বটা অনেক যত্ন নিয়ে দোকান সাজিয়েছে।ক’মাস ঘরে বসে থেকে এখন না খেয়ে কাটাবার হাল।চাল আনতে গিয়ে হাঙ্গামায় জড়ায়নি।দোকান মালিকের গলায় গামছা দিয়ে চাল ডাল আদায়ের দম তার নেই।
বাবা বলেছে কোথাকার জল কোথায় গড়াচ্ছে আমাদের দেখে লাভ নেই।বিএ পাশ করে চাকরির খাতায় নাম লটকে আছে।বুড়ো হয়ে গেলেও হয়ত খসবে না।বাধ্য হয়ে ফুটপাতে দোকান।বটা দেখে না কোথাকার চাল কোথায় পাচার হচ্ছে।সে তো এসব আটকাতে পারবে না।
ভয়ংকর রোগের ভয়ে আর ভয়ানক ঝড়ে সে ন্যালাখ্যাপলা হয়ে গেছে।পাকা বাড়ি নেই তাই কোনো সাহায্যও পায়নি।শুনেছে ফুটপাতে দোকান করতে গেলে পুলিশকে জানিয়ে লাইসেন্স নিতে হবে।
রাতে স্বপ্ন দেখে নিজে একটা মুরগি।ভালোর জন্য ভাম বিড়ালের কাছে গেছে।ভয়ে চিৎকার করে জেগে উঠেছে।
দোকান সাজিয়েও ভয় এই বুঝি কেউ ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল,‘এই বটা তুই আমাদের খাতায় নাম লিখিয়েছিস? তোর লাইসেন্স আছে?’
ভালো বিক্রি না হলে আজ চাল ডাল কিনতে পারবে না।
একজন মহিলা বটার দোকানে এলেন।দেখে মনে হল পয়সাওয়ালা।
‘ফাঁকা দেখে এলাম।’বলেই বটাকে বললেন,‘জান তো আমার তিন মেয়ে।’
শুনে বটা কেমন কেঁপে উঠল।পরক্ষণেই মনে হল তিন মেয়ে শুনে তার কিসের আনন্দ!সে ফুটপাতের দোকানদার।চাকরি নেই।ঘর ঝড়ে ভেঙে কেতরে আছে।বলল,‘জামা দেখাব?’
‘দেখাবে না! তার জন্যই তো আসা।’
বটা মনের আনন্দে,উৎসাহে জামা বের করল।
মহিলা বললেন,‘আমার মেয়েরা কত রকম জামা যে পরে তা তুমি ভাবতে পারবে না।যত সুন্দর সুন্দর ডিজাইন ওদের পছন্দ।’
বটা ভাবল সে ক্ষতিপূরণের কুড়ি হাজার টাকা পেলে অনেক জামা কিনে সেগুলি বিক্রি করে নিজেকে সামলে নিত।যা হয়নি তা ভেবে লাভ নেই।যা আছে তার মধ্যেই পছন্দ করাতে হবে।
মহিলা একটার পর একটা জামা দেখছেন কিছুই পছন্দ হচ্ছে না।কত লোকজন জামা কিনতে এসে বটার সঙ্গে কথা বলতে না পেরে বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছে।
আর জামা নেই।কি হবে?বটা হতাশায় ঘামছে।দু’ঘন্টায় মহিলার সামনে টাল হয়ে আছে সব জামা।কো্নোটাই মহিলার পছন্দ হল না।ওনার তিন মেয়ে।একজনের জন্য চারটি করে নিলে এখনই একডজন বিক্রি হত।চাল ডাল কিনতে হবে।সবজিও নেই।
মহিলা একটি জামা তুললেন।‘তুমি এটাই দাও।’
বটা বলল,‘আপনার তিন মেয়ে বললেন!’
মহিলা বললেন,‘এটাই তিনজনে পরবে।ছোটো পরলে হবে ম্যাক্সি,মেজো পরলে মিডি আর বড়ো পরলে হবে মিনি।তাই তো বেছে নিলাম।একটি কিনেই তিনটি হবে।’