• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র – ১৯)

যাপনচিত্র -১৯

ছোট্ট প্রচেষ্টা -,ছোটো গল্প
একটি সাধারণ গল্প

তোর চোখের কালো দ্বীপের হদিশ আমি রাখি।তোর চোখের কোলবালিশ কেন ভেজে, সেটাও আমি জানি। তোর ঠোঁটের মানচিত্রে কটি আছে দ্রাঘিমা রেখা! কিংবা, ভেজা কপালেতে কটি অক্ষাংশ যায় ঠিক দেখা? তার হিসাব থাকে আমার কাছে।
লুকাই আমি,মনের অনুরণন, যা তোর জন্যই আছে। খরস্রোতার মতো তোর অমোঘ কেশের মায়াজাল। কোথায়, কটি পাক ধরেছে, আছে আমার তার খেয়াল। তুই চেয়েছিলি, পাহাড় বুকে ঝরনা দেখতে যাবি। পাথর বুকে, রাখবি মাথা, আনন্দে হারিয়ে যাবি। সময় বড়োই বেহিসাবী, মনের হিসাব বোঝে না কো!
ইচ্ছে আমারও আছে জানিস, সবশেষে, তোর সাথেই হারিয়ে যাবো। ফুলকে আমার ভালো লাগে, গাছের কোলেই হাসতে।
ছিঁড়তে তাই চাই না ছু্য়ে,নিজের করে রাখতে। একটি এমন দিনের আশায় রোজ আমি বাঁচি। সকাল থেকে রাত পেরোবো,তুই হলেই শুধু রাজি। ঠিক ততোদিন থাকবো মোরা নতুন সূর্য দেখব বলে। যৌবন ছেড়ে হোক না দেখা, যাক না বয়স অস্তাচলে! কথা একসময় কতবার বলছে নীল মৌলীকে আজ আর এগুলো সুর হীন কেমন যেন তালহীন ৷ বিকালে আজও দেখা করেছিল মৌলী আর নীল সেই চেনা জায়গাটাতেই ৷
বাড়ী ফিরে বিছানায় গা এলিয় দিল নীল ৷ মুক্তির আনন্দে আজ ভেসে যাবার কথা ছিলো নীলের ৷ কিন্তু কোথায় যেনো কি একটা খচ্ খচ্ বিধঁছে ৷ দমটা কেমন বন্ধ বন্ধ লাগছে৷ বাড়ীতে কত হইহই হচ্ছে ৷ আজ বাদে কাল নীলের বিয়ে ঈশানীর সাথে ৷ কিন্তু কোনো কিছুইতেই যেনো তাল নেই ৷বেসুরো বা বেতালা ৷ ঈশানীর বাবার অনেক সম্পত্তি , বাবার একমাত্র মেয়ে সে, বিয়েতে নীলকে একটা মার্সিডিজ আর কলকাতার রাজার হাটে একটা ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন ৷ নীলের বাড়ীর সবাই খুশী ৷ নীল নিজেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে ৷ শুধু নীলের বোন আরুশির চোখের দিকে তাকাতে পারছে না ,মনে হয় নীরবে চোখ গুলো ভৎসনা করে নীলকে যেনো বলছে” ছিছিঃ এতো লোভী তুই!” পাশের বাড়ীর মৌলী আরুশীর ছোটবেলার বন্ধু ৷ দাদা আর মৌলীর প্রেমের সব ঘটনার সাক্ষী আর অনঘটক সে৷ দুই বাড়ীতেও সবাই জানতো সম্পর্ক টা ৷ কদিন আগেও নীল ,আরুশী ও মৌলী মন্দারমনি থেকে ঘুরে এসেছে ৷ আজ যখন নীল বিকেল বেলায় মৌলীর সাথে দেখা করে মৌলাকে বললো সব ভুলে যেতে,ওগুলো নাকি ছেলেবেলার সব ছেলেমানুষী তখন মৌলীর কাজল দেওয়া চোখগুলো একবার চিক্‌চিক্‌ করে উঠল শুধু তারপর অপলক তাকিয়ে রইল শুধু নীলের দিকে ৷ নীলের খুব অস্বস্তি হচ্ছিল ৷ মৌলীর দৃষ্টি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না ৷ কিছুক্ষণ পর মৌলী অপলক তাকিয়েই বলল “ঠিক আছে ভালো থেকো , ভুলে যাবো ৷ ” বলে চলে গেলো ৷ কিছুক্ষণ পর নীল বাড়ীতে চলে এসেছে ৷ আরুশী জানে মৌলী নীলকে কতটা ভালোবাসে ,আর মৌলী যে দাদার এই অবহেলাটা কিছুতেই মানতে পারবে না সেটা দাদাকে বোঝাতে চেয়েছিল কিন্তু দাদা চোখে তখন বাড়ীর আর সবাইকার মতোই টাকার আর ভবিষ্যৎের নিশ্চয়তার স্বপ্নে বিভোর ৷ পরদিন বাড়ীতে সানাই বাজছে ৷ নীল ধুতি চন্দন ফুলমালায় রেডী ৷ হঠাৎই সবাই যেনো নীলকে এড়িয়ে যাচ্ছে ৷ সবাই তাড়াহুড়ো করে বরযাত্রী নিয়ে নীলকে পাঠিয়ে দিল বিয়ে করতে ৷ বিয়ে শেষে মাঝরাতে যখন বাসর ঘরে সবাই মুশগুল তখন আরুশী থাকতে না পেরে চুপি চুপি নীলকে খবরটা দিলো মৌলী ঘুমের বড়ি সঙ্গী করে চিরঘুমে চলে গেছে ৷ মাইকে বাজছে দূরে হাম বেওবফা হার্গিস না থে –_-_- নীল চিৎকার করে কেঁদে উঠলো ৷
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।