• Uncategorized
  • 0

|| আজ ভারতীয় কয়লাখনি শ্রমিক দিবস || লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

আজ ভারতীয় কয়লাখনি শ্রমিক দিবস

খনির কথা মনে করি। রক্তকরবী মনে এসে যায়। যক্ষপুরীতে সারাদিন ধরে সুড়ঙ্গ থেকে সোনার আকরিক তুলে আনার কাজ। কয়লাকেও সোনা বলত। পেট্রোলিয়ামকেও। কালো সোনা আর তরল সোনা।
আজ ভারতে কয়লাখনি শ্রমিক দিবস। কয়লা ভারতের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। ছোটনাগপুর মালভূমিতে পরিমাণে আর গুণমানে সবচেয়ে ভাল কয়লা পাওয়া যায়। তারমধ‍্যে রাণীগঞ্জ আর ঝরিয়ার কয়লা বেশি ভাল শুনেছি।
কয়লা ধুলেও যায় না ময়লা। কয়লার আসল জিনিস কার্বন। বহু বছর আগে গাছপালা উদ্ভিজ্জ পদার্থ মাটির নিচে চাপা পড়ে কয়লা তৈরি হয়েছে।
কয়লা নানা রকম। কার্বনের হার আর তাপ দেবার ক্ষমতা দিয়ে কয়লার শ্রেণীবিভাগ। সর্বোৎকৃষ্ট কয়লা হল অ্যানথ্রাসাইট। সে কয়লা আমাদের দেশে নগণ‍্য পরিমাণে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়লা হল বিটুমিনাস। লিগনাইট তার নিচে। সবচেয়ে নিচু মানের কয়লা হল পিট। এতে অপদ্রব‍্যের ভাগ অনেক বেশি।
কয়লা থেকে কঠিন জ্বালানি যেমন মেলে, তেমনি মেলে নানাবিধ উপজাত দ্রব‍্য। মিষ্টির বিকল্প স‍্যাকারিন, কীটবিতাড়ক ন‍্যাপথালিন, রাস্তা বানানোর বিটুমেন, জীবাণুনাশক বেঞ্জিন সহ নানাবিধ রাসায়নিক আহরণ করা যায় কয়লা থেকে।
কয়লা নিয়ে ইংরেজি ভাষার প্রবাদ পড়েছি। ক‍্যারিয়িং কোল টু নিউক‍্যাসল। ওর মানে হল নেই কাজ তো খ‌ই ভাজ। সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করা। তবে যে দেশে যথেষ্ট কয়লা পাওয়া যায়, তারাও কয়লা আমদানি করতে পারে। যেমন আমার দেশ অষ্ট্রেলিয়া থেকে উঁচু মানের অ্যানথ্রাসাইট কয়লা আনায়। ওটা ইস্পাত কারখানার চুল্লিতে কাজে লাগে।
কয়লা থেকে কোলগ‍্যাস মেলে। সে গ‍্যাস খুবই দাহ‍্য। খনিগহ্বরে আলো লাগে। বৈদ্যুতিক নিরাপদ বাতি আসার আগের যুগে ওই দাহ‍্যগ‍্যাস থেকে অগ্নিদুর্বিপাক ঘটত। খনিশ্রমিকেরা ওই ঘটনায় বহুবার মরেছেন। ১৮১৫ সালে স‍্যার হামফ্রি ডেভি (১৭ ডিসেম্বর, ১৭৭৮ – ২৯ মে, ১৮২৯) সেফটি ল‍্যাম্প আবিষ্কার করলে সে বিপত্তি কমানো গেল।
কয়লাখনি শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলব, আর চাসনালা খনি দুর্ঘটনার কথা বলব না, সে তো হতে পারে না। কয়লা তুলে আনার পর খনিগহ্বরে বালি ভরে দেবার নিয়ম। কিন্তু মালিকের মুনাফার স্বার্থে সেই বাজে খরচ এড়ানো চলত। খনিগহ্বরে বালির বদলে ভরা হত স্রেফ জল। কল‍্যাণকামী রাষ্ট্রের মুখোশ এঁটে সরকারি কর্তৃপক্ষ অন‍্য দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকত। ১৯৭৫ সালে সাতাশে ডিসেম্বর ধানবাদের কাছে চাসনালা খনিতে ঘটল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। খনি থেকে পাথুরে কয়লা কাটতে বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়। ওই বিস্ফোরণের আঘাতে পাশের ফাঁকা খনি থেকে জল এসে খনিগহ্বর ভরে যায়। তিনশো পঁচাত্তর জন শ্রমিক অন্ধকার খনিগহ্বরে জলবন্দি অবস্থায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা পড়েন।
ওই ঘটনা নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন নন্দদুলাল আচার্য। বিখ‍্যাত গায়ক অজিত পাণ্ডে আচার্য মহাশয়ের সেই কবিতাকে মাজাঘসা করে জনপ্রিয় গানের রূপ দিয়েছেন। চাসনালা খনির ধারে মরদ আমার হারাই গেছে গ। প্রাণ তোলপাড় করে চোখে জল এনে দেওয়া গান সেটি। আর মুনাফাসর্বস্ব পুঁজিবাদী ব‍্যবস্থায় গরিব মানুষের জন‍্য শিল্পপতি, বড় ব‍্যবসায়ী আর রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কতটা সচেতন থাকে, তা ফুটে উঠেছে চাসনালা কাণ্ডে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।