• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে জয়িতা ভট্টাচার্য (পর্ব – ৫)

অন্তর্ধান – ৮

আলিপুর জেলের থেকে চারজন ছাড়া পেয়ে কোথায় গেল।এলাকায় তন্ন তন্ন করে খোঁজ চলছে।আকবর শেখ,নেকবর আর তাজির শেখ এবং অভিজিৎ দাশ।একই গ্যাং।নেকবার আর তাজেরের বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণের অভিযোগও।
অথচ দুবছর পর পৃথক পৃথক কারনে তারা জামিনে মুক্ত।
মোহিনীমোহনের অন্য আত্মীয়দের খবর করা হয়েছে।তারা মালদা মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা।কেউই আগ্রহী নয় খুনের ব্যাপারে বা লাশ সৎকার করতে।
শিশুটির দ্বিতীয় বার ফরেন্সিক ও ডি এন এ রিপোর্ট একই।
দেবলীনা চুপ। অন্য কেসগুলোয় হাল হকিকত নিয়ে ব্যস্ত।
একটি ছোটো খাটো শোকসভা,ছোটো নবাবগঞ্জ এ দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে কয়েকদিন ব্যস্ত খবরের চ্যানেল।দশ দিন চুপচাপ কেটে যায়।
একটি চ্যানেল ভাইরাল করছে ক্রাইম থ্রিলারের মতো।
জেলা সভাপতি ও কাউন্সিলারের ফোন প্রত্যাশিত ছিলো।
কাউন্সিলর দিপালী সাহাকে এই প্রথম দেখল দেবলীনা স্বামী সমভিব্যাহারে।
–“আসুন ম্যাডাম, আসুন মহাদেব বাবু”
“কী ব্যাপার দিদি এসব কী হচ্ছে। এতো নৃশংস ব্যাপার”
–“সে তো বটেই।আমরা তদন্ত শুরু করেছি”
“শুনুন ভাই, আমরা বন্ধ্ ডাকছি।কাল।এই খুনের প্রতিবাদে।একজন মহান সমাজকর্মী র এই পরিণতি মানব না”
মহাদেব সর্দার সুর চড়ায়।
দেবলীনা নির্লিপ্ত।বেল বাজায়।কথা চাপা পড়ে।
–“স্যর”,পারমিতা এসে দাঁড়ায়।
এঁদের চা নিয়ে এসো।জল দিয়ে যাও।
—দিপালী ম্যাডাম, আপনাদের কোনো তথ্য জানা থাকলে বলবেন।
–“তথ্য! কিসের তথ্য,”সুর উঁচুতে মহাদেবের।
“এ তো জলের মতো পরিস্কার। বিরোধী পার্টির কাজ। তাদের দেখাও গেছে সেদিন ওনার বাড়ির কাছে।”
–তাই নাকি।আপনি এতো শিওর হচ্ছেন কী করে।
“আমাদের কাছে সব খবর আছে।”
–“অ,
দেবলীনা ফাইল নাড়াচাড়া করে।
–”কিন্তু সেদিন রাতে আপনার দলের যে কর্মীরা ওঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন খাওয়া দাওয়া সেরে সে কথা তো আপনাদের, ব্লক সভাপতি পর্যন্ত জানে।”
দেবলীনা খুব নির্লিপ্তভাবে ঢিল ছুঁড়ে দেয়।
মুখটা নিভে যায়।
“সেকি। গজরাজ মহন্ত একথা বলেছে! ও ব্যাটা জানে কী।আমি পার্টির অনুগত কর্মী।আজকের সভাপতি হয়েছে সে। কীভাবে সব জানা আছে। কাকে আর কত…..”
হঠাৎ খেয়াল হতে নীরব হয় মহাদেব।
পেপারওয়েটের ভেতর রঙিন মাছ জলজ উদ্ভিদ, উল্টে পাল্টে দেখছে দেবলীনা।
—আসুন তবে।আমাকে একটু বেরোতে হবে।আপনাকে দরকার হতে পারে দিপালী দেবী।
স্পষ্টতই নার্ভাস মহিলা স্বামী পরায়ণা এই মুহূর্তে।
“দেখুন শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার ভার আপনার ওপর।এসব ঘটনা দুঃখ জনক।বিরোধী দলের চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়।”
মহাদেবের গলা হঠাৎ বিনীত।
রজত ভট্টাচার্য দুপুরে ফিরল তিনটে। একটা বড়ো ডিল নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়েছিল এটুকু জানা।গেছে। আর আজ রাতে আকবর আর নেকবরের বাড়ি ফেরার সম্ভাবনা। আকবরের মা অসুস্থ, আর নেকবরের দ্বিতীয় স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।
হাতে টাকা নেই।আশপাশের দোকানে ধার অনেক।
একটা চান্স নেওয়া যেতে পারে।
খেতে খেতে কথা হয়।
তুমি একটু রেস্ট নাও রজত এখানের কেসগুলো মিঃ সেন দেখে নেবেন।সজনী বাবু আছেন।
আপনি ?
