|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় মৃদুল শ্রীমানী
by
·
Published
· Updated
মৃত্যু
লোকটিকে দেখে মায়া হল। বললাম, কী হয়েছে। শুষ্কমুখে বলল, কিছু হয় নি। আমি চেপে ধরতে বলল, আজ আমার দিদি মারা গেল। আর্দ্র হয়ে বললাম, কী হয়েছিল তোমার দিদির?
বলল, অনেক দিন ধরে ভুগছিল। লিভার ক্যানসার।
ছেলে পিলে আছে দিদির?
সব বড় হয়ে গেছে। নিজের নিজের সংসার হয়ে গেছে।
বললাম, তা গরিবের ঘরে বেশি দিন রোগনাড়া হলে ধিক্কার এসে যায়। চলে গেছে, এ এক রকম ভাল।
লোকটা খানিকটা থেমে বলল, আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা ছিল। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে বউ দিয়েছিল। সব দিয়ে এলাম। আর আমার কাছে গাড়িভাড়াটুকু ছাড়া কিছু নেই।
সবটাই দিতে হল? দিদির ছেলেরা হাত পেতে নিল?
সে বলল, এদেশে মরেও শান্তি নেই জানেন! ওর গলায় ক্ষোভের সুর।
আমি বললাম, কি রকম?
ধরুন, যেই কেউ মারা গেল, অমনি পাড়ার লোকে ম্যাটাডোর ঠিক করে ফেলে তাতে উঠে পড়ল।
ম্যাটাডোর কেন?
বডি শ্মশানে নিয়ে যেতে হবে না?
অ।
তা ওরাই সব জায়গা দখল করে নিল। আমাদের ওঠার জায়গা নেই। আমরা গেলাম হেঁটে হেঁটে।
অ।
তারপর অতগুলো লোককে শ্মশানে খাওয়াতে হল। চারটে লুচি, তরকারি, একটা করে মিষ্টি। ওরা নিজেরাই সব অর্ডার দিয়ে দিল। এই হল শ্মশানবন্ধু।
অ।
তারপর শ্রাদ্ধশান্তির দিন শ্মশানবন্ধুদের অবশ্যই বলতে হবে।
নইলে?
নইলে নিন্দে হবে।
অ।
এদেশে মানুষ মরলেও বড় জ্বালা। বুঝেছেন তো?
তাইতো।
আপনি কিছু মুখে দিয়েছেন?
ন্নাঃ।
কেন?
দিদি শেষের দিকে কিছু খেতে পারত না। মুসুম্বির রসটুকুও কশ বেয়ে পড়ে যেত। ওই মুখ মনে পড়লে আর খাওয়া যায়?
আমি শক্ত হয়ে অন্য দিকে ফিরে চোখের জল লুকোলাম।