• Uncategorized
  • 0

গদ্যের পোডিয়ামে মালা মিত্র

সানাই

সানায়ের সুর কানে এলেই ফিরে যাই ক’যুগ আগের সকাল পৌনে আটটার হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের আঁকে বাঁকে।সাঁতরাগাছি থেকে হাওড়া যেতে তিনস্টেশন মাঝে পড়ে, রামরাজা তলা,দাশনগর,টিকিয়াপারা,হাওড়া।সময়টা 1979 ,80 হবে।
আধজাগা স্টেশন চত্ত্বর পায়ে পায়ে বোঝা ডাই করে রাখা,দূরপাল্লার ট্রেন গুলো কেউ বা বিশ্রাম নিচ্ছে,আবার কেউ কেউ টিকিয়া পাড়া থেকে স্নান ধোয়া মোছা করে প্রস্তুত নতুন সফরের জন্য,আহ্বান আরোহীদের শত শত মাইল।
হাওড়া স্টেশন কখনো অঘোরে ঘুমায় না। চোর পুলিশ, সাধু সন্ত দিবানিশি এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্ম লুকোচুরি খেলছে।
বেশীর ভাগ অবাঙালী কুলীরা ভারি ভারি মোট পৌঁছে দিচ্ছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
এধার ওধার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ট্রলির গায়ে কেউ বসতে পেয়েছে আবার কেউ শরীরের ঠেক দিয়ে চোখবোঁজা,কুকুর কুন্ডলী পাকিয়ে মানুষ জন নিদ্রা সুখ উপভোগেরচেষ্টা করে যাচ্ছে।
স্টেশনের স্টল গুলো জেগে উঠেছে,চলছে আলস্য দূর করে দৈনিক কর্ম ব্যস্ততা।
বেশীর ভাগই সত্যি ব্যস্ত, আবার কেউ কেউ ব্যস্ততা দেখানোর চেষ্টায়।
সাঁতরাগাছিতে 7.23 এর লোকাল ট্রেন,
যেমন করেই হোক পৌঁছতে হবে ট্রেনের আগে,
অজুহাত খুঁজেই পাওয়া যায়, মন্দির তলা গানের মাষ্টার মশায়ের বাড়ী।
তখন তো সেকেন্ড হাওড়া ব্রিজ হয়নি যে আধঘন্টায় মন্দির তলা।
পাগলপারা রাধার অন্তরাত্মা সারা রাত জেগে ও ঠিক পৌঁছে যায় সাঁতরাগাছি প্ল্যাটফর্ম 7.23 এর আগে।
প্রবল তৃষ্ণায় খুঁজে চলে কাকে?
অপেক্ষার শেষ হয় না,হটাঠই ওই চেনা চলনে দূর থেকে ওই দেখা যায়,বুকে সহস্র হাতুড়ীর ধক্ ধক্ ওই বুঝি সে আসে, কাছে।
ট্রেন ঝাঁকুনি দিয়ে থামে,এক আত্মাদুটি দেহ ঠ্যালাঠেলি করে ওঠে কামড়ায়,ভীড়ের মধ্যে গায় গায়। চার চোখএক হয়, লজ্জাসুখ ভালবাসা ভরা মুখ।
ট্রেন চলে দুলকি্ চালে,দুটি মন এক হয়ে সামান্য ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে যায় হাজার ভোল্টের কারেন্ট।
যদিও তটস্থ লোক জানা জানি ভয়। মনে হয় যদি অনন্ত যাত্রা হ’লে বেশ হয়,
কিন্তু সব যাত্রারই শেষ থাকে।
টিকিয়া পাড়ায় একটু বেশী সময় নেয় ট্রেন।টিকিয়াপাড়া আর হাওড়ার মাঝে এক নাম না জানা স্টেশন,ট্রেন থামবেই, ডেইলি প্যাসেঞ্জারের খিস্তি খেউর, ওরা বলে টিকিয়াপাড়া, উঠেদাঁড়া, হাওড়া।
তবু যেতে হয় ট্রেন থামে হাওড়ায়।
প্ল্যাটফর্ম থেকে বাসস্ট্যান্ড বেশ কিছু দূর, তারপর দুজনে দুদিক একজন কলকাতা অফিস,আরএকজন মন্দিরতলা।
প্ল্যাটফর্ম থেকে যতটুকু একসাথে যাওয়া যায় মুঠো মুঠোয় শক্ত করে ধরা, প্ল্যাটফর্মে বাজতে থাকে সানায়ের ধুন, সানাই এ বুঁদ দুটি কচি প্রাণ তাদের বিয়ের সানাইের কথা ভাবে।
বিসমিল্লা কেঁদে যান ‘সে নাই সে নাই’ সুরে।
বুকের গভীরে প্রেমের সাক্ষী হয়ে রয়ে যায় হাওড়া স্টেশন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।