বস্তির অন্য ছেলেদের চেয়ে পরিতোষ আলাদা। অলকেশ বাবু তা জানেন। তিনি ক্লাস নিতে নিতে দেখেছেন পরিতোষ মেধাবী না হলেও মনোযোগী। আজ তার অমনোযোগীতার কারন জানতে চেয়ে লক্ষ্য পড়ে জানালার ছোট্ট ধাপে শুকোতে দেওয়া কয়েকটা বই। বুঝতে পারলেন কালকের রাতে ভাঙ্গা ঘরে বৃষ্টির কারণে ওই অবস্থা।
মনে পড়ে গেল তার ছেলেবেলা আর এক গরীব শিক্ষকের কথা। নীলমণি বাবুর জীবন বলতে ছিল অনাথ অলকেশ আর সামান্য শিক্ষকতা। অলকেশকে তিনি নিজের সন্তানের মত মানুষ করেছেন। অলকেশযে অনাথ সেকথা একটিবারও মনে হয় নি । প্রথমেই শহরের বড় স্কুলে চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছিল অলকেশ। অলকেশের ইচ্ছে ছিল মাস্টারমশাইকে তার সাথে শহরে নিয়ে যাবেন। সারাজীবন গ্রামেই থেকেছেন আর অলকেশ শুধু নয় তার কাছে ঋণী হয়ে রয়েছেন অনেকেই। কারো মেয়ের বিয়ে, কারোর অসুস্থতা, কারো আবার পয়সার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হওয়া ,সবেতেই দরাজ ছিলেন নীলমণি বাবু।
অলকেশ তাই শেষ বয়সে মাস্টারমশাইকে নিজের কাছে রেখে দিতে চেয়েছিল। অলকেশের চাকরিতে নিয়োগের কয়েক মাসের ব্যবধানেই মারা যান নীলমণি বাবু।অলকেশের শেষ ইচ্ছেটুকুও আর পূর্ণ হয়নি। শেষ বয়সে নিজের জরাজীর্ণ বাড়ি আর সামনের কয়েক ছটাক জমিটুকুও দান করে যান নীলমণি বাবু স্কুলকে।
দীর্ঘ পনেরো মাস ধরে, তার জমানো সমস্ত পুঁজি বিনিয়োগ করে স্কুলের নতুন দোতলা হোস্টেলের উদ্বোধন করলেন আজ অলকেশ বাবু।পরিতোষ, মৃণাল, শংকর অনেক ছাত্ররা মন দিয়ে পড়ার সুযোগ পেলো। নীলমণি বাবু মারা যাবার কয়েক মাসের মধ্যেই অলকেশ চাকরিতে ট্রান্সফার নিয়ে গ্রামের স্কুলে ফিরে এসেছিল।
অন্তরীক্ষ থেকে একটি তারা আজ মিটমিট করে বলে উঠলো আমি উপযুক্ত গুরুদক্ষিণা পেয়েছি অলকেশ।