল ভালো লাগছে আমার ভীড়ে মিশে যেতে, যে আমি শুরু থেকেই পছন্দ করে এসেছি নির্জনতা, সেই আমাকেই এক অদৃশ্য শক্তি টেনে এনে দাঁড় করিয়েছে অফিস পার্টির ভীড়ে। সকলের অবাক চোখে তাকানোটা আমার মনে সৃষ্টি করছিল এক অদ্ভুত ভালোলাগা, আমি নাচতে শুরু করেছিলাম পাগলের মতো। প্রথমবার ভীড়ে পা দিতেই নাকে এসেছিল এক অদ্ভুত গন্ধ, গন্ধটা ঠিক কিসের বোধগম্য না হলেও এই গন্ধই যে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ভীড়ে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত সম্পূর্ণ একশো শতাংশ। ধীরে ধীরে চড়তে শুরু করল নেশা, অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা এক অজানা সত্ত্বা বেরিয়ে আসতে চাইছিল বুক চিরে। কোনোমতে নিজেকে সামলে ফিরে এলাম বাড়ির পথে, ফিরে এসেই মুক্তি দিলাম বন্ধুদের। হঠাৎ এ কি হল আমার? আমি কি সত্যিই বদলে যাচ্ছি? অথবা চালনা করছে কি আমাকে নতুন পথে আমার ব্রেনসেল? অজানা মনের মাঝে ভীড় করে আসা প্রশ্নের উত্তরগুলো।
২৩ শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, যাদবপুর, সকাল ৬.৩০
এমনিতেই আমি ভীষণ লেট রাইজার, সাড়ে সাতটা আটটার আগে উন্মুক্ত হয়না আমার দুচোখের পাতা। ঘুম ভেঙে বাথরুম দৌড়, সেখানের কাজকর্ম সেরে এসে খেতে বসা মায়ের হাতে ভাত, তারপর তড়িঘড়ি দৌড় বাসস্ট্যান্ডের দিকে, গন্তব্য বালিগঞ্জ; সেখানেই একটা ছোট্ট কফিশপ আমার ঠিকানা। কিন্তু প্রতিদিনের এই রুটিন পরিবর্তিত হল হঠাৎই এক অদ্ভুত স্বপ্নকে কেন্দ্র করে, স্বপ্নটা ঘুম ভাঙিয়ে দিল আমার প্রথম প্রহরেই। স্বপ্নটা কতকটা এইরকম, আমি হেঁটে চলেছি একটা নির্জন রাস্তায়, রাস্তায় আমাকে ছাড়া খুজে পাওয়া যাবেনা দ্বিতীয় কোনো লিভিং অর্গ্যানিশম গুটিকয়েক গাছপালা ও বন্ধ কিছু কলকারখানার পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি ছাড়া। প্রথমে ভেবেছিলাম এ রাস্তায় আমি একমাত্র দ্বিপদ প্রাণী কিন্তু ভুল ভেঙে গেল কিছুটা পথ চলার পর, বুঝতে পারলাম আমি ছাড়া এ পথে রয়েছে আরও অনেকের অস্তিত্ব, আমার পিছু নিয়েছে নিঃশব্দ মানুষের ভীড়। সকলের লক্ষ্য আমি তা বুঝতে পেরে শুরু করলাম দৌড়, ছোট্ট ইটের টুকরোয় একটা আলতো হোঁচট শেষ করে দিল আমার পালাবার প্রচেষ্টা, ভীড়কে দিল অ্যাডভান্টেজ। সকলে ঘিরে ঘরে আমায় মাখাতে শুরু করল লাল রঙ।
“আমি ভালোবাসিনা লাল রঙ, ছেড়ে দাও আমাকে তোমরা।”
চোখ খুলে নিজেকে খুজে পেলাম বিছানায়, ঘামের ধারাস্রোতে ভিজেছে গেঞ্জির প্রতিটি সুতো। ৪.৩০ থেকে সাড়ে ছটা, আমি এখনও খুজে চলেছি স্বপ্নের মানে।
২৩ শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, যাদবপুর, রাত ১০.৩০
