• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৬১)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৯৭

গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হয়েও খুব ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরকে আমার আর চেনা হলো না। অথচ চোখের সামনে দেখেছি দুবেলা পুজো অর্চনা। এক আধবার মন্দিরেও গেছি। কিন্তু তবুও ঈশ্বরকে চেনা জানার ইচ্ছা কোনোকালেই আমার হলো না। ছেলেবেলায় ভাই বোন বন্ধুদের দেখেছি ঈশ্বর নিয়ে কত কত আবেগ। অথচ তার ছিটেফোঁটাও আমার মধ্যে দেখা গেল না।
সবাই যখন মন্দিরে যেত আমি তখন বাগানে আমগাছের নীচে। কখনও আবার নদীর ধারে। সকাল দুপুর বিকেল কোনো ঠিক ছিল না। যখন সময় পেতাম তখনই যেতাম। কোনো কোনো দুপুরে গাছের নীচে ঘুমিয়েও পড়েছি। কখনও মনে হয় নি আমি ঘর ছেড়ে বাইরে আছি। সেই কত ছোটবেলা থেকেই গাছ নদী আমার পরম বন্ধু।
আসলে ঈশ্বর আমার কাছে মাটি। আমার দাঁড়াবার জায়গা। একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থান। যেখানে দাঁড়িয়ে একেবারে দিগন্ত পর্যন্ত দেখা যায়। আবার সেখান থেকে চলে যাওয়া যেখানে খুশি যেমন ইচ্ছা। যেন পিতার প্রশস্ত প্রাঙ্গণে ইচ্ছেমতন নেচে গেয়ে বেড়ানো।
আসলে তিনটি কারণের জন্যে আমাদের মধ্যে ঈশ্বর ভাবনা আসে —— নির্ভরতা, পার্থিব সম্পদ প্রাপ্তির লোভ এবং অনেকের মধ্যে থেকে নিজের শ্রেষ্ঠ আসনটি অধিকার। দুঃখ হলে সবাই ঈশ্বরকে জানায় আমি সেই কোন ছেলেবয়েস থেকে কষ্ট দুঃখ আনন্দ যা-ই হোক না কেন নদী গাছকে জানাতাম। জানানো বলতে ওদের কাছে গেলেই আমার দুঃখ কষ্ট কমে যেত। এদের সঙ্গেই তো সবসময় কাটাতাম। তাই এরা যদি আমার বন্ধু না হয় তাহলে কে হবে? তাছাড়া আরও একটা ব্যাপার, আমি কখনও চাই নি কেউ একজন থাকবে যিনি আমার সব দুঃখ ঘুচিয়ে দেবেন। আমি চেয়েছি আমার পাশে থাকুক।
চোখের সামনে বাবাকে দেখেছি ভীষণ অভাবের মধ্যেও প্রানখুলে হাসতে। যা পেয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট। নিজের আর্থিক অবস্থা নিয়ে আমি কখনও শুনিনি বাবা কারও কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে। চোখের সামনে এত বড়ো উদাহরণ থাকতে আমি কি পড়তে যাব আর কার দিকে তাকাতে যাব!
আজ পর্যন্ত আমি কোনো প্রতিযোগিতাতেই নেই। ছাত্রাবস্থায় অথবা আরও কয়েকটি জায়গায় একেবারেই অনিচ্ছাকৃত কোনো কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছে কিন্তু আমি ছিলাম একেবারে চিন্তামুক্ত। আমি অনেকদিন আগেই জেনে গেছি এখনে আমার কিছু পাওয়ার নেই। চাওয়ারও কিছু নেই। দেখানোরও কিছু নেই। আনন্দে থাকাটাই সবচেয়ে প্রধান ব্যাপার।
তাছাড়া আরও একটা ব্যাপার আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিত, যাকে আমি চিনি না জানি না, শুধুমাত্র বিপদের সময় আর কিছু পাওয়ার জন্যে তার কাছে গিয়ে কি করে হাত পাতব?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।