গারো পাহাড়ের গদ্যে অনসূয়া যূথিকা

বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান

দেশের পরিস্হিতি এমন যে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি অনেকের মতেই এখন হুমকির মুখে। এর একটা বড় দায় লোকে দেয় বটে নারীবাদীদের উপরে। নারী স্বাধীনতার ধ্বজাধারী এবং হর্তাকর্তা বলে সব দোষ তাদের ঘাড়ে চাপাতে অনেকেরই খুব ভালো লাগে। তবে এখানে দোষটা যদি দিতেই হয় তো দেয়া দরকার সেইসব তথাকথিত নারীবাদী পরিচয় দেয়া নােী পুরুষদের। যারা নানান সময়ে তাদের নানান উদ্ভট উৎকট সব কাজের জবাবে জানান যে তাঁরা ট্যাবু ভাঙছেন৷ কিন্তু প্রশ্ন থাকে যে ভেঙে কী গড়লেন বা কী গড়ছেন? সব প্রচলিত প্রথাকেই এখন তখন ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চাওয়াটা কতোটা যুক্তিযুক্ত তা বোঝাতে তারা প্রায়শই ব্যর্থ৷ আর লোকে তাদের বোঝেনা বলেই দেশের নারীরা তাদের সঙ্গে এক করে ভাবতে পারেনা এইসব নারীবাদী নারীদের, এদের কান্ড দেখে একটা স্পষ্ট বিভেদ রেখা তৈরী হয়ে গেছে নারীবাদী নারী পুরুষ এবং সাধারণ মানুষের ভিতর। এরা আদতে নারীবাদী না বরং ভেকধারী মানুষ। নারীবাদের নাম করে অসৎ কাজে জীবনটা উৎসর্গ করেছেন বলা যায়। এদের কথা আপাতত উহ্য থাকুক আমরা বরং নারীদের বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অবস্হান জানি।
নারীবাদী পুরুষ নারী অবশ্য সমাজের জরুরি ভিত্তি হিসেবে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে মানতে নারাজ। বিবাহ প্রথার ভিতেই গন্ডগোল আছে বলে তাদের বিশ্বাস৷ বিবাহ প্রথাটি পুরুষের তৈরি, ধর্মের আরেকটি শাখা হিসেবেই। বিবাহের সঙ্গে ধর্ম জড়িত বলে তারাও নানান রকম আপত্তি তোলেন।
যেমন তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের শাঁখা সিঁদুর পরবার বিরুদ্ধে গলা তোলেন জোরদার।তাদের মতে প্রাচীন ভারতীয় এইসব প্রথার পিছনের ইতিহাস কালো। শাখা নোয়া পরবার প্রথা মনে করিয়ে দিতে চায় দাসী প্রথাকে। হিন্দু বিবাহের এখনো প্রচলিত রীতি মতে বউ আনবার পরে বলা হয় মায়ের জন্য দাসী আনা হয়েছে। ঋষি উদ্দালক পুত্র শ্বেতকেতুর প্রণয়ন করা বিবাহ প্রথাটির প্রায় সব বিষয় নিয়ে নারীবাদীরা তুমুল রাগত। কিন্তু একই ভাবে ফের গলা নামিয়ে দিয়ে চুপ থাকেন পারিবারিক তথা উত্তরাধিকার আইনে নারীদের সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে। বাংলাদেশের হিন্দু পারিবারিক আইনে একজন বিধবা নারী তাঁর স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাবেন৷ কিন্তু একজন নারী তাঁর বাবার সম্পত্তির অধিকার কেন পাবেন না তা নিয়ে তারা কথা খুব কমই বলেন বা বলতে পারেন৷ তাদের সব কথা ঐ শাঁখা সিঁদুরে এসেই থেমে যায়, পথ হারায়। যেনো এসব বৈবাহিক চিহ্ন না রাখলেই একজন নারী খুব স্বাধীন হয়ে যায়।
জানা কথা বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগন যখন ইসলাম ধর্মের তখন তাদের আইন নিয়ে কথা বলতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী অধিকার কর্মীরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একই ভাবে ভিন্ন ধর্মের পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন এড়িয়ে যাওয়া তাদের পছন্দের তালিকায়। কথা বলতে গেলে বহু কিছু জানতে হবে আর জানার জন্য পড়তে হবে, পড়বার বিকল্প যে নেই এটা তারা জানেন।