সাধারণত একইদিনে আমি দ্বিতীয়বার বসিনা আড্ডায়, কিন্তু ভাবতে পারিনি একই দিনে আমার বন্ধুরা বন্ধুত্বস্পর্শ পাবে আরও একবার, আরও একবার বসতে হবে আমায় আড্ডা আসরে। বালিগঞ্জের ক্যাফেটেরিয়ার রিশেপশানিস্টের চাকরিটা আবারও একবার আমাকে এনে ফেলবে পুরানো ইতিকথায় ভাবতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে দুনিয়াটা সত্যিই গোল, সবকিছু ফিরে আসে বারবার। আহেলীর ফিরে আসাটা আমার জীবনে কিসের ইন্ডিকেশন তা অজানা তবে মুখোমুখি হয়ে আমরা খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম পরস্পরের মুখের দিকে পরস্পরকে সঠিকভাবে চিনে নেওয়ার ইচ্ছেতে। হবেনাই বা কেন, কতটা সময় পর আবারও ফিরে আসা একই পথে। আমার যতদুর মনে পড়ে আহেলীর বাড়ি ছিল হাওড়ার আন্দুল নামক একটা জায়গায়, বালিগঞ্জে তার কি কাজ জিজ্ঞাসা করতে মন চাইলো ভীষণ, কিন্তু এতটা সময় পর চিনতে পারবে কি না আমার মতো ফেলে আসা গল্পের চরিত্রকে সেই বিষয়ে আশঙ্কিত হয়ে অবলম্বন করে রইলাম নীরবতা। কিন্তু ভাবতেই পারিনি এত বছর পরেও আহেলীর মনে থেকে যাবে আমাকে। নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছিল সে আমার দিকে, জিজ্ঞাসা করেছিল আমিই কি আশুতোষ কলেজের অর্জুন কি না। পরিচয় দিতেই শুরু হল আমাদের কথোপকথন, দুইজন আশুতোষিয়ান একসাথে এত বছর পর একসাথে হলে আড্ডা যে জমাটি হবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকেনা। কথায় কথায় উঠে এল আমাদের কলেজ লাইফের দিনগুলো, পুরানো বন্ধুবান্ধবদের বর্তমান অবস্থা, কলেজের মিউজিক গ্রুপ, থিয়েটার দলের কথা সহ আরও অনেক কথা। কিছু কথা হলেও বাকি রয়ে গেছে আরও অনেক কথা কিন্তু আহেলীকে বিদায় দিতেই হল, কিন্তু যাওয়ার আগে লিখে দিয়ে গেল সে সেল নম্বর। জানিনা কি চাইছে ঈশ্বর, আবার কি জুড়ে দিতে চাইছে কেউ ছেঁড়া সম্পর্কসূত্র? কি জানি কি হবে।
২৪ শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, যাদবপুর, রাত ১০.৩০
অনেকদিন পর আবারও ইচ্ছে হল রাত জাগা পেঁচা হতে, পেঁচা হয়ে কি করবো কি করবো ভাবতে ভাবতে ডেকে নিলাম বন্ধুদের, বসে গেলাম আড্ডায়। অদ্ভুত অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা আমাকে প্রতিদিন নিয়ে আসছে বন্ধুদের কাছে। ইদানিং দুটো অদ্ভুত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছি প্রতিদিন, প্রথমটা সাধারণ মাড়ির যন্ত্রণা, কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে কাজ করছেনা কোনো ব্যাথার ওষুধ, সবসময়ই মনে হচ্ছে যেন কিছু একটা বেরিয়ে আসতে চাইছে মাড়ি কেটে। দ্বিতীয় সমস্যাটা বাড়তে