আগামী এক মাস তুমুল ব্যাস্ততায় কাটবে ঝোরার.চাইনীস স্ক্রোল নিয়ে কাজ. প্রচুর দৌড়দৌড়ি আছে. রাতে আকাশলীনার কাছে গল্প শোনার পর প্রফেসর মঞ্জরী বসুর সাথে দেখা করার বাসনাটি বেশ জাকিয়ে বসেছে. ভদ্রমহিলার বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে যেমন পড়াশোনা তেমনি চাইনীজ ভাষা নিয়ে অপার পান্ডিত্য. দক্ষিণ ভারত থেকে শান্তিনিকেতন আসছেন পাকাপাকি ভাবে, চীনা ভবনে শিক্ষকতা করতে. একবার ওনার সঙ্গে দেখা করতেই হবে. ঝোরা তেল, সাবানের বিজ্ঞাপন লেখে ঠিকই, তবে ইতিহাস নিয়ে ঝোরার আকর্ষণ বরাবর. ওই চাইনীজ স্ক্রোলের আড়ালে যে আরও কত গল্প রয়েছে কে জানে. ঝোরা বরাবর কল্পনাবিলাসি. এই কাজটা করতে গিয়ে হয়তো আরও কোন অজানা রূপকথার সন্ধান পেতে পারে. আবার কোন নতুন আরশীকথার.
কাল আকাশলীনা যা গল্প বলেছে ঝোরা অফিস যেতে যেতে খানিক ঝালিয়ে নিল মনে মনে. প্রফেসর মঞ্জরী বসু সাথে করে একটা লাল রঙের স্ক্রোল নিয়ে এসেছিলেন সেমিনারে. একটা বিশাল আয়নার ব্যাবস্থা ছিল সেমিনার রুমে. লাল স্ক্রোলটা মেলে ধরলেন আয়নার সামনে, আয়নাটা এমন ভাবে রাখা ছিল জানলার সামনে, যে সেই আয়নার কাঁচে মেঘ রৌদ্রের অলিন্দে চলা এক মায়াপুরীর ছায়া পড়ছিল. প্রফেসর মঞ্জরী বসু যখন রক্তলাল স্ক্রোলটি আয়নার সামনে মেলে ধরে সোনালী লেখাগুলোর উপর হাত বুলিয়ে গল্প শুরু করলেন খুলে গেল আরেক মায়া জগত. এক নারী মূর্তি আর এক এক মা পাখীর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি ছাত্র ছাত্রীদের. আর তার পাশে কিছু লেখা. লেখাগুলো মিরর ইমেজে. প্রফেসর বোস পড়তে থাকেন. চাইনীজ ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে যা দাঁড়ায় তা কতকটা এই রকম.
এই ইয়াং সে নদীর তীরে বসে আমি এক একলা মেয়ে. আমার অশ্রু দিয়ে সেচন হয়েছে এই নদী পারের মাটি. বাপ মায়ের কথা মনে নেই আমার. গায়ের মড়কে উজার সবাই,
পেটের দায়ে ভিক্ষা করতে আসা এই ইয়াং সে নদীর পারে.
গলায় সুর ছিল তাই ভিক্ষা পেতাম,
এক জমিদার তুলে নিয়ে থাকতে দেয় কোঠা বাড়িতে.
পুরুষের ভোগ লালসাকে প্রশ্রয় দিতে ছোট থেকেই জানি.
আর এও জানি কেমন করে রাতের প্রণয়ের দায়ভার একার কাঁধে নিতে নেই.
গ্রামের এক বুড়ি আমাকে জড়িবুটির খোঁজ দিয়ে গেছে.
সেই জড়িবুটি আমার রক্ষা কবচ.
তবু গাছের উপরে যখন মা ঘু ঘু তাঁর ছানাকে রক্ষা করে ডানার নীচে নিয়ে, তখন মা হতে বড় সাধ যায়.
আকাশলীনার কাছে এই গল্প শুনে অবাক হয়ে গেছিল ঝোরা. কত হাজার বছর আগে ইয়াং সে নদীর পাড়ের এক অনাথিনী কোঠার গায়িকা ‘উইমেন কন্ট্রাসেপ্টিভ’ এর খোঁজ জানত. আর সেই খোঁজ আছে স্ক্রোলের গায়ে. চাইনীজ হার্বসের কথা সকলেই জানে অবশ্য. তবে তা পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃত নয়.
আরো কিসের খোঁজ আছে কে জানে.