আজকাল অবশ্য বিবাহের চাইতে এর বিপদ সম্পর্কেই বেশি কথা বলতে আগ্রহ পাচ্ছেন অধিকাংশ শহুরে মানুষ। ইসলাম ধর্মের বিবাহের দেনমোহরের রীতিটি অনেকেরই নাপছন্দ! দেনমোহর হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ নারীর যৌনাঙ্গের মূল্য হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে নারীবাদী হিসেবে পরিচিত মানুষের কাছে৷ এর বিপরীতে আরেকটি ধারা আছে যারা নিজেদের নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন কিন্তু নিজের বিয়ের সময় ঠিকই দেনমোহর নিয়ে বিয়ে করেছেন। একজন যখন কোন প্রথার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তখন সেই প্রথা মেনে বিয়ে করাটাকে সাদাচোখে ঠিক বলে মনে হয় না আর।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির বিকল্প হিসেবে অনেকে এখন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা প্রেমজ সম্পর্ককে দেখছেন। উল্লেখ যোগ্য হারে ডিভোর্সের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে অবহিত আছেন সবাই৷ এর কারণ হিসেবে সঙ্গীর বিশ্বাসহানি বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক দায়ী বলে মনে করছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ফেইসবুকে আজকাল আকছার নর নারীর প্রেমজ সম্পর্ক স্হাপিত হচ্ছে।
যা অপরদিকে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নারী রয়েছেন যারা ফেসবুক ব্যবহার করছেন আর সেটা নিয়মিতই।
নিজেদের বন্ধু, পরিবার আর আত্মীয়বলয়ের সাথে যারা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চান তারা তো আছেনই।এর সাথে আছেন নানান মিডিয়া ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় যারা চর্চা করেন।
স্বভাবতই এসব নারীদের সাথে ফেসবুকে যুক্ত হন তাদের পরিচিতরা আর অবশ্যই ভক্ত বৃন্দ।
যেসব নারী ফেসবুক ব্যবহার করছেন তারা অনেকেই বিবাহিতা।সুতরাং ফেসবুকে তাদের নিজেদের বলয়ের সাথে যুক্ত হয় তাদের সঙ্গীর বলয়ও।
ধরুন, একজন কর্মজীবী নারী।যিনি ফেসবুক ব্যহার করেন।তার বন্ধুতালিকায় অনেকের সাথে যুক্ত আছেন তার স্বামী। সেসুবাদে যুক্ত হচ্ছেন স্বামীর বন্ধুও কলিগ।এদের মধ্যে অনেকেই থাকতে পারেন যারা সরাসরি সেই নারীর স্বামীটির অধস্তন কর্মী।ফেসবুকে যিনি নারীটির বন্ধু।
বহুক্ষেত্রে স্বামীর কর্মস্হলের বহুঘটনা চলে আসে নারীটির গোচরে,অফিস বুলিয়িঙ চলে আসে পারিবারিক বলয়ে।
স্বামীর সহকর্মীর সাথে বা অধস্তন কর্মীর শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীটির পারিবারিক সম্পর্ক!বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান
বস্তুত বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা নারীরা যারা সংসার আর কর্মস্হলের মাঝে ব্যালেন্স করে চলতে চাই তাদের জন্য এটা একটা বাড়তি হ্যাপা বই নয়।

বহুসময় স্বামীর কলিগ যেহেতু ভার্চুয়াল বন্ধু সুতরাং তার কর্মক্ষেত্রেও আমাদের নিয়ে আলোচনা চলে আর অনেকসময় সেটা আমিষগন্ধী!এর প্রভাব পড়ে বৈবাহিক সম্পর্কের উপরেও।

দুজন নারী পুরুষের বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক এমন হওয়া উচিৎ না যা কারো বৈবাহিক সম্পর্ক নস্ট করে।আমাদের সমাজে এমনিতে
বন্ধুত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আকছার পরিবারের বন্ধনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নস্ট হয় বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের ভিত।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।