T3 ।। কবিতা পার্বণ ।। বিশেষ সংখ্যায় মঞ্জিলা চক্রবর্ত্তী
by
·
Published
· Updated
পৌষের গান
নিম শিরীষের বাকলে বার্ধক্যের ফাটল
হিমেল বাতাসে ঘুরন্ত পীতাভ পত্রের ঝরনা
বাঁশপাতির নর্তন পাতাঝরা শূন্য শাখায়
মৌটুসী মৌ খোঁজে শিমের মাচায়
শূন্য বিল মুখরিত হয় পরিযায়ীর কোলাহলে
ওলির গুঞ্জন ভেসে আসে উত্তরে মৌসুমে বাতাসে।
মাঠ ভরা পৌষের ধান
চাষার কাস্তেয় খুশির ঝলকানি
গেঁয়োবধূ আল্পনা কাটে তুলসী তলায়
বুড়ী বামনি নতুন ধানের ছড়া কাটে
হাঁড়ি ভরা ভাতের মাড় গালে চাষি বৌ
গরম ভাতে পৌষের ঘ্রান।
আদিবাসী যুবতীর কৃষ্ণ গাত্রে
কাঁচুলিতে আঁটে না ভরন্ত যৌবন
ঢেঁকিতে পাড় পাড়ে
মেঠো দুপুর অলস প্রহর গোনে
দু’নয়নে শীতল চাহনি
উদাসী মনে আঁচ
কেবল দয়িতের প্রতীক্ষায়!
গুন-গুন গাথা গায় –
‘আমাদের টুসু লাইতে যাবে
পুকুর ঘাটে কেউ নামবি নি।’
গঞ্জের হাটে সাড়া পড়ে
মেঠো পসরায় সাজ সাজ রব
পৌষের ডাকে গাঁ জেগেছে
টুসু যাবে গেরস্তের ঘরে,
‘চল টুসু চল মকর পরবে
ক্যানে মরছু ক্যানে লো গরবে।’
হিম মাখা ঘাসের আগায়
ঘাস ফড়িংয়ের নাচানাচি,
অজিহ্ব – দ্বিজিহ্ব’রা সব শীতঘুমে
নির্ভয়ে দৃষ্টির বিচরণ।
গাঁয়ের পুকুর জলে বাষ্প ছোটে
মাছরাঙা আজ তীর্থের কাক!
জংলাবনে ঢাকা ওপাড়ার জমিদার বাড়ি
জেগে উঠে পৌষের গানে
জমিদারি রক্তের টানে –
শেষ বংশ প্রদীপের আলোয়
পিতৃপুরুষের পাপতাপ যতসব
ধুয়ে যাবে মকর স্নানে!