• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক বড় গল্পে গৌতম বাড়ই (পর্ব – ৯)

স্মৃতিকথার ঝিকিমিকিরা – ৯

শহরের পূর্বদিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পশ্চিমদিকে নদীর পরে নদী আর বিস্তীর্ণ বালি পাথরের চর।জোত- জমি গ্রাম, ঝোঁপঝাড়, বাঁশবাগান এইসব আর উত্তরদিকে আমাদের গিরিরাজ হিমালয়। দক্ষিণ দিকে যে রাস্তা বেরিয়ে গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলা ডুয়ার্স হয়ে সোজা আসাম আর উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে। এখন অবশ্য শিলিগুড়ি শহরের উপর আর চারিপাশে অনেক জাতীয় সড়ক, মহাসড়ক আর উড়ালপুল তৈরী হয়ে যোগাযোগের পথ আরও সুগম হয়েছে। এতকিছু বললাম এই জন্য যে, আমাদের টানত বেশি ঐ উত্তরদিক আর পূর্বদিক।

(Stork-billed kingfisher, Siliguri outskirt, March’2021. ফটো সৌজন্য: নেচার ফটোগ্রাফার পাপুন ভট্টাচার্য্য, শিলিগুড়ি)
উত্তরদিকে মাল্লাগুড়ি মোড় পেরোনোর পর শহরটার চারপাশের অপরূপ শোভা চোখে পড়ত। দার্জিলিং মোড় থেকে ডানদিক আর সোজা তাকালেই সবুজ আর সবুজ। বড় বড় চা- বাগান। চাঁদমণি আর সামনে দাগাপুর টি- এস্টেট। বয়ে যাচ্ছে পঞ্চনই নদী। আমরা সাইকেল চালাতে পারি এখন, তাই মাঝে-মাঝেই এই সবুজ গায়ে মেখে আসি বন্ধুরা মিলে সাইকেল চালিয়ে আশপাশের অচেনা জায়গাগুলো দেখে আসি। আমাদের সেই সময়ের সাইকেল চালানোর ইতিহাস একটু তোমাদের বলি শোন, হাফপ্যাডেল আগে শিখতে হত ( বেশিরভাগ ) তারপর ফুলপ্যাডেল। আর এই ফুলপ্যাডেল শিখলেই বাবা- মায়ের শাসানি চলত, একদম পাড়ার বাইরে যাবে না। বড় রাস্তায় গাড়ি আর স্কুটার চলে, আর বিশেষ করে বালির ট্রাক। ওগুলো খুব বাজে চালায় ইত্যাদি ইত্যাদি।

(Crimson sunbird… MWLS April .2021. ফটো সৌজন্য: নেচার ফটোগ্রাফার পাপুন ভট্টাচার্য্য, শিলিগুড়ি)
একদিন আমরা পাঁচজন বন্ধু মিলে দার্জিলিং মোড় হয়ে সাইকেল চালিয়ে দাগাপুর চা- বাগান, শালবাড়ি, এখন যেখানে পেল্লায় পেল্লায় বাড়ি আর ইনস্টিটিউট দাঁড়িয়ে আছে। তখন একপাশে টয়ট্রেনের লাইন আর একপাশে চা- বাগান আর শালসেগুনের জঙ্গলে মন ভরে উঠছে। এখন এ রাস্তা বহুবার দেখা। তবুও সবসময় নতুন। পঞ্চনই নদীর পরে দেখতে পেলাম টয়ট্রেন কিছুটা দূরেই। আমাদের তো সেইবয়সটা এগিয়ে চলার, ছুটে চলার। পেছন ফিরে তাকানো নেই। নেই কোন ভয়। এখন ভাবি সমস্ত দুঃসাহসিক কাজ ঐ অল্পবয়সে কতই না করেছি আর তক্ষুণি হয়। তো দিলাম সাইকেল নিয়ে সব পড়িমড়ি ছুট টয়ট্রেনের দিকে। আজকে রেস খেলব টয়ট্রেনের সাথে। ধরেই ফেললাম আমরা মোহরগাঁও গুলমা টি- এস্টেটের আগে। বিদেশীরা হাত নাড়ছে, আমরাও নাড়ছি।

(জঙ্গলে গড়ে ওঠা গ্রাম। ফটো সৌজন্য: নেচার ফটোগ্রাফার পাপুন ভট্টাচার্য্য, শিলিগুড়ি)
কেউ মুখ দিয়ে সিটি বাজাল। বেশ মজা হল। এখানটায় টয়ট্রেনের লাইন সোজা আর রাস্তার একপাশ দিয়ে। সেইজন্য স্পীড বেশি। বেশিক্ষণ পারলাম না। টয়ট্রেন সোজা শুকনার দিকে এগিয়ে গেল। আমার সামনের গভীর বন- জঙ্গল আর সুউচ্চ সবুজ পাহাড় দেখে অন্যকিছু আর ভালো লাগছিল না। শহর থেকে আট- দশ কিলোমিটার গেলেই হিমালয় পাহাড়। ভাবতো, এ কী পরম পাওয়া নয়! আর সাইকেল চেপেই হিমালয়ের কোলে। দূরে নীল রঙের টয়ট্রেন ধোঁয়া উড়িয়ে সবুজ বনের পথে ঢুকে যাচ্ছে আর স্টীম ইঞ্জিনের সেই মায়াবী কু ঝিক্ ঝিক্ শব্দ, এখনও স্বপ্নে এসে ধরা দেয় তারা। মন খারাপ হয় আবার আনন্দ- ও হয় ।

(টয়ট্রেন এ কোথায় চলেছে লাইন ছেড়ে? ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই)
আমাদের শহরটার যারা পুরানো বাসিন্দা তারা জানেন, রেল আর পাহাড়, চা- বাগান , জঙ্গলের ছোঁয়া আমাদের প্রত্যেকের জীবনে আছে। তারপর সেদিন এগিয়ে গিয়ে হিলকার্ট রোড ধরে শুকনা স্টেশনের দিকে গেলাম না, তার আগে বাঁ হাতে খাপরাইলের রাস্তা ধরলাম। খাপরাইল ক্যান্টনমেন্ট। সেখানে গিয়ে এক এডভেঞ্চারের মুখোমুখি হলাম। সে গল্প আজ আর নয়—

এর পর আবার
সামনের শনিবার—–

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।