খুব ছোটবেলায় তখন সিক্স কি সেভেনে পড়ি দোলের দিন দেখতাম অনেকেই রঙ মাখতে চাইতো না। অনেককেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাখানো হতো। মনে প্রশ্ন জাগতো, কেন মাখতে চাইতো না? তাহলে কি দোল সকলের নয়? রঙ কি সকলের মধ্যে গিয়ে পোঁছায় নি?
আরও একটা জিনিস মনকে নাড়া দিত, মুসলমানরা কিছুতেই রঙ মাখতে চাইতো না। প্রশ্ন জাগতো, উৎসব কি কোনো ধর্মের হতে পারে? উৎসব কি মন-প্রাণ বাদ দিয়ে হতে পারে? যদি তাই হয় তাহলে উৎসব মানে তো আনন্দ। আনন্দ কোনো ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে ! কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারতাম না দোল উৎসব হিন্দুদের। ঠিক এখান থেকেই আমার উৎসব থেকে সরে আসা। পরে যখন আরও বয়স বেড়েছে তখন দেখেছি উৎসব মানে একটা দ্যাখানেপনা। কোনো প্রাণের টান নেই।
পরে যখন আরও সময় গেছে তখন আরও নানান প্রশ্ন মনে জেগেছে। উৎসবের কোনো আদর্শ থাকবে না? যে আদর্শ সবাই মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। যখন থেকে বোধ চেতনার উদয় হয়েছে সেই সময় থেকে আমি দোল উৎসব থেকে অনেক দূরে। রঙে হাত দিতে গেলেই মনে পড়ে যেত রবীন্দ্রনাথের সেই কথাগুলো, “রঙ যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে “। হাত স্তব্ধ হয়ে যেত। রঙে হাত দেওয়ার সত্যিই কি কোনো যোগ্যতা আমার আছে ! মনের কাছ থেকে কোনো উত্তর আমি পাই নি। তার মানেই তো আমি অযোগ্য।
প্রকৃত রঙের মানুষকে আমি চিনতাম। তিনি হলেন শিল্পী প্রকাশ কর্মকার। তাঁর স্টুডিওতে বসে বসে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ছবি আঁকা দেখতাম। তিনি ডুবে আছেন তাঁর ক্যানভাসে। কোনো হুঁশ নেই। ক্যানভাসের দিকে তাকিয়েই তিনি রঙ নিতে তুলি বাড়াচ্ছেন। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখতাম, তাঁর তুলি প্যালেট থেকে সঠিক রঙকেই তুলে নিচ্ছে। চোখে মুখে কি অদ্ভুত প্রশান্তি। কোনোদিন এমন দেখি নি তাঁর তুলি ভুল রঙকে এসে ছুঁয়েছে। আমি ঠিক এমন করেই রঙকে চিনতে চেয়েছি। না, আজও পারিনি। কোনোদিন পারব কিনা তাও জানি না। যতদিন না পারি ততদিন রঙ আবির থেকে শত হাত দূরে থাকব। আমার মতো অযোগ্য লোকের এ ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।