ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমণ কাহিনীতে লোকমান হোসেন পলা

বার ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ’র রাজধানী সোনারগাঁও

সবুজ বন-বনানী আর অনুপম স্থাপত্যশৈলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের নান্দনিক ও নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও।
এই শীতে ‘সোনারগাঁও জাদুঘর’ (বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন) ঘুরে আসতে পারেন। সকল মানুষকেই আকর্ষণ করে এক সময়ের বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁওয়ের এ স্থানটি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মোগড়াপাড়া ক্রসিং থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তরে সোনারগাঁও অবস্থিত।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে হিন্দু আমলের রাজধানী এখানেই অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসকদের পুর্ববঙ্গের প্রাদেশিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকে সোনারগাঁও নামের উদ্ভব বলে কারো কারো ধারণা রয়েছে। অন্য ধারণামতে বারো ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ’র স্ত্রী সোনাবিবি’র নামানুসারে সোনারগাঁও নামকরণ করা হয়।
বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদের মধ্যে শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সোনারগাঁও একটি গৌরবময় জনপদ। আনুমানিক ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে এ অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়। মধ্যযুগে এটি মুসলিম সুলতানদের রাজধানী ছিল।
১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ঢাকা সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। ঈশা খাঁ ও তার বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী।
সোনারগাঁও-এর আরেকটি নাম ছিল পানাম। পানাম নগরের নির্মিত ভবনগুলো ছোট লাল ইট দ্বারা তৈরী। ইমারতগুলো কোথাও একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন, আবার কোথাও সন্নিহিত। অধিকাংশ ভবনই আয়তাকার এবং উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত।
দীর্ঘ একটি সড়কের উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ভবন স্থাপত্যের মাধ্যমে পানামনগর গড়ে উঠেছিল। উভয় পাশে মোট ৫২টি পুরোনো বাড়ী এই ক্ষুদ্র নগরীর মূল আকর্ষণ।
পানাম শহরের ঠাকুরবাড়ি ভবন ও ঈশা খাঁ’র তোরণকে একত্রে নিয়ে মোট প্রায় ষোল হেক্টর স্থান জুড়ে লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অবস্থান। এখানে ১টি জাদুঘর, ১টি লোকজ মঞ্চ, সেমিনার কক্ষ ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে। এখানকার জাদুঘরে প্রায় সাড়ে চারহাজার নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে নামবেন মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা। জনপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা। সময় লাগতে পারে ১ ঘণ্টা। মোগড়াপাড়ায় নামার পর দেখবেন অনেক অটো দাঁড়ানো আছে। সেখান থেকে শেয়ার বা রিজার্ভ করে জাদুঘর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। শেয়ারে গেলে প্রতিজন ১০ টাকা করে নেবে। যদি রিজার্ভে যান ৫০-৬০ টাকা নেবে।
আপনি চাইলে চিটাগাং রোডের বাসে করে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে সেখান থেকে সিএনজি বা বাসে করে মোগড়াপাড়ায় যেতে হবে। সিএনজি ১০০-১৪০ টাকা আর বাস প্রতিজনে ২০ টাকা করে নেবে।

যাত্রা শুরুর আগে:
সোনারগাঁওয়ে আলাদা করে ছবি তোলার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে অবশ্যই ব্যক্তিগত ক্যামেরা/মোবাইল ফোন নিতে হবে। তবে একা না গিয়ে কয়েকজন মিলে গেলে অনেক ভালো হবে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, সেখানে খাবার জিনিসের দাম তুলনামূলক বেশি। তাই বাসা থেকে রান্না করে হটপটে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। এতে খরচ কম হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারেরও নিশ্চয়তা পাবেন।
বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁ দীর্ঘদিন সোনারগাঁও শাসন করেছেন। সোনারগাঁওয়ের চারদিকে নদী দিয়ে ঘেরা ছিল বলে সহজে সোনারগাঁওকে কোনো শত্রু আক্রমণ করতে পারতো না। ১৯৭৫ সালে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা, আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা। প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।