থাকা খিদে ভাব যা মেটাতে অক্ষ্ম কোনো স্বাভাবিক খাওয়ার। বুঝতে পারছিনা শরীরের ভিতর ঘটতে থাকা পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি, জরুরী একটা এক্সপার্ট ওপিনিয়ন; কাল অফিস থেকে ফেরার পথেই দেখা করতে হবে ডক্টর ব্যানার্জীর সাথে। আরও একটা কথা বলাটা ভীষণ প্রয়োজন, কদিন ধরেই লক্ষ্য করে চলেছি টাফির অদ্ভুত আচরণ, যে টাফি আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা একটা মুহুর্ত, সেই টাফিই বেশ কয়েকটা দিন থেকেই বজায় রেখে চলেছে আমার তরফ থেকে নিরাপদ দূরত্ব। গতকাল জোর করে কোলে নিতে যেতেই হাতে কামড় লাগিয়ে সেঁধিয়ে গেল খাটের তলায়, তাকিয়ে রইল আমার দিকে এক দৃষ্টে। বড়ই অদ্ভুত ফ্লাফির সে চাহনি, কোনো অচেনা কিছুর থেকে ভয় পেলে গড়ে ওঠে মুখাবয়ব, ধরা পড়ছিল সেই একই চিত্র নীরিহ মুখটাতে। বলা হয় যে কোনো প্রাণীর সিক্সথ সেন্স কাজ করে অসাধারণ, তাহলে ফ্লাফি কি দেখতে পাচ্ছে অজানা আমিকে? একটাই আফসোস, ঈশ্বর লিখে দেয়নি ভাষা নীরিহ প্রাণের মুখে।
২৭ শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, যাদবপুর, রাত ১০.৫০
ভেঙে পড়া শরীরটাকে কদিন টেনে নিয়ে যাওয়া কর্মক্ষেত্রে, প্রাইভেট যেকোনো সংস্থায় কাজের চাপ এমনিই শরীরে নিয়ে আসে ক্লান্তি, অসুস্থ শরীরটার ওপর অতিরিক্ত কাজের যে কি প্রভাব ফেলবে তা আর আমার না বললেও চলে। তবুও দৌড়ে যেতে হয়, এই দুর্মূল্যের বাজারে একবার কাজ হারালে পাওয়া মুস্কিল দ্বিতীয় কোনো সুযোগ স্পেশালি আমার মতো লেট ব্লুমারদের। বসেদের নজর যে সবসময়ই থাকে এমপ্লয়িদের ওপর তার প্রমাণ সুধীর দার আমাকে তার পার্সোনাল চেম্বারে ডেকে পাঠানো। আদেশ দিলেন তিনি আমায় দুদিনের ছুটি নিতে। আপত্তি সত্বেও নিতে বাধ্য করা হল সিকলিভ, ভেঙে গেল আমার একদিনও ছুটি না নেওয়ার রেকর্ড। দিনের কাজ শেষে চোখ গেল ঘড়ির দিকে, সাথে সাথে কল ডক্টর ব্যানার্জীকে, দেখা করাটা তার সাথে আজ ভীষণ প্রয়োজন ছিল।
ডক্টর সমরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী, আমার ভুতো কাকু, বাবার ছোটবেলার বন্ধু। বাবার অকাল প্রয়াণের পর ভুতো কাকুই আমাকে সামলেছেন, আজ যতটুকু হতে পেরেছি তার পিছনে এই মানুষটার অবদান অনস্বীকার্য। জীবনের চরম মুহূর্তে ছাতা হয়ে দাঁড়ানো মানুষটা এখনও মিটিয়ে চলেছেন আমার যাবতীয় আবদার। ক্লান্ত শরীরটাকে দেখে মানুষটি অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন আমার দিকে, ওনার চোখে আমি যেন অজানা গ্রহের কোনো এলিয়েন। দ্রুত আমাকে পাঠানো হল টেস্টিং ল্যাবে, একের পর এক টেস্ট শেষে এসে বসলাম কাকুর চেম্বারে, চলল বিস্তর সওয়াল