সঞ্জয়: হে মহারাজ! যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে, সকল কৌরবদের একত্রিত দেখে, পৃথা পুত্র অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন।
অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন যে যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি সকল কৌরব সেনাদের ঠিক মত দেখতে পারছেন, উনি যেন তাঁর রথ দুই সেনার মধ্যেস্থলে নিয়ে নিয়ে যান। দুর্যোধনের পক্ষে যারা যুদ্ধ করতে তৎপর, তাঁদের অর্জুন একটু ভালো ভাবে পর্যপেক্ষন করতে চেয়েছিলেন।
সঞ্জয়: হে মহারাজ! এই কথা শ্রবন মাত্র, শ্রী ভগবান অর্জুনের রথ দুই দলের সেনার মাঝে রথকে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালেন। এবং অর্জুনকে বললেন সম্পূর্ণ কৌরব সেনাদের একবার ভালো করে দেখে নিতে।
অর্জুন দেখলেন সকল কুরুশ্রেষ্ঠরা এই মহা সমরে স্বমহিমায় উপস্থিত। সকল আপনজনকে যুদ্ধ প্রাঙ্গণে দেখে অর্জুনের মন করুণায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে বলেন যে এই সকল যোদ্ধাদের দেখে তাঁর যুদ্ধ করবার স্পীহা হারিয়ে গেছে। তাঁর সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাচ্ছে এবং মুখও শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। তাঁর শরীর কম্পমান। কাঁটা দিচ্ছে। হাত থেকে গান্ডীব পড়ে যাচ্ছে। বোধ করছেন গায়ের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বললেন যে তিনি আর স্থির থাকতে পারছেন না। চিত্ত বড়ই চঞ্চল। নানা অশুভ সংকেত তাঁকে গ্রাস করছে। অর্জুন বারংবার বলতে লাগলেন যে আপনজনদের বধ করে কোন লাভ নেই। তিনি জয় চান না, রাজ্য চান না এবং সুখ ভোগেরও অংশীদার হতে চাননা।
অর্জুন শ্রী কৃষ্ণকে বললেন যে রাজসুখ ভোগ করবার কোনো বাসনাই নেই তাঁদের আজ। জীবন ধারণ করেও কোন লাভ নেই। যাদের জন্য তাঁরা রাজসুখ ভোগ করতে চান, সেই সকল যোদ্ধারা সকল পার্থিব ঐশ্বর্যের মায়া পরিহার করে কুরুক্ষেত্রের এই পুণ্য ভূমিতে উপস্হিত হয়েছেন। তিনি কোন সুখ চান না। ত্রিভুবনের সুখ, সমৃদ্ধিও আজ তাঁর কাছে বিষের সমান। তিনি ওনাদের বধ করতে পারবেন না। তবে তাঁরা যদি তাঁকে বধ করেন, তাতেও তাঁর কোন আক্ষেপ নেই। যন্ত্রণা নেই। গ্লানি নেই। হস্তিনাপুর নরেশের পুত্রদের বধ করে কোন সুখের ভাগীদার হতে চাননা।