একটু কাজ সেরে যাব।তোমার সঙ্গে একটা নাগাদ দেখা হচ্ছে। যারা থাকবে তাদের মিঃ সেন বুঝিয়ে দেবেন।
আনোয়ার কে কাল দরকার।
রজত ম্রিয়মান হয় অজানা কারনে।
ধীরে ধীরে চলে যায়।
থানা থেকে বেরিয়ে মোবাইলের আলো জ্বলে।
“মন খারাপ কোরো না।সত্যি কিছু কাজ এক্ষুনি না সারলেই নয়”
ঝাড়বাতি জ্বলে ওঠে যুবক রজতের মুখে। আলগা হাসি ঠোঁটে।
নিকষ অন্ধকারে নিঃশব্দে দুটি জিপ পাকা রাস্তা ছেড়ে নদীর ধার বরাবর শ্মশানের রাস্তায়।
সকালটা একটু দেরিতে শুরু হলো।কটকটে রোদ্দুর বিছানাময়।
শরীর জুড়ে ক্লান্তি।
নেকবার আর দুই সাগরেদকে ধরা গেছে ,সামাদ এনকাউন্টারে মরেছে শ্মশানের কাছে জঙ্গলটায়।গুলিটা রজতই করেছে তার নির্দেশে না হলে সেই করত।মেয়ে চালান থেকে ধর্ষণ ,খুন ও আগ্নেয়াস্ত্র এপার ওপার করা এমন প্রচুর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ছিল।পূর্বর্তন সরকারের আমলে সামাদের উত্থান তারপর বর্তমান শাসকদলের সঙ্গে দিব্যি সখ্যতা ও নির্বিচারে এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠা সামাদ মাত্র ছ মাস জেলে ছিলো যখন তার সঙ্গে অশোক সিংহর রেষারেষি চূরান্ত অশান্তি সৃষ্টি করছিলো।এবং দুজনেই নির্বাচনের সময় যে কোনো দলের কাছে ভীষণ অনিবার্য মেশিনারি হয়ে উঠেছিল।
দেবলীনা জানে তাকে দীর্ঘ বয়ান লিখতে হবে আজ।হয়ত আবার আসবে ফোনটা।
কিন্তু একবেলা যে মেয়েটা পুকুরের কলমি দিয়ে গেঁড়ি গুগলি বা শেকড় সেদ্ধ খেয়ে বড়ো হয়েছে।লড়তে লড়তে আই পি এস হয়েছে তাকে কোনো হটলাইনের সতর্কবার্তা দমিয়ে রাখতে পারবে না।
আর্মস তাকেও কাল ব্যবহার করতে হয়েছে। রজতের মোবাইল বন্ধ। কেমন আছে সে ? দেবলীনা মুর্মু র দুর্বলতা সাজে না।
চোখ খুলে আলস্যে ঢিমে আলোয় দেবলীনা আসে।গন্ধ পায় রজত।ভীষণ ভাবে জাগছে সে। কষ্ট। শরীর তপ্ত আগ্নেয়গিরি এই ভোরে বিছানায়।কল্পনা করে তার শরীর জুড়ে দেবলীনা। অসহ্য লাগে। রজত দেবলীনার কথা ভেবে নির্গত করে লাভা।ডুবে যায় দেবলীনার শরীরে,স্বপ্নে।
অনেক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে অবসন্ন হয়ে।
একটি শিশু।
শিবু খবর পাঠিয়েছে কালিয়াচক সদর হাসপাতালে একটি শিশু জন্মেছিলো ২০১৮, ৫ মে।
তার কোনো রেকর্ড নেই আর। ডিসচার্জ রেকর্ড ভুয়ো।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।