জবাব, আমি দেওয়ার চেষ্টা করলাম প্রতিটি প্রশ্নের সম্ভাব্য সঠিক উত্তর। কয়েকটা মুহুর্তের মধ্যেই এসে উপস্থিত হল টেস্ট রেজাল্ট, সুগার, ইসিজি, হিমোগ্লোবিন, সব টেস্টই নর্ম্যাল। ভুতো কাকুও অবাক রীতিমতো, শরীরে অস্বাভাবিকতার চিহ্ন না থাকা সত্বেও কিভাবে ভেঙে পড়ছে শরীর সেই নিয়ে তিনিও ভীষণ চিন্তিত। কিছু মেডিকেশন সাথে নিয়ে ফিরে এলাম বাড়ির পথে, ভুতো কাকু এগিয়ে আসতে চাইলেন সাহাযার্থে, কিন্তু আমি নিজেই ফিরতে পারবো এই বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে তিনি ফিরে গেলেন কাজে। অনেকটা লিখে ফেলেছি আজ, হাতদুটো এবার জবাব দিতে চাইছে, এবার একটু প্রয়োজন ঘুমের। শুভরাত্রি বন্ধুরা, আলবিদা।
২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, যাদবপুর, সকাল ৬.৩০
আরও একবার আর্লি রাইজিং। সকাল ৬.৩০, সুপ্রভাত বন্ধুরা, সকাল সকাল আবারও চলে এলাম গল্প করতে তোমাদের সাথে। বেশ কয়েকদিন ধরে ভাঙতে থাকা শরীর আবারও ফিরে এসেছে ট্র‍্যাকে, গতকালের ক্লান্তি শেষে আবারও ফিরে পেয়েছি এনার্জি৷ মনে হয় ভুতো কাকুর ওষুধ কাজ দিয়েছে, মনে হচ্ছে যেতে পারবো অফিসে আবার।
২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, যাদবপুর, রাত ১১.৩০
এ স্ট্রেঞ্জ থিং হ্যাপেন্ড ডিউরিং অফিস গোয়িং। অফিস যাওয়ার মুখেই এল আহেলীর কল, অফিস বেরবার সাথে সাথেই এরকম একটা ফোনকল ভালো করে দিল কাজে যাওয়ার মুড। ফোনে কথা বলতে বলতেই পা বাড়ালাম বাসস্ট্যান্ড অভিমুখে। বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দুরে ক্লাবের মাঠের সম্মুখে আসতেই গতিরোধ হল পরিচিত মানুষের ভীড় দেখে, সকলেই দাঁড়িয়ে চিন্তিত মুখে। জমায়েতের কারণ কি তা জানার কৌতুহল আমাকে টেনে নিয়ে গেল ভীড়ে, আশ্চর্যের বিষয় ভীড় থেকে আমার নাকে এসে টোকা দিচ্ছে সেই পরিচিত গন্ধ যা পেয়েছিলাম অফিসের পার্টিতে, প্রতিদিন পাই আমার কর্মস্থলে। কোনোরকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে এগিয়ে গেলাম সুকান্তদার দিকে, দাদার কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। এর আগে শুনিনি কখনও এমন চুরির ঘটনা, পাড়ার সকলের বাড়ি থেকে উধাও হতে শুরু করেছে পোষ্যের দল, কারোর পাখি, কারোর খরগোশ, কারোর কুকুর বেড়াল। এতগুলো নিরীহ প্রাণীদের নিখোঁজের থাকতে পারে কার হাত ভেবেই কাঁটা দিচ্ছিল গায়ে সাথে জেগে উঠছিল মনে কিছু কে, কেন। হঠাৎ চোখ গেল আমার বিনু কাকুর দোকানের দেওয়াল ঘড়ির দিকে, শুরু হল দৌড়, বাস ছাড়তে বাকি আর কয়েকটা মিনিট।
২৯ শে সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, যাদবপুর, রাত ১১.০০
