সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ২৫)

আরশী কথা

আজ থেকে কলকাতায় শুটিং শুরু. ঝোরা পুরো শুটিং এর সময়টা টিমের সাথে থাকবে. সাতদিনের জন্য সিকিমেও যেতে হবে, ওখানে শুটিং চলবে. ওখানকার টিবেটিয়ান স্কুল অফ এন্থ্রপোলজির গেষ্ট হাউসে থাকবে পুরো টিম. কলকাতা থেকে টিমের সঙ্গে যাবেন মেই লিং আর ড: মঞ্জরী বসু. মেই লিং যাবেন ব্যাবসার কাজে, কিছু কিউরিওর সন্ধান পেয়েছেন. আর ড: মঞ্জরী বসু যাবেন টিমের সাথে বেড়াতে.
মঞ্জরী বসুর সাথে ঝোরার আলাপ ডকুমেন্টারির খাতিরেই. আকাশলীনা মঞ্জরী বসুর সেমিনার শুনে, ওনার কার্ড নিয়ে এসেছিল. সেই কার্ডের নম্বর মিলিয়ে মুঠোফোনে মঞ্জরীর সাথে যোগাযোগ করতেই এক কথায় ঝোরাদের ডকুমেন্টারির জন্য সাক্ষাতকার দিতে রাজি হয়ে যান মঞ্জরী. শান্তিনিকেতনে আম্রকুঞ্জতে বসে অনেক কথা বলেন মঞ্জরী. চীনা ভবনে শুটিং এর পারমিশন দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ,ঝোরাদের থাকার ঢালাও ব্যবস্থা ছিল রতনকুঠিতে. ঝোরাদের টিম প্রথমেই চলে যায় উত্তরায়নে, রবীন্দ্রনাথের সবকটি বাড়ীর কথা দিয়েই শুরু হবে ডকুমেন্টরি,পেছনে অবশ্যই রবীন্দ্রসঙ্গীত চলবে শুধু এসরাজের সঙ্গে. উত্তরায়ন থেকে বেড়িয়ে আশ্রমের মোরাম বিছানো পথ ধরে, কাঁচ মন্দির, ঘন্টাতলা পেরিয়ে পায়ে পায়ে গুরুপল্লীর দিকে গিয়ে চীনা ভবন. এই চীনা ভবনের সামনে নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারির আঁকা ফ্রেস্কোর উপরে ক্যামেরা প্যান করবে. তারপর ক্যামেরা ফোকাস করবে ড: মঞ্জরী বসুর উপর. তান য়ুন সান, চীনা ভবনের প্রতিষ্ঠাতা, রবীন্দ্রনাথের সাথে তান য়ুন সানের মিতালি হয়েছিল এবং সমগ্র বিশ্বকে একই তন্ত্রীতে বাঁধার স্বপ্ন তখন রবীন্দ্রনাথের চোখে. তান য়ুন সানের শান্তিনিকেতনে চীনা ভবন প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সমগ্র কলাভবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা বলবেন মঞ্জরী. এরপর আসবে শান্তিকেতনের চীনা ভবনে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের লাইব্রেরীর কথা এবং সেই লাইব্রেরীতে রাখা কিছু স্ক্রোল থেকে গল্প পাঠ করে শোনাবে অপূর্ব. ডকুমেন্টারির শুটিং শান্তিনিকেতনে শেষ হয়েছে. তারপর কলকাতায় শুটিং শেষ হলে পুরো টিম চলে যাবে সিকিম.
এই এতগুলো দিন একসাথে কাটানোর পর ঝোরা খেয়াল করেছে অপূর্ব ড: মঞ্জরী বসুকে এড়িয়ে চলেছে. মেই লিং, ঝোরা এবং বাকি টিমের সাথে বেশ স্বচ্ছন্দ অপূর্ব. মঞ্জরী এবং অপূর্বর বিষয় এক, সিনো টিবেটিয়ান ধর্ম ও চৈনিক ভাষা. কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে কোন বাক্যালাপ নেই. মঞ্জরী অসম্ভব বিদূষী একজন মহিলা. যেমন তাঁর জ্ঞানের পরিধি তেমনি তাঁর উপস্থাপনা উজ্জ্বল এবং চৌখস . আজকেই সেই অপূর্বর বলা তথাগতর কথা মঞ্জরীও বললেন. রত্নখচিত সিংহাসনে আসীন সেই সোনার মহাযোগী, সিংহাসনের দুপাশে দুটি রক্ত বর্ণ ড্রাগন তাদের চোখে দুটি করে লাল হীরে বসান.
এইরকম দুটি লাল ড্রাগণ মেই লিং এর বাড়ীতে ঝোরা দেখেছিল. আর অপূর্ব মেই লিং এর বাড়ীর তথাগতর সামনেই চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে ছিল অনেকক্ষণ. তবে মঞ্জরী ও অপূর্ব কোন কথা কেন বলে না? কি জানি. বেশি ভাবার সময় পায় না ঝোরা. আজ এডিটিং স্টুডিওতে যেতেই হবে তাড়াতাড়ি বিকেলের মধ্যে শুটিং শেষ করে.

ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।