• Uncategorized
  • 0

এলাটিন – বেলাটিন কবিতায় জি কে নাথ (গুচ্ছ কবিতা)

উৎসর্গ কবি শঙ্খঘোষ

(অক্ষরজাত বৃক্ষের চিরশোক)

১|
প্রথম পাঠে জন্ম দেওয়া অধাতব মাটির নরম ভাষায় লাফিয়ে উঠছে উপুড় হয়ে সমর্থিত সংক্রামক
এ শহরে আসার জবানবন্দিতে
ভিন্ন সুরের হতাশায় লেপ্টে যায় আঙ্গুলের কোলে ক্লাসরুম ফাঁকি – শ্রেণীসংগ্রাম
মুগ্ধ হয়ে নিজের ভিতরে বার হয়ে আলাপ শেষে জ্বলে উঠি অস্থির দুঃস্থ যেন বিচিত্র পেশার ছাগ এজেন্সির লোক
দেখানো আছে শূন্যস্থানে জীবনের মতো আবিস্কারক
ঘড়ির অতিকায় অন্ধকারে শ্বাস আটকে অসহায় প্রতীক্ষায়
বাইরে বেরিয়ে প্রকাশনা সংস্থা থেকে বই কেনার ভিতর দেখা অক্ষরপৃথিবী জুড়ে আরেক সম্পর্কের পৃথিবী দেখছি
ফারাক সমস্ত কালের জন্য দৃষ্টিজন্মের শাব্দিক মুগ্ধতা ।।
২|
যে ছেলেটি কোলে উঠবে বলে কাঁদছে ওকে অরণ্যের সুগন্ধ ভরে দাও। যে মেয়েটা হেঁটে যাচ্ছে বাংলাদেশ বুকে পিঠে পাহাড় পাথর ওকে চেনাও গহনে থাকা অসহায় মানুষের লড়াই ।
সুবাসিত হাট ভেঙে গেছে , শনিবারের মাঠে পড়ে আছে সার বেঁধে পুরানো কবিতার রোদ
ফিরে গেছে কিছুজন
বৃষ্টির ভিতর আরও বিষাদ বিশদ
তবুও জলের শিকড় টান
বুকের ভেতর হোম অগ্নির
পোড়া কাঠ কয়লার ছাই
বৃষ্টির ভিতর বিকেল উপচে আছে সমস্ত না পাওয়ার দিকে
ডুবে গেছে গোড়ালি থেকে হাঁটু অবধি থৈ থৈ জলে ।।
৩|
সন্ধ্যা ফেরৎ বেপথু ঘুরতে ঘুরতে শেষে মনের সহায়তায় নিজের কাছে ফিরছি
শব্দ অক্ষরে ঝরে পড়ে সাদা কাগজে
বাতিল কুপিজ্বলা মুক্ত মাথায় আঘাত রেখে অবমুক্ত
পাতায় পাতায় সবুজে ভরে গেছে ঘর
বেঁকতে বেঁকতে পায়ের চাকা গড়িয়ে নিচু মানুষের দিকে এগিয়ে গেছে অসুখে জং ধরা খাঁ খাঁ অদূরে ছায়াক্ষেতে বসে মাটি কোপাচ্ছে নিশ্ছিদ্র লোকটা
রাত নেমে আসলে ছিদ্রের ভিতর ভরে ওঠে অসুখ
কিছু অসমর্থ মানুষজন আসে
ক্রমে মাথার ছিদ্র জ্বলে ওঠে কালের অবহেলিত হলদে আলোয়
মাটির প্রসারিত দিগন্ত অজস্র হাত হয়ে গেছে
সেই সব যূথবদ্ধ অন্ধকারে
দগদগে শিরা বেয়ে নেমেছিল জোছনাতাড়িত ধ্বনি।।
৪|
জলদ মাইল দূরে বাতাসের পিঠ উল্টে আকাশের দিকে প্রতিবিম্ব কাত হয়ে আকাশট্রলার ডুবে যায়
বাদামি রজ:স্বলা শরীর জুড়ে শ্রাবণ বিকেলের বাঁশপাতার ধর্ষণ, তোলপাড়
জলমগ্ন মৃত স্বপ্নমেঘনারী
নিভন্ত জোনাকি পাখায় খেলা করে অভিজ্ঞান মেধা পরিশ্রমে নিচু মানুষের অন্ধতা—
ভিতরে ভিতরে বাজ পড়ে করাৎ
ঝলসে গিয়ে দেখি হৃদয় পুড়ে এখন একদম একা হয়ে গেছি
পৃথিবীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে
মন:শূন্য অসম্পূর্ণতায় একা
অষ্টাদশী পৃথিবী অসচ্ছলতার কাছে ডুবে যাচ্ছে আনন্দে মেতে ওঠা স্বপ্নসন্তান নিয়ে ।।
৫|
এক কালে জলের নীচে থাকা ডাইনির সচতুর গোপন দেওয়াল ভেঙে
সাধুদের ঘুম সভ্যতার পাহাড়ে
সন্ধ্যাজীবী বৃক্ষফড়িং বৃষ্টির ভিতর
দেবতাদের জন্য রাখা কবির জীবনস্বপ্ন দীপ্তিময় সহজিয়া ঘ্রাণের তরলে ভাসে
মৃত্তিকা সৌন্দর্যের কিছু ছেলেমেয়েরা হতাশার মিছিল থেকে গা বাঁচিয়ে কাব্যসূচীর শিল্প সুষমায় মগ্ন বৃহৎ জলীয় ক্যানভাসে ছেড়ে দেয় নির্ভেজাল একটা বেড়াল
অরব দু চোখের ঘেরাটোপে মিলিয়ে নিচ্ছে আমার মাংস দূত
প্রত্নহাড়ের ভাটিয়ালি ফুঁ
আবহমানের মূর্তি নক্ষত্র হয়ে ওঠে
ভেঙে যায় কৌলিন্য
মর্মমূলে বধ করেছি তাড়া খাওয়া মরা নেভানো জলদার
বৃক্ষঘাসহীন পিছল দৃষ্টির সবুজে ডিম ভাঙা মৃত্যু যেন দূর অরণ্যের গান
কুড়াই
জলসিক্ত বোকা বিস্ময়ে কথার সাক্ষ্যে হাজির
এখনও বর্তমান
….শুনশান আশেপাশে
যুবক বয়সে ফুয়েল খায় ছোটে বার্তাবাহক হেমন্তের বড়ো শ্যালক
অথবা আরেকটু বোধহয় আরও বেশি তুচ্ছ ফ্লায়িংওভার সার্ভিস চাইতেও
দূরত্ব হয়ে ওঠা কথা
বিপদজনক ঝুলে আছে ভেঙে ঢাকার দিকে ।।
৬|
আমার দাবি নিজের সাথে জুড়তে জুড়তে প্রেসে ছাপা গন্ধের ভিতর খোঁজে নামি
খণ্ডিত ভ্রমে দ্বীপের মতো
লিভিংস্টেশন পাল্টে
অজস্র ফরফর উল্লাসের সবুজ ফোঁড়া ফেটে আটকা পড়া ক্যাম্পের বিহারীদের মতন
কাঁচের সূর্যাস্ত ডুবে আছে টায়ারটিউবে—-
আমাদের স্বতন্ত্র স্পর্ধা থমকে ভেঙে দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃত্যুমুখর উৎসব দিকে দিকে
বিলুপ্তমান খুব সহজ ঘরোয়া ভঙ্গিতে শোয়ানো ব্যবহারিক শব্দে অন্ত:স্থ অন্য এক ধৃত সত্তা আলোহীন বিচ্ছুরিত পৌনঃপুনিক
চারদিকে ঠান্ডা চকচকে অবিভাজিত সম্মোহিত ছায়ার বিস্তার
অসমাপ্ত নামে স্বতঃস্ফূর্ত তীব্র আকাঙ্ক্ষায় সন্ধ্যাবীজধানের মালি
সস্তা মানুষজনের ভাতের মতো ফোটা
আরও বৃষ্টির এঁদো ডোবায় নামছে….দেহ জুড়ে নানাবিধ কণ্টকিত ইশারা
তিক্ত যাপিত চুরচুর
নদীভাঙা নিরামিষভোজী হাহাকারে স্বাগতোক্তির মতো বিপরীতে প্রবল হয়ে উঠি
দুমড়ে মুচড়ে আটকে গেছে
খোলামকুঁচির মতো
সখ্যহৃদদাঁড় দুৰ্মর শীতলতায়
আর সামলানো গেলো না।।
৭|
নকশাহীন অন্ধকার উপকন্ঠে একাকার
শিরাওঠা স্বল্পদৈঘ্যের হাসপাতালের ছিন্ন স্বভাবিকত্বে পুঁজের বিলে জাল ফেলে লুকিয়ে চোরাগুপ্তচর