আজ সকালের আমন্ত্রণে চেনা পথ বদল করল ঠিকানা, চেনা কলকাতার রাস্তা ছেড়ে আজ আমার গন্তব্য হাওড়া সালকিয়া। আন্দুল ছেড়ে আহেলী দীর্ঘদিন হয়েছে সালকিয়ার বাসিন্দা এই খবরটা ছিল অজানা, হবেনাই বা কেন, দীর্ঘ বছরের যোগাযোগহীনতা আমাদের মধ্যে তৈরি করেছিল ব্যবধান। আজ মুছে ফেলে সেই ব্যবধান আবারও কাছে আসার দ্বিতীয় সুযোগ; পৌছে গেলাম নির্দিষ্ট ঠিকানায়। ঘরে পা রাখার সাথে সাথেই সেই চেনক গন্ধ আরও একবার, গন্ধটা ছড়িয়ে আছে ঘরের সর্বত্র। ঝিম ঝিম করে আসছে মাথা, আবারও সেই মাড়ির ব্যথা, আবারও শরীরটা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে অবনতির পথে। আহেলীও অস্বস্তিতে পড়ছে আমার এই অবস্থা দেখে, আমি ঠিক আছি কি না বারবার জিজ্ঞাসা করে চলেছে এই একই প্রশ্ন। আমার চোখে নেমে এল হঠাৎ অন্ধকার।
ঘুম ভেঙে দেখি আহেলী পড়ে আছে বিছানায়, গলার কাছে আঁকা দুটো ফুটো বেয়ে বেরিয়ে আসছে তাজা রক্ত। নাকের কাছে হাত নিয়ে গেলাম আমি, নাহ সব শেষ, এবার আমাকে পালাতেই হবে এই শহর ছেড়ে এমন এক নিরাপদ দূরত্বে যেখানে কেউ জানবেনা আমার অস্তিত্ব, নিরাপদে কাটিয়ে দিতে পারবো বাকি জীবন।
৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, লাটাগুড়ি, রাত ১১.০০
আজ আমার মনে ভীড় করে আসা সব স্বপ্নের উত্তর পেয়েগেছি। স্বপ্নের লাল রঙ আসলে কি এতদিনে স্পষ্ট আমার কাছে, জানতে পেরেছি আশেপাশে ভেসে আসা গন্ধের উৎস কি। শহরের ভীড়ে থাকলে সেই মোহময় গন্ধ আমাকে করিয়ে নেবে বিপদজনক কাজ, তাই শহুরে কোলাহল ছেড়ে লাটাগুড়ির ফরেস্ট বাংলোর ম্যানেজারের চাকরিটা নিয়েছি। যদিও এখানকার লোকেদের কাছে জানাইনি আমার আসল পরিচয়, এখানে আমাকে চেনে সকলে রুপাঞ্জয় সন্যাল নামে, নকল পরিচয়পত্রও বানিয়েছি কিছু লোকজনদের ভালোমতো লক্ষীলাভ করিয়ে। নির্জন এই জঙ্গলে লোকজনের খুব একটা সমাগম ঘটেনা বছরের কয়েকটা মাস বাদ দিয়ে, বাকি সময়টা গ্রাস করে নিঃস্তব্ধতা। এই নিঃস্তব্ধতার মাঝেই চলে ইভিল স্পিরিট বনাম হোলি স্পিরিটের দ্বন্দ্ব, মাঝে মাঝে এই দ্বন্দ্বে ইভিল স্পিরিট জয়লাভ করলে পাড়ি দিতে হয় গভীর জঙ্গলে। এইতো এখানে আসার প্রথমদিনে, একসাথে চারখান হরিণ শিকার হল আমার ইভিল স্পিরিটের, অবশিষ্ট থাকেনি একবিন্দু রক্ত; বডিগুলো প্রপারলি ডিসপোজ করে ফিরে এসেছিলাম ঘরে। তবে রক্তের নেশা বেশী চাপতে দিলে আশেপাশে তৈরি হবে সন্দেহের বাতাবরণ, সো আই হ্যাভ টু কন্ট্রোল মাইসেল্ফ। তাই নেমেছি এক অদ্ভুত লড়াইয়ে, লড়াইটা ইভিল স্পিরিট বনাম হোলি স্পিরিটের, কে জিতবে তা হয়তো বলে দেবে আসন্ন সময়ই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।