।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় কৌশিক বর্মন

অন্য দূর্গা

ছোটবেলা থেকেই অপু শুনে আসছে মা দূর্গা প্রতিবছর এই আশ্বিন মাসে শরৎকালে কৈলাস থেকে তার বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। কিন্তু সে যখন তার মা সর্বজয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে তখন তার মনে হয় মা দূর্গা যেন তাদের ঘরে দশহাতে দশদিক আলো করে এই সংসারটাকে সামলাচ্ছে। তিনি না থাকলে আজ হয়তো এই অভাবের সংসারটা ভেসে যেত। কারণ তার বাবার একটা পা নেই। ফলে তিনি কিছুই করতে পারেন না। সংসারের হীরে থেকে জীরে সমস্ত কিছুই তার মাকে সামলাতে হয়। ঘরের কাজ ছাড়াও তার মা লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ করে যেটুকু রোজগার করে আনে তাতেই তাদের সংসারটা চলে। তা না হলে কবে এই সংসারটাই হয়তো ভেসে যেত। সারাদিন খাটাখাটনির পর রাতে যখন তার মা তাকে কোলে বসিয়ে রূপকথার বিভিন্ন গল্প শোনায় তখন তার মন শুধু সেই জগতেই চলে যায়। অন্যকোনো দিকেই মন টানেনা।
এই শরৎকাল এলেই যখন চারিদিক কাশফুলে ভরে যায় এবং গাছে গাছে শিউলি ফুল ফোটে আর ওই দূর থেকে কু ঝিক ঝিক শব্দ করতে করতে রেল ছুটে যায় ভিনদেশে তখন ছোট্ট অপুর মন ছুটে চলে সেই সুদুরের দিকে। যেখানে তার সঙ্গে থাকবে শুধু তার মা সর্বজয়া।
সবাই যখন বলে মা দূর্গা প্রতিবছর এই শরৎকালে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেড়াতে আসে তখন ছোট্ট অপুর মনে হয় মা দূর্গার আবাহন এবং বিসর্জন বলে কিছুই নেই তিনি প্রতিটি ঘরেই ঘোমটার আড়ালে বিরাজ করছেন আর আমাদের মত কার্তিক, গণেশকে আগলাচ্ছেন কিন্তু কেউ তাকে চিনতে পারছেনা। তাই তারা ওই মাটির প্রতিমার মধ্যে মা কে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ছোট্ট অপুর দৃষ্টিতে তার মা সর্বজয়াই যেন তার কাছে মা দূর্গা।
এখানে শিক্ষণীয় দিকটি লক্ষ্যণীয় হল আমরা নিজেদের মাকে অবহেলা করে মন্দিরের মাকে লোকদেখানো পুজো করি বটে কিন্তু তাতে মা বরং রূষ্টই হন। কিন্তু ছোট্ট অপু নিজের ঘরের মা এবং জগৎজননী মা দূর্গাকে এক করে ফেলেছে এতে তার বৃহৎ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।