ভাসে শনির প্রত্যন্ত গ্রাম
অনাময় ঝরে যায় চুলের ভিতর হলুদতর সূচিত নিগূঢ় এর দিকে জোনাকি অক্ষর পাতায় পাতায় নির্বাক শিসে ছায়া রেখে অনেকটা পথ
উবে যায় জীবনের গন্ধ
জনপদ ঘিরে জমে ওঠা আঙুরের আভাময় দুপুরমাখা পেটের উপর সায়াহ্নের আকাশ পাখি জ্যান্ত হয়ে নিজের পিছু ছোটে ছায়ার পিছু
আলোপথে আবছা শব্দকুহকে ডানামুড়ে পলকা রং এ ছড়ানো ছায়ানেশায় সন্ধ্যার পরাধীন কাঙালের হাঁ মুখ গিলছে গোটা বেঢপ জটিল পৃথিবীর কান্না
আধোঘুম ঘিরে থাকে অসফল পরিযায়ী খসখসে আওয়াজ
নির্জন জিভ খসা প্রাকৃত জল ছায়ায় কাঁপে দূর অবধি কালচক্র
ক্রমপরিনতি থেকে বিষণ্ন বিনিয়োগে
জলের শান্ত গভীরে রক্তমাংসের ফলবতী রাত্রিতে শুধু আমি জেগে আছি অখন্ড নৈঃশব্দের বেপথু চমকহীন সওয়ার ।।
৮|
শব্দহীন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে জীবন পারাপারের মাঝে অদৃশ্য সেতু-নিবিড় আশ্রয়
ছাদহীন অনেক দূর এক শূন্য মহাশ্মশানের দিকে তাকিয়ে আছি
তিতাস ধ্বনি বুকে জোড় হাত করে বসে নিষ্প্রভ
অক্ষরবীজ ফেটে উড়ছে রাতের নির্মেঘ আকাশে
বীজতলার প্রদীপের উজ্জ্বলতায় বিমর্ষ ছায়া ফেলে আত্মার সমর্পণ
নিঃঝুম ভিতরে নিলয়ের আড়ালে নগ্ন তরলপ্রভায় জনচিহ্নহীন ভেসে গেছে কত পথ
ঢেকেছে সবুজ পরাগে, ঘন নিবিড় প্রশান্তিমাখা মুখ
স্পর্ধা ছুঁয়ে অগ্নিতৃষ্ণা বাটি উপুড় হয়ে আছে ঘুমভরে বুকের একলা শূন্যে
বৃষ্টির অসমাপ্ত ঘাসে ঘাসে—-
স্থায়ী কোনো প্রবাদের মতো নিটোল পথে ছুটে গেছে কিছু নিঃশঙ্ক চাঁদঅশ্ব ধুম্র শ্বেত
ত্বক চিরে সবুজ মায়াবী অজস্র খোলস পড়ে আছে ঝুরো মাটির ধারাআলোয়
লোনারাত্রির ক্ষয়ে যাওয়া অন্তহীন এ চোখে রক্তের নাড়িজাত ভাষার গহন-গম্ভীর অথচ
বিষাদের শান্ত দূর অরণ্যসন্তান মাঝে বয়ে গেছে প্রাচীন বাকলঘেরা বেলা
থমথমে পাঁজর ভেঙে থমকে আছে সময়বিহীন কতো সহজ শব্দ—-
বন বন ঘোরে ওঠে নামে
মায়াধূসর জোনাকি আলোর অনুসরণে দূরগামী কালের ছায়ায় ধুলোর ইতিহাসচক্র
অনিশ্চিত চুপচাপ কিভাবে যেন মন্থর ঘুমের আড়ে হারিয়ে গিয়েছে পিতৃশস্যভূমি
অনেক হলো এবার বাঁধা সম্পর্ক ছিন্ন করে এভাবেই ফিরে যাচ্ছ কথার আড়াআড়ি একা
সমস্ত পোশাকের শাদায় নকশানীলজরির জলছায়া অবসানে
আওয়াজের ঘন হওয়া উচ্চারণে শ্মশান ফেরৎ স্বজনেরা ঠিক যেন মেঘের ভিতর মাথা ঢুকিয়ে তালুবন্দি শব্দ তোলে
প্রজ্জ্বলিত দাউ দাউ আগুনের ভাষায় আমি শুনি কেবল ‘বিদায়’ ।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।