সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ২৫)

আরশি কথা

আজ ঝোরাদের এডিটিং অফিসে কাজ ছিল. ডকুমেন্টারির এডিটিং চলছে. ক্যামেরা থেকে কম্পিউটারে লোড করে, কাটছাঁট চলছে. শান্তিনিকেতনে শুট্যিং পর্ব, তারপর কলকাতা পর্ব. ড: মঞ্জরী বসুর রেকর্ড করা কথাগুলো আবার শুনতে শুনতে ভদ্রমহিলার ক্যারিস্মাতে মুগ্ধ হয় ঝোরা. যেমন রূপসী, তেমনি বিদুষী. মা দুর্গার মত টানাটানা চোখ দুটো, শ্যামলা বরণ. মাথায় ঘন চুল স্টেপ কাট করা. ইন্টারভিউয়ের দিন ক্রীমরঙা তসর পরেছিলেন, টেম্পেল পাড় দেওয়া. বাঁ হাতে সোনার চূড়ি চারখানা, ডান হাতে শুধু ঘড়ি. ঝোরা খেয়াল করেছে মঞ্জরী স্ক্রোলের গল্প যখন বলেন চোখে তখন বিস্ময়ের সাথে সাথে খেলা করে এক ক্ষিদে, এক অসম্ভব জ্ঞান পিপাসা, যা সর্বগ্রাসী.
বিদ্বান মানুষেরা এমনি হন বোধহয়. একেই বুঝি জ্ঞান পিপাসা বলে. ড: মঞ্জরী বসুর অংশটুকু এডিটিং হয়ে যাবার পর এডিটিং অফিস থেকে বেড়িয়ে আসে ঝোরা.
বাড়ী ফিরে আজ আবার খাবার টেবিলে দেখা হয় সকলের. আজকে মায়েরাও রয়েছেন দুজনেই. ঝোরাকে জিজ্ঞেস করেন তাঁরা কদিনের জন্য বাইরে যাবে, কবে ফিরবে ইত্যাদি. সমস্ত ভ্রমণ সূচী, সঙ্গে কে কে যাচ্ছে সব শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে দু জনে যে যার ঘরে শুতে যান. সুযোগ বুঝে আকাশলীনা বলে ‘তোমার অপূর্বর কি খবর গো মা?’.
‘আছে, কাজ করছে, তবে একটা জিনিষ চোখে পরেছে আমার, অপূর্ব আর ড: মঞ্জরী বসুর বিষয় এক. সিনো টিবেটিয়ান ধর্ম এবং চাইনীস ভাষা, কিন্তু অপূর্ব মঞ্জরী বসুকে এড়িয়ে চলে. কোন আলোচনা দুজনের মধ্যে হয় নি কখনো.’
“হতে পারে ছেলেটি রিজার্ভড, তারাতাড়ি মিশতে পারে না’ স্থিতধি বলেন. ‘ যাক গে তোরা খাওয়ার পাট চুকিয়ে নে, আমি চললাম কাজ আছে’ স্থিতধী স্টাডিতে চলে যান.
আকাশলীনা বলে ‘ কি মনে হচ্ছে মা অপূর্বর কি ড: বসুর জন্য ক্রাশ হচ্ছে? এখন কিন্তু বয়েসে বড় মহিলাদের প্রেমে পড়া ইন থিং. সার্চ অফ এ মাদার ফিগার, তাই হয়তো এড়িয়ে চলছে ড: মঞ্জরীকে’. “তোর জন্য কোন জুনিয়রের ক্রাশ হল না কি? হঠাৎ ক্রাশের কথা মাথায় এল কেন তোর? ‘. ঝোরার রসিকতার খুব একটা আমল দেয় না আকাশলীনা.’ সময় নেই আমার অত, তুমি অপূর্বকে নিয়ে ভাবছিলে তাই বললাম, যা সুন্দরী ড: বসু ‘. ‘সেরকম তো মনে হল না, ড: বসু অত্যন্ত রাশভারী মহিলা. উনি এসব পাত্তা দেবেন বলে মনে হয় না’ কথা শেষে টেবিল গোছায় ঝোরা. শুতে যাবার পরেও অপূর্বকে মন থেকে সরাতে পারে না সে. কেমন যেন অদ্ভুত ছেলেটা. এই কথা বলছে, এই চুপ করে যাচ্ছে, আবার মাথা গুঁজে ল্যাপটপে লেখালিখি করছে. আজ ভয়েসওভারের কাজের জন্য তো স্টুডিওতে থেকেই গেল. আর একটা কথা বলল অপূর্ব. স্ক্রোলে বলা আছে এক মায়ারজ্যের কথা. সে রাজ্যে নাকি সবই মণি মাণিক্যের তৈরি.
এ রাজ্য কি মায়ারাজ্য ? না পৃথিবীর কোথাও এর কোন ঠিকানা সত্যি আছে? পাহাড়ের আনাচে কানাচে এমন রাজ্য কি নেই? যা মায়াময়, ছায়াময়? মায়ারজ্যের কথা শুনে তো ঝোরার ক্ষীরের পুতুলের সেই মায়ারাজকন্যার দেশের কথাই মনে পড়ছিল.
বাস্তবের কোথায় শেষ আর কল্পনার কোথায় শুরু কেই বা বলতে পারে. ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ঝোরা।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।