T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় মালা মিত্র

ওগো সবার ওগো আমার

সে কথাটা মনে হলেই, কেমন যেন ধূপ দীপ চন্দনের একটা পূজো পূজো গন্ধ আসে।সকাল হলেই সবার বাগান থেকে ফুল তুলে জড়ো করতাম,মালা গাঁথতাম, তখন কতই বা বয়স হবে, সাত বা আট।
একমাস ধরে রিহার্সাল হ’ত, নাটক গান নাচের।
সকাল দুপুর বিকেলের যে কোনো সময়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চলত তার রিহার্সাল,তারপর পূণ্য দিনটি এলে, স্টেজ বেঁধে, তার ছবিতে মোটা রজনীগন্ধার গোড়ে মালা, চন্দন, ধূপ দীপ দিয়ে শুরু হ’ত অনুষ্ঠান।
আমি তখন বেশ ছোট, সারা মাস রিহার্সাল দেবার পর পূজারিণী নৃত্যনাট্যে, বুদ্ধদেব সেজে বসে রইলাম আদপ্রান্ত স্টেজে, সে কি টানটান উত্তেজনা! প্রথম ড্রেসারের হাতে রঙ চঙ মাখা, আহা!সে এক অনন্য সাধারণ অনুভূতি। একটুও কি চোখ পিটপিট করিনি, সে অন্য কথা।
এরকম ভাবে ফি বছর অংশ নিতাম রবীন্দ্রজয়ন্তীতে।
আর একটা মজার গল্প, তখনো আমি বেশ ছোট, আমি বাসবদত্তা হয়েছিলাম, বাবলী হয়েছিল সন্যাসী উপগুপ্ত।
যথারিতি রিহার্সাল পর্ব উতরে অনুষ্ঠানের দিন এল,আমাকে পাড়ার দিদিরা মিলে বেনারসী পড়িয়ে টরিয়ে চমৎকার করে, সাজিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু এবার কি হবে?আমার তো বেল মুন্ডি,ন্যাড়া মাথা,দিদিরা বহু কসরত করে, এক বিশাল কল্কি ফুলের মালা মাথায় জড়িয়ে সে যাত্রা উদ্ধার করেছিল।এই রকম পাড়ার ফাংশানের অসংখ্য নমূনা আছে।
‘তোমার প্রকাশ হোক, কুহেলিকা করি উন্মোচন, সূর্যের মতন’
উন্মোচিত হয়েছিলেন প্রাণের কবি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ।
দিনে দিনে নিশ্বাস প্রশ্বাসে ঢুকে গেছেন রবি কবি।
যা কিছু লিখতে চাই, বলতে চাই,দেখি সব বলা হয়ে গেছে তার রচনায়।
আজ জীবনের শেষান্তে এসেও দেখি, জড়িয়ে আছি গীতবিতান কে সঙ্গে নিয়ে।
তাই তো সময় অসময়ে গেয়ে উঠি,
‘সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুল গন্ধ,সে সাধনায় মিলিয়া যায়, কবির ছন্দ,তুমি জান নাই, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম,রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে, আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে’।
অনুরোধ আমার মৃতদেহের ওপর গীতা দিও না, দিও গীতবিতান, এতে আমার ইহলোক শুদ্ধ হয়েছে, পরলোক ও শুদ্ধ হবে।উর্ধলোকে রবীন্দ্র লোকে স্থান পাই যেন, এই আমার একান্ত প্রার্থনা।
যিনি আমার প্রতিটি মুহূর্তে জড়িয়ে আছেন আমার রবীন্দ্রনাথ, সবার রবীন্দ্রনাথ,আমার সবটুকু শ্রদ্ধা ভালবাসা মিশিয়ে প্রণাম করি তাঁকে, পঁচিশে বৈশাখ তার আগমনের শুভক্ষণটিকে, ‘এস হবে বৈশাখ এসে এস’।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।