সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৭৪)

সোনা ধানের সিঁড়ি

১১০

কয়েকদিন ধরে ফেসবুক খুব সরগরম একটি বিষয় নিয়ে। যদিও এটা নতুন কিছু নয়। হাতে একটু সময় থাকলেই লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েন তর্কাতর্কি করতে। কোনো সমাধান সূত্র এই বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসে না। তাহলে উদ্দেশ্য? যে সমস্ত পত্রিকা এবং পত্রিকার সম্পাদকদের ওপর রাগ আছে তাদেরকে মুখের আরাম করে কিছু বলা এবং আলোচনা শেষে আবার নিজের বৃত্তে ফিরে আসা।
বিষয়টি হল, লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকদের সৌজন্য সংখ্যা দেওয়া উচিত না উচিত নয়? প্রতিদিন নরমে গরমে নানান আলোচনা দেখছি। আমি একই কথা বারবার বলতে চাই না। কেন সেই সমস্ত লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা পত্রিকা করতে আসেন যারা সৌজন্য সংখ্যা দিতে পারবেন না অথচ পত্রিকা করবেন —— এই সমস্ত আলোচনায় জলই শুধুমাত্র ঘোলা হয়, কোনো সমাধান বেরিয়ে আসে না। আবার এটাও সত্যি যত আলোচনাই হোক আর যত বিরুদ্ধ বক্তব্যই উড়ে আসুক যারা পত্রিকা করার ঠিকই করবেন। তাই এসব আলোচনায় যাওয়ার বিন্দুমাত্র স্পৃহা আমার নেই।
আমি একটি বিশেষ দিকেই আলোকপাত করতে চাই, যেদিকটা প্রায় কেউই ছুঁয়ে দেখছেন না। আমাদের রাজ্যে লিটল ম্যাগাজিনের বিক্রি খুবই কম। যদিও বিশেষ বিশেষ লিটল ম্যাগাজিনের বিশেষ বিশেষ সংখ্যার বিক্রি বেশ ঈর্ষনীয়। বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন মেলায় অংশগ্রহণ করে এই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। কিন্তু অনেক লিটল ম্যাগাজিনের সাধারণ সংখ্যার বিক্রি খুবই কম, কোনো ক্ষেত্রে একটিও নয়। এইরকম অবস্থায় কোনো লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক যদি পত্রিকা করতে আসেন তাহলে তাঁকে তাঁর পত্রিকার লেখকদের ওপর নির্ভর করতেই হবে। কোনো সম্পাদক তাঁর পত্রিকায় একশ জন লেখককে রাখছেন এবং তিনি পত্রিকা ছাপছেন একশ কুড়ি থেকে ত্রিশটি। লেখকদের বিক্রি করে বাকি সংখ্যাগুলি তিনি বিভিন্ন পত্রিকা দপ্তরে পাঠাচ্ছেন রিভিউয়ের জন্য।
আমার আলোচনা থেকে অনেকেই একটা প্রশ্ন আমার দিকে ছুঁড়ে দেবেন। আমি যে বলছি, পশ্চিমবঙ্গে লিটল ম্যাগাজিনের বিক্রির পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু একটা কথা বলুন তো, যদি সত্যি সত্যিই কেউ সেই বিক্রি না হওয়া পত্রিকাগুলি কিনতে যান তিনি কি সেখান থেকে সত্যিই কিছু পাবেন? হ্যাঁ, এই প্রশ্ন আমি এড়িয়ে যেতে পারব না। আর এটা ঠিকই সেই সমস্ত পত্রিকাগুলিতে কেনার মতো কোনো উপাদানই নেই। কারণ একটাই, সম্পাদক তাঁর পত্রিকা বিক্রির কথা মাথায় রেখে অপাঠ্য সব কবিতা পত্রিকায় রাখেন, যিনি লিখেছেন তিনি একটি বা দুটি পত্রিকা অবশ্যই কিনবেন এই আশায় বা কিনতে বাধ্য থাকবেন। আবার তিনি যে তাঁর পত্রিকায় মূল্যবান লেখা রাখবেন সেটাও সাহস করতে পারেন না, কারণ তিনি তখন লেখকদের পত্রিকা তো বিক্রি করতে পারবেনই না উপরন্তু তাকে সৌজন্য সংখ্যা দিতে হবে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখককে সাম্মানিকও দিতে হতে পারে। তাই একটা জিনিসেই সব সমস্যার সমাধান সেটা হল লিটল ম্যাগাজিনের বিক্রি। কারণ তখন সম্পাদকরা আর পত্রিকা বিক্রির চিন্তা মাথায় আনবেন না। আর অপাঠ্য সব লেখার হাত থেকেও লিটল ম্যাগাজিনের পাতাগুলোও মুক্তি